রাশিদুল ইসলাম : [২] সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল হলেও পঁচিশ কিলোমিটার দূরে মাতারবাড়িতে বন্দর ঠিকই হচ্ছে। সেটা অর্থায়ন করবে জাপান। ভারতীয় সাংবাদিক সুধা রমাচন্দ্রন দ্যা ডিপ্লোম্যাটে প্রকাশিত নিবন্ধে বলেছেন, এটি ছিল বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের এমন একটা হাইপ্রোফাইল প্রকল্প, যা ভারত মহাসাগরে চীনের অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত উচ্চাভিলাষকে ত্বরান্বিত করত।
[৩] সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হলে তা ওই অঞ্চলের জীববৈচিত্র বিপন্ন করত, সাংবাদিকদের কাছে এই মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কেবিনেট সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এই সম্ভাবনাও রয়েছে যে, বিষয়টির নেপথ্যে আছে ভূ-রাজনৈতিক কার্যকরণ। সেটিই ওই প্রকল্প বাতিলের ভাগ্য নিশ্চিত করে দিয়েছে ।
[৪] সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে ভারত এবং চীনের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। তারা উভয়ে বাংলাদেশের উপর প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছিল । আগস্ট মাসের শেষে একটি মন্ত্রিসভা বৈঠকে শেখ হাসিনা সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে সোনাদিয়া ডিপ সি পোর্ট অথরিটি অ্যাক্ট, ২০১২ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয় প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে।
[৫] চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দরের বিদ্যমান সমুদ্র বন্দর জাহাজ জট লেগেই আছে। এমনকি বন্দর দুটি তার সংলগ্ন সাগরের নাব্যতা হারিয়েছে। এসব বন্দর সেকারণে এখন খুব বেশি ভারী ওজনের মাল বোঝাই জাহাজ নোঙ্গর করতে পারে না । বাংলাদেশ অভিমুখী কার্গোগুলোকে এখন শ্রীলঙ্কা ও সিঙ্গাপুরে মালামাল খালাস করতে হয় এবং সেখান থেকে ছোট জাহাজে করে নিয়ে আসা হয়। এর ফলে মালামাল পরিবহনে বিলম্ব এবং বাণিজ্য ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে ।
[৬] সোনাদিয়া সমুদ্র বন্দর নির্মাণের সঙ্গে আরও পরিকল্পনা ছিল চীনের ইউনান প্রদেশ, উত্তর-পূর্ব ভারত, নেপাল এবং ভুটানের মত ভূবেষ্টিত অঞ্চলগুলোর জন্য এটি একটি আঞ্চলিক ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে ব্যবহৃত হবে। নয়াদিল্লি অব্যাহতভাবে সোনাদিয়া প্রকল্পে চীনের সম্পৃক্ততার বিরোধিতা করেছিল। কারণ তারা দেখেছে, ওই সমুদ্র বন্দরটি বঙ্গোপসাগর এবং ভৌগোলিকভাবে ভারতের নিকটবর্তী।
[৭] ভারতের আশঙ্কাও রয়েছে যে, শ্রীলংকার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। চীন হয়তো ঋণ পরিশোধ করতে না পারার কারণে অদূর ভবিষ্যতে তার এই ধরনের স্ট্র্যাটেজিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা কৌশলগত অবকাঠামো চীনের কাছে হস্তান্তর করার জন্য চাপ দিতে পারে । এ ধরনের সম্ভাব্য দৃশ্যপটে নয়াদিল্লি ভীত হল এবং ভাবল, ভারতীয় নিরাপত্তা বলয়ে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
[৮] বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত তার অবকাঠামো উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণে সর্তকতা অবলম্বন করে চলছে । এ ধরনের প্রকল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে সে কোনো একটি দেশের উপর নির্ভরশীল না থেকে অনেকগুলো দেশের কাছ থেকে কারিগরি সহায়তা ও আর্থিক সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ যদিও চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের একজন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার । একই সঙ্গে আবার চীনের প্রতি উদ্বিগ্ন কিছু দেশের সঙ্গেও তার রয়েছে অংশীদারিত্ব । এর মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান , ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া। এরা সবাই বেইজিংয়ের প্রভাব সীমিত দেখতে আগ্রহী।
[৯] বাংলাদেশে এখন মাতারবাড়িতে যে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে তাতে জাপানি সহায়তা রয়েছে। সোনাদিয়ার মতোই মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দরটিও অবশ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত এবং সেটা ভারতের নিকটবর্তী । তবে ভারত-জাপান শক্তিশালী সম্পর্কের আলোকে ভারত এক্ষেত্রে আপত্তি নাও তুলতে পারে । এই প্রকল্পের কাজ অবশ্য ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে প্রথম গভীর গভীর সমুদ্র বন্দরটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে।