রাশিদ রিয়াজ : গত সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বছর শেষ হওয়ার পর বাজেট ঘাটতির পরিমাণ শতকরা ২১৮ ভাগ বেড়েছে। মার্কিন সরকরি হিসাব বলছে আগের অর্থবছরে যে পরিমাণ বাজেট ঘাটতি হয়েছিল এবারের সে ঘাটতি তার দ্বিগুণেরও বেশি। আগের অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি ছিল ৯৮৪ বিলিয়ন ডলার। মারকেট ওয়াচ
মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঋণ এখন ২৭ ট্রিলিয়ন ডলার। দেশটির মোট জাতীয় সম্পদের অর্থমূল্য ২০ ট্রিলিয়ন ডলার। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন নুচেন দাবি করেন, করোনা ভাইরাসের মহামারী মোকাবেলা করতে গিয়ে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, শ্রমিক, সাধারণ পরিবার, ব্যবসায়ী এবং অর্থনীতিকে চালু রাখার বিষয়ে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এজন্য এই ঋণ বেড়েছে। ১৯৩০ সালের মহামন্দার পর এবার মার্কিন কংগ্রেসে মন্দা মোকাবেলায় চারটি আইন পাশ করতে হয়। মার্কিন অর্থনীতির আকারের তুলনায় এ ঘাটতি জিডিপির ১৫.২ শতাংশ যা ১৯৪৫ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ।
করোনাভাইরাসের পর চার চারটি আর্থিক সহায়তা বিল দেয়া ছাড়াও ট্রাম্প প্রশাসনকে ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের কেয়ার এ্যাক্ট পাশ করতে হয়েছে। এতে মোট ব্যয়ের পরিমাম দাঁড়িয়েছে ২.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের সময় মার্কিন সরকারকে এধরনের বিশাল ব্যয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। সর্বশেষ অর্থবছরে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৬.৫৫ ট্রিলিয়ন ডলার যার বিপরীতে পাওয়া গেছে ৩.৪২ ট্রিলিয়ন ডলার। এবছর করোনাভাইরাসের কারণে রাজস্ব আদায়ে ব্যাপক ঘাটতি বেড়েছে। ব্যক্তিগত কর, বড় ধরনের করের উৎস থেকে অর্থ আগায় গত বছর হ্রাস পেয়েছিল ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। এবার তা ইতিমধ্যে ১.৬ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। করপোরেট ট্যাক্স গত বছর ২৩০ বিলিয়ন ডলার, এবছর কমেছে ২১২ বিলিয়ন ডলার। তবে পে রোল ট্যাক্স গত বছর ১.২ ট্রিলিয়ন আদায় হলেও এবার তা বেড়েছে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার।
বিশেষজ্ঞরা বলছে মার্কিন সরকারকে টেকসই ঘাটতি পরিকল্পনায় আগাতে হবে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে যে ভর্তুকি ও সহায়তা দেয়া আরম্ভ হয়েছে তা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কর বৃদ্ধি বা সাশ্রয়ী নীতি গ্রহণ করা খুবই কঠিন। আগামী কয়েক দশক পর্যন্ত এ আর্থিক ঘাটতি বজায় থাকবে। ২০২৭ সাল পর্যন্ত সর্বনিম্ন ঘাটতির ছায়া যদি মার্কিন অর্থনীতিতে ভর করে থাকে তাহলেও তার পরিমান হবে ১.০৮০ ট্রিলিয়ন ডলার। ফেড চেয়ারম্যান জেরোমি পাওয়েল ও শীর্ষ মার্কিন অর্থনীতিবিদরা কংগ্রেসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটরদের আরো আর্থিক সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে তাদের মতপার্থক্য কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলছেন চলতি অর্থবছর শেষ হবে ২১ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণ নিয়ে। এর মানে আর্থিক আয়ের চেয়ে মার্কিন মুল্লুকে ঋণের পরিমান বেশি। মার্কিন ঋণের এই জ্যোতির্বিদ্যার স্তরটি কেবল সম্প্রসারিত হচ্ছে। রেসপন্সিবল ফেডারেল বাজেট কমিটির প্রেসিডেন্ট মায়া ম্যাকগিনেস তাই বলছেন প্রেসিডেন্ট পদে দুজন প্রার্থীকেই বিশাল ঋণের বিপরীতে সামাজিক সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে অধিক বরাদ্দের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। অর্থনীতিতে এ গর্তে যতই খনন করা হোক তা আরো কঠিন ও গলদঘর্ম কাজে পরিণত হচ্ছে।
এধরনের বড় আকারের ঘাটতি সত্ত্বেও ১০ বছর মেয়াদী ট্রেজারি নোট গত চারমাসে শূন্য দশমিক ৫০ থেকে শূন্য দশমকি ৮০ শতাংশে লেনদেন হচ্ছে। এধরনের স্বল্প সুদের হার মার্কিন সরকারের ঋণ গ্রহণের ব্যয়কে ধরে রাখতে সাহায্য করছে।
আপনার মতামত লিখুন :