শিরোনাম
◈ উগ্রপন্থা, সীমান্ত অচলাবস্থা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা—বাংলাদেশসহ পাঁচ প্রতিবেশীকে ‘হুমকি’ মনে করছে ভারত ◈ আবারও ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল রিজার্ভ ◈ আরব আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান  ◈ অবশেষে কমল সোনার দাম ◈ মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে চার সংগঠনকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ঘোষণা করল যুক্তরাষ্ট্র! ◈ সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের চিঠি ◈ ডাকসুতে ভোট কারচুপির অভিযোগে সিসিটিভি যাচাই, উঠে এলো যে তথ্য ◈ সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালে হামলা-ভাঙচুর ◈ আমি যে কাজ করেছি তা দেশের ইতিহাসে কোনোদিন হয়নি : আসিফ নজরুল ◈ চট্টগ্রামে মার্কিন বিমান ও সেনা উপস্থিতি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা, আসলে কী ঘটছে

প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০৮:২১ সকাল
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০৮:২১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

খান আসাদ: বিকৃতকামী ধর্ষক কি ভাবে জন্ম নেয়?

খান আসাদ: প্রথম শর্ত হচ্ছে, ছেলেশিশুটিকে পুরুষশ্রেষ্ঠত্ব ও পুরুষআধিপত্যের বিশ্বাস দিতে হবে। এই বিশ্বাস দেয়ার নাম সামাজিকায়ন। এই বিশ্বাস দেয় প্রথমে পরিবার, বাবা মা ভাই বোন। এই বিশ্বাসের মুল কথা নারী দুর্বল, হেয়, হীন, ভোগ্যবস্তু, যৌনবস্তু, ঘরে থাকতে হবে, পর্দায় থাকতে হবে, ইত্যাদি। এই বিশ্বাস বা মূল্যবোধের নাম, পিতৃতান্ত্রিক মতাদর্শ। এই মতাদর্শ শিক্ষা পরিবারে, স্কুলে, মাদ্রাসায়, ওয়াজে, এবং প্রধানত ধর্মীয় শিক্ষায়। নারী যৌনবস্ত ও ভোগেরবস্তু, ইহকাল ও পরকালে, এই বিশ্বাস নিয়ে বড় হয়ে না উঠলে সে ধর্ষক হতে পারেনা।
ধর্ষন যদি বন্ধ করতে চান, তাহলে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের শিক্ষা পরিবারে, স্কুলে, সমাজে, সংস্কৃতিতে, গানে, নাটকে, উপন্যাসে, গল্পে, পত্রিকার কলামে, সামাজিক মাধ্যমে দিতে হবে। মানুষ হিসেবে নারী-পুরুষের সমান অধিকার ও মর্যাদার শিক্ষা দিতে হবে। স্কুলেই শরীর, যৌনবিজ্ঞান ও মানবিক ভালোবাসা - এই সব শিক্ষা দিতে হবে। না হলে, ধর্ষক উৎপাদনের সামাজিকায়ন ও শিক্ষা চালু থাকলে, ধর্ষক উৎপাদন হবেই।
দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে, নারী হেয়, হীন, ভোগ্যবস্তু শিক্ষা পাওয়া ছেলেটির "ক্ষমতা" থাকতে হবে, অথবা ক্ষমতা আছে এই বিশ্বাস থাকতে হবে। তার দলে আরও লোক আছে। তার পরিবার প্রভাবশালী। সে স্কুল বা মাদ্রাসার শিক্ষক ফলে, প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা আছে। পেশা বা পদের ক্ষমতায়। তার রাজনৈতিক দল ক্ষমতায়। তার পুলিশের সাথে সম্পর্ক আছে। মানে, সে নারীর প্রতি সহিংসতা করে পার পেয়ে যাবে, এই বিশ্বাস ও ক্ষমতার সম্পর্ক থাকতে হবে।
এখানে, "আইনের শাসনের" একটি ভূমিকা আছে। কিন্তু একটি প্রান্তিক পুঁজিবাদী দেশে যেখানে আইন কেনা যায় ও শ্রেণী প্রভাব খাটানো যায়, সেখানে "আইনের শাসন" সোনার পাথরবাটি। ব্যাংকলুটের দেশে, ঘুষখোর আমলার দেশে, "আইনের শাসন" পাওয়া যায় না। ফলে, ধর্ষক উৎপাদন বন্ধ করতে হলে, পরিবার ও সমাজের সামাজিকায়ন শিক্ষা বদলানো মুল জায়গা। মানুষ নিজেরা ও সংস্কৃতি কর্মীরা সেটা নিজেরা পারে।
তৃতীয় ও শেষ শর্ত, ধর্ষকামী মনোবিকলন। একটি মানসিক বিকৃতি। স্যাডিজম বা ধর্ষকামীতা মানে অন্যকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পাওয়া। জন্ম নেয় নানা কারনে। কিন্তু প্রধানত সামাজিক কারণেই। কি সেগুলো? প্রথমে আত্মসর্বস্ব স্বার্থপরতা, নিজে ধনী হওয়ার ও অন্যে গরিব থাকুক এই ধরনের চিন্তা, সকলের উপর ছড়ি ঘোরানোর ক্ষমতার স্বপ্ন, প্রতিযোগিতা, যৌন অবদমন, নীলছবি, অব্যাহত ইহলৌকিক বা পারলৌকিক যৌনফ্যান্টাসি, এই সব নানা কারণ থেকে ধর্ষকামী মনবিকলন জন্ম নেয়। পুঁজিবাদী সমাজে মানুষকে সহযোগিতার, সহভাগিতার, সহানুভূতির শিক্ষার বদলে যে আত্মসর্বশ্ব ভোগবাদী হতে শিক্ষা দেয়, সেখানেই নিহিত থাকে অন্যকে বঞ্চিত করা, নিপীড়ন করার মানসিক ধর্ষকামিতা।
এই তিনটি শর্ত মিললেই, আপনার ছেলে শিশুটি অথবা ছোট ভাইটি ধর্ষক হবে।
আপনার ছেলেশিশুটিকে মানসিক সুস্থ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হলে, তার ব্যাক্তিত্ব গঠনের দিকে নজর দিতে হবে। তাঁকে আত্মসর্বশ্ব ভোগবাদী, ইহকালে ও পরকালে শুধু ধনী হবে আর নারীভোগ করবে, এই পুঁজিবাদী মৌলবাদী শিক্ষা দেবেন, না কি সমতা, সহযোগিতা, সহভাগিতা, সহানুভূতি ও শান্তির শিক্ষা দেবেন? এই প্রশ্ন সকল বাবা মায়ের প্রতি।
রাষ্ট্রের উচিৎ সুশাসন কায়েম করা। সেই সুশাসনের দাবী করে বসে থাকবেন? নিজের, আত্মীয় পরিজনের, বন্ধুবান্ধবদের ছেলেশিশুগুলো ধর্ষক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন? ধর্ষক হওয়ার পর ক্রসফায়ার চাইবেন? না কি নিজেরাই ছেলেশিশুদের ধর্ষক হওয়া থেকে বাঁচাবেন, শিক্ষা ও সামাজিকায়নে ভূমিকা রেখে, আজকেই? সিদ্ধান্ত আপনার।
বাস্তব কর্মসুচি কি কি হতে পারে, সেটা নিয়ে আলাপ করা যেতে পারে। ফেসবুক থেকে
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়