সুজন কৈরী : চলতি বছরের গত তিন মাসে ছোট-বড় ৯৫টি নৌ দুর্ঘটনায় ১৪৯ জনের মৃত্যু ও ২৬ জন আহত হয়েছেন। মৃতদের মধ্যে ২২ জন নারী ও শিশু ৪৪। এসব দুর্ঘটনায় নিখোঁজ হয়েছেন আরও অন্তত ৫৮ জন।বেসরকারি সংগঠন গ্রিন ক্লাব অব বাংলাদেশ (জিসিবি) এবং নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির যৌথ জরিপে এ পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে।
শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ নৌপথে লঞ্চ দুর্ঘটনা কমলেও বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা থেমে নেই। যাত্রীবাহী ট্রলার বা ছোট নৌযানসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাহী নৌযান দুর্ঘটনা সারা বছরই ঘটছে। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিভিন্ন নৌপথে এসব প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২৪টি জাতীয় ও ১০টি আঞ্চলিক দৈনিক এবং ৯টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে।
এর মধ্যে আগস্টে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ মাসে ৪৮টি দুর্ঘটনায় ৮৬ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা যথাক্রমে ১০ ও ৩১। এছাড়া ছয়জন আহত ও ২৩ জন নিখোঁজ হয়েছেন। ৫ আগস্ট নেত্রকোনার মদন উপজেলার উচিতপুর হাওরাঞ্চলে যাত্রীবোঝাই ট্রলার ডুবে মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অন্তত ১৮ জন নিহত হন।
গত জুলাইয়ে ৩৭টি দুর্ঘটনায় ছয় নারী ও পাঁচ শিশুসহ ৪১ জন নিহত এবং ১০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া নিখোঁজ হয়েছেন ১৭ জন। সেপ্টেম্বরে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১০টি। এতে ছয় নারী ও আট শিশুসহ ২২ জন নিহত এবং ১০ জন আহত হয়েছে। এছাড়া নিখোঁজ হয়েছেন ১৮ জন।জিসিবির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, লঞ্চ দুর্ঘটনা সহনীয় মাত্রায় নেমে এলেও বছরজুড়ে সারাদেশে বিচ্ছিন্নভাবে যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌ দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে লঞ্চের মতো একসঙ্গে অনেক যাত্রী মারা না গেলেও প্রায় প্রতিটি ঘটনায়ই এক বা একাধিক প্রাণহানি ঘটছে।
আশীষ কুমার দে আরও বলেন, নৌ চলাচল ব্যবস্থার ওপর সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর প্রয়োজনীয় নজরদারির অভাব, কঠোর তদারকির ক্ষেত্রে ওইসব সংস্থার জনবল সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতা, বিপুল সংখ্যক অবৈধ নৌযান চলাচল, দক্ষ মাস্টার ও চালক স্বল্পতা, দুর্বল আইন ও বিধিমালা এবং বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি না হওয়ায় নৌ দুর্ঘটনা সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনা যাচ্ছে না।
জাতীয় কমিটির সভাপতি হাজী মো. শহীদ মিয়া বলেন, নৌ সেক্টরের উন্নয়নের ব্যাপারে বর্তমান সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী, নৌ প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক নৌমন্ত্রী যথেষ্ট আন্তরিক হলেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ড অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ। যেমন- নৌ পরিবহন অধিদফতরে পরীক্ষায় নানা অনিয়মের কারণে দক্ষ চালক (মাস্টার ও ড্রাইভার) তৈরি হচ্ছে না। নৌযানের ফিটনেস পরীক্ষা ও বে-ক্রসিংয়ের অনুমতি প্রদানও সঠিকভাবে হচ্ছে না। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএর নৌযানের রুট পারমিট ও টাইমটেবিল দেয়ার ক্ষেত্রে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে নৌ নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না।