নূর মোহাম্মদ: [২] বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ওই মামলার আসামি দুর্জয় আচার্যকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
[৩] অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গত বছর ২৩ এপ্রিল পুলিশ বাদী হয়ে হালিশহর থানায় হত্যা মামলা করে। এরপর ২৫ এপ্রিল জীবন চক্রবর্তী ও দুর্জয় আচার্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে জীবন চক্রবর্তী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গাঁজা খাওয়ার ঘটনা কেন্দ্র করে দিলীপ রায়কে হত্যা করেছে বলে জবানবন্দিতে জানান জীবন চক্রবর্তী।
[৪] কিন্তু এর কিছুদিন পরে দিলীপ রায়কে জীবিত অবস্থায় আদালতের সামনে হাজির করা হয়। পরে দুর্জয় চক্রবর্তী হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট ফেরত আসা দিলীপ, নথিসহ তদন্ত কর্মকর্তা ও দুই আসামিকে হাজিরের নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুসারে তারা বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হয়।
[৫] বুুধবার শুনানিতে আদালত ফিরে আসা দিলীপকে জিজ্ঞাসা করেন আপনি কোথায় ছিলেন? জবাবে দিলীপ বলেন, আমার স্ত্রীর সাথে আমার সর্ম্পক ছিন্ন হয়। এ কারণে মামলার ভয়ে কিছুদিন বোনের বাড়িতে ছিলাম। আসামিদের বিষয়ে জানতে চাইলে দিলীপ বলেন, আমি তাদের চিনি। দুইজন আমার সঙ্গে চট্টগ্রাম স্টিল মিলে একটি রডের কারখানায় চাকুরি করে।
[৬] আদালত আসামি দুর্জয় আচার্যের কাছে জানতে চান তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলার কারন কি? জবাবে দুর্জয় বলেন, আমি জানি না। আমি দুপুরে বাসার বাইরে খেলছিলাম। পুলিশ আমাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। চারদিন আটকে রেখে আমাকে নির্যাতন করে। ক্রসফায়ার দেওয়ার কথা বলে আমাকে জবানবন্দি দিতে বলে। কিন্তু আমি জবানবন্দি দিইনি।
[৭] আসামি জীবন চক্রবর্তী আদালতকে বলেন, সাপ্তাহিক বন্ধের দিন বাসায় ছিলাম। দুপুর বেলা পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। হালিশহর পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আমাকে বলে তোর নামে হত্যা মামলা আছে। চারদিন ধরে আমাকে তদন্ত কর্মকর্তা সাইফুদ্দীন মারধর করেন। এক পর্যায়ে একটি পাথর ও ফুলের টব নিয়ে এসে বলে তুই আদালতে গিয়ে বলবি এ পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে দিলীপকে হত্যা করেছিস। আমি পুলিশের মারধরের ভয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছি।
[৮] মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা সাইফুদ্দীনকে ডাকেন আদালত। সাইফুদ্দীন আাদলতকে বলেন, হালিশহর এলাকায় অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়। লাশটির পুরো শরীর আগুনে ভষ্মিভূত করা হয়। লাশটি এতবেশি পুড়েছে যে, কেউ সনাক্ত করতে পারেনি। এছাড়া কোন ব্যক্তি নিখোঁজ তাও জানাযায়নি। এক পর্যায়ে দিলীপ নামের এক ব্যক্তির নিখোঁজের খবর পাওয়া যায়। তার সঙ্গে কাজ করা জীবন চক্রবর্তী ও দুর্জয় আচার্যকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা দিলীপকে হত্যার কথা স্বীকার করে।
[৯] এ সময় আদালত বলেন, আপনারা তদন্ত করলেন কিন্তু দিলীপ তো ফিরে আসলো। তাহলে নিহত ব্যক্তিটি কে? এখন ১৬৪ জবানবন্দীর কী হবে? এ সময় মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম আদালতকে বলেন, মামলাটি তদন্তের স্বার্থে দিলীপ সর্ম্পকে জানার জন্য তার পরিবারকে খুঁজতে থাকি। পরে তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীর মাধ্যমে জানতে পারি দিলীপ বোনের বাড়ি খাগড়াছড়ি গহীরা এলাকায়। পরে বোনের মাধ্যমে খাগড়াছড়ির পুলিশের সহযোগীতায় দিলীপকে জীবিত অবস্থায় পায় এবং আদালতে হাজির করি।