শিরোনাম
◈ পিআর পদ্ধতি কী, কেন প্রয়োজন ও কোন দেশে এই পদ্ধতি চালু আছে?" ◈ ইসরায়েলি হামলায় ৪৩৭ ফুটবলারসহ ৭৮৫ ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদের মৃত্যু ◈ পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলিদের সাথে তাদেরই সেনা জড়ালো সংঘর্ষে! (ভিডিও) ◈ আমদানি-রপ্তানিতে এনবিআরের নতুন নিয়ম: বাধ্যতামূলক অনলাইন সিএলপি দাখিল ◈ জুলাই স্মরণে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন (ভিডিও) ◈ জুলাই বিদ্রোহ: কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান ◈ ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা বললেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ◈ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেলেন ১৬৯০ জন ◈ ১৮ জুলাই নতুন দিবস ঘোষণা ◈ ডিসি-এসপি কমিটি ও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা জারি করলো ইসি

প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০১:৩৮ রাত
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০১:৩৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মোনায়েম সরকার: শেখ হাসিনার উক্তি – সামরিকতন্ত্র নয়, গণতন্ত্রেই মুক্তি’

মোনায়েম সরকার: একের পর এক ইতিহাস সৃষ্টি করে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে চলছেন, বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। এক সময় মাননীয় শেখ হাসিনাকে ‘জননেত্রী’ বলা হতো, আজকাল এ বিশেষ ‘গণ-উপাধি’ তার নামের সঙ্গে খুব একটা যুক্ত হতে দেখি না। ‘জননেত্রী’ শব্দটি শেখ হাসিনার নামের সঙ্গে যে কেমন অভাবনীয় গৌরবে মিশেছে তা ভাবতে গেলে বিস্মিত হতে হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করে ১৯৯৬ সালে। শাসনভার গ্রহণ করেই তিনি পিতার অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করার লৌহ-কঠিন শপথ গ্রহণ করেন। বঙ্গ-ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের পরমস্বপ্ন ছিলো ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা। বঙ্গবন্ধুর সেই ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ কেবল জনসেবার মাধ্যমেই পূর্ণতা দেওয়া সম্ভব। ‘জননেত্রী’ না হলে ‘জনসেবা’র মানসিকতা সৃষ্টি হয় না।

দলীয় ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ করার পর থেকেই জননেত্রী শেখ হাসিনা নিভৃত বাংলার প্রতিটি জনগণের কাছেই কোনো না কোনো সেবা পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সেবার পাশাপাশি জনমনে তিনি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন সৃষ্টি করে, জাতির ভালোবাসায় ধন্য হয়েছেন। ৭ নভেম্বর ২০২০ তিনি এক সাহসী উক্তি ‘উচ্চারণ’ করেছেন আর্মড ফোর্সেস সিলেকশন বোর্ড মিটিংয়ে। সামরিক বাহিনীর অভিধান থেকে ‘মার্শাল ল’ মুছে দেওয়ার যে সুদৃঢ় অঙ্গীকার তিনি ঘোষণা করেছেন, তা শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, সমগ্র পৃথিবীর জন্যই এক ঐতিহাসিক ঘোষণা বলে আমার কাছে মনে হয়। সামরিক শাসন যুগে যুগে মানুষ বহুবার দেখেছে। আমরা যদি শুধু বিংশ শতাব্দীর রাজনৈতিক ইতিহাস দেখি তাহলে দেখব এই এক শতকে সত্তরটি দেশে সামরিক শাসন জারি ছিলো। সামরিক শাসন পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের একটি অন্যতম শর্ত। তাই দেখা যায় পৃথিবীর যেখানেই সামরিক শাসন চালু হয়েছে। সেখানেই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো মদদ দিয়েছে সামরিক শাসন বলবৎ করার জন্য।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যেহেতু দুই দুটি সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করার বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে, তাই তিনি সামরিক শাসনের অন্ধকার দিকগুলো খুব ভালো করেই চেনেন। সামরিক শাসন নানাভাবে এসে সিংহাসন দখল করে বসে। একবার সিংহাসন দখল করে ফেললে সহজে আর তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব হয় না। দাঙ্গা দমন, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দূরীকরণ, ক্ষমতাসীন সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতা ইত্যাদি অজুহাতে কোনো দেশে সামরিক শাসন জারি করা হয়। একটি দেশে যখন সামরিক শাসন চালু হয়, তখন সংবিধান অবরুদ্ধ থাকে। নাগরিক অধিকার চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়। জনগণের কাছে সামরিক শাসকের কোনো জবাবদিহিতা থাকে না বলে সামরিক শাসক এক পর্যায়ে স্বৈরাচারে পরিণত হয়। সামরিক শাসক ছিলেন কিন্তু স্বৈরাচার ছিলেন না। পৃথিবীতে এমন নজির বিরল। অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনেই, কানাডা, মিশর, ইরান, আয়ারল্যান্ড, ফিলিপাইনস, পোল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তানসহ পৃথিবীর অসংখ্য দেশের সামরিক দুঃশাসনের ইতিহাস পড়লেই একথার সত্যতা প্রমাণিত হয়।
বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা নিশ্চয়ই বর্তমান বিশ্বের আগ্রাসী রূপ উপলব্ধি করছেন। আধুনিক বিশ্বে মানুষকে যখন আরও বেশি মানবিক হওয়ার কথা ছিলো। তখন মানুষ মেতে উঠেছে সামরিক শক্তি প্রদর্শনের বিকৃত প্রতিযোগিতায়। আজ বিশ্বের বিত্তশালী দেশগুলো সামরিক শক্তিকে যেভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দান করছে। এর ফলে জনগণের অর্জিত অর্থের সিংহভাগই সামরিক বাহিনীর ভরণপোষণে ব্যয় হচ্ছে। আবার এই সামরিক বাহিনীই নিজেদের লাগামহীন স্বার্থপরতা চরিতার্থ করতে বন্দুকের নল ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করছে।

এর ফলে একটি দেশ রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর কোনো দেশের সামরিক শাসক সেদেশের সম্পদ ও সম্মান বৃদ্ধিতে বিন্দু পরিমাণ ভূমিকা রাখতে পারেনি। বরং তারা রাষ্ট্রীয় অর্জনকে ধূলিসাৎ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সামরিক শাসকদের আবির্ভাব যেমন বিভীষিকা সৃষ্টি করে, তাদের রক্তাক্ত প্রস্থানও ইতিহাসের বুকে সৃষ্টি করে দুষ্ট ক্ষত। এসব কিছু বিবেচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘মার্শাল ল’ মুছে ফেলার যে কথা ব্যক্ত করেছেন। আমি মনে করি তাতে বিশ্বনেতৃবৃন্দের সমর্থন দেওয়া উচিত এবং মার্শাল ল’এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিশ্ববাসীর সোচ্চার হওয়া উচিত।

আমার সোনালি যৌবনের উত্তাল দিনগুলো বামপ্রগতিশীল রাজনৈতিক ধারায় অতিবাহিত হয়েছে। মানবিক পৃথিবী গড়ার রঙিন স্বপ্ন নিয়ে একদিন আমি রাজনীতিতে নিজেকে সমর্পিত করেছিলাম। আমি তখন বিশ্বাস করতাম সমাজতন্ত্রেই মানুষের সার্বিক মুক্তি নিহিত। আমি এখনো বিশ্বাস করি ‘সমাজতন্ত্রই’ মানুষের জীবনকে সুন্দর ও নিরাপদ করতে পারে। কিন্তু যতোক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ববাসী মনেপ্রাণে সমাজতন্ত্রকে গ্রহণ না করছে ততোদিন গণতন্ত্রের বিকল্প নেই। আধুনিক পৃথিবীতে গণতন্ত্রই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় শাসন পদ্ধতি। গণতান্ত্রিক ধারায় বর্তমান বিশ্বে যেসব দেশ এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের আইনসম্মতভাবে মোকাবিলা করে, বিরোধী দলের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকার যেভাবে উজান ঠেলে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে এদেশের মানুষের মনে নতুন আশা জাগ্রত হয়েছে।

দেশি-বিদেশি শত্রুরা তাকে হত্যা করার জন্য অসংখ্যবার ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে, প্রতিবারই তিনি মৃত্যুকে পরাজিত করে বীরের বেশে ফিরে এসেছেন। যতোই দিন যাচ্ছে ততোই তিনি চমক সৃষ্টি করে শুধু বাংলাদেশের জনগণকেই নয়, বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়েছেন। পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশকে একাই টেনে তুলেছেন তিনি। সেই সঙ্গে এশিয়া মহাদেশে তো বটেই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তিনি বিভিন্ন ইস্যুতে ভূমিকা রাখছেন। ইতোমধ্যে তার জলবায়ু বিষয়ক প্রস্তাবসমূহ বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্কট-সমাধান, করোনাভাইরাস জনিত মহামারী ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যা মোকাবিলাসহ প্রবৃদ্ধি ঊধ্বমূখী করার যে দৃঢ়তা তিনি দেখিয়েছেন তা অতুলনীয়। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে শেখ হাসিনার জন্মদিন এবার ভিন্নভাবে উদ্যাপনের দাবি রাখে।

করোনাকালীন বদ্ধ জীবনে জানি না তেমন কোনো বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান হবে কিনা। তবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করে তাকে সম্মান জানানো যেতেই পারে। মাননীয় শেখ হাসিনা নিজ কর্মগুণে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার যোগ্যতা অনেক আগেই অর্জন করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি কিংবা রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি যে দুঃসাহসী ভূমিকা রেখেছেন এই দুই কারণেই তিনি মানুষের মণিকোঠায় আসন করে নিয়েছেন। মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জাতির পিতা হত্যার বিচার ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার ও রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার যে মানসিকতা তিনি প্রদর্শন করেছেন তাও অতুলনীয়। একুশে আগস্ট নৃশংস গ্রেনেড হামলার রায় প্রকাশিত হওয়ার পর দেশের সবগুলো দৈনিক পত্রিকাই সম্পাদকীয় কলামে এই ঘৃণ্য হামলার বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করে।

লেখক : রাজনীতিবিদ, কলামিস্ট ও মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ।

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়