শিরোনাম
◈ ভোটকেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে ডিসি-ইউএনওদের বাদ দিয়ে কারা থাকবে? ◈ ‘ভারতীয় সফটওয়্যার’ ইরানে হামলার নেপথ্যে, আতঙ্কে মুসলিম বিশ্ব ◈ সারজিস-হাসনাতকে শতবার কল করলেও রিসিভ করেন না: শহীদ জাহিদের মায়ের অভিযোগ ◈ ৭ জেলায় ঝড়ের শঙ্কা, নদীবন্দরে সতর্কতা জারি, ঝড়ের শঙ্কা ◈ ফ্রা‌ন্সের লিও শহ‌রের কসাই থেকে গাজার কসাই: ইতিহাসে বারবার অপরাধীদের বাঁচিয়েছে আমেরিকা ◈ রিজার্ভে বড় সাফল্য: আইএমএফের লক্ষ্য ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ, প্রবাসী আয়ে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি! ◈ আদানির বকেয়ার সব টাকা পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ◈ মাঠে ছড়িয়ে থাকা লেবু ও  ডিম দে‌খে ম্যাচ খেলতে আসা ‌ক্রিকেটাররা ভয়ে পালালেন ◈ ভারতীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরে আপত্তি মোদি সরকারের! ◈ উনি ক্লাসে বাজে ঈঙ্গিতপূর্ণ কথা বলার পাশাপাশি বডি শেমিং করেন

প্রকাশিত : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০২:২১ রাত
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০২:২১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হাসান হাফিজ: প্রয়াণ দিবসে আতাউস সামাদ স্মরণে

হাসান হাফিজ: বরেণ্য,গুণী সাংবাদিক আতাউস সামাদের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী ২৬ সেপ্টেম্বর। তিনি ছিলেন সাংবাদিক সমাজের অভিভাবক, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার অগ্রণী কাণ্ডারী, ধীমান কলামিস্ট, সফল শিক্ষক, একনিষ্ঠ ট্রেড ইউনিয়নিস্ট। রিপোর্টিংয়ে তিনি ছিলেন আদর্শ ও অননুকরণীয় এক ব্যক্তিত্ব। কোনো খবরই একাধিকবার চেকিং, ক্রস চেকিং না করে তিনি রিলিজ করতেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে তার পড়ানোর বিষয়ও ছিলো এই রিপোর্টিং। আমৃত্যু তিনি ছিলেন সরলপ্রাণ সাদামাঠা মানুষ, কিন্তু নীতি আদর্শের প্রশ্নে অত্যন্ত অবিচল, দৃঢ়। সৎ, নির্লোভ ও সাহসী, বিবিসিখ্যাত এই কৃতী সাংবাদিককে স্বৈরাচারী এরশাদ আমলে কারাবরণও করতে হয়।

বর্তমান বাংলাদেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তার ছাত্র-ছাত্রীরা মেধা, দক্ষতা ও সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছেন। উত্তরসুরিদের যোগ্য নেতৃত্ব সেই উজ্জ্বল পরম্পরারই সাক্ষ্য। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবছর আতাউস সামাদ স্মৃতি পরিষদের তরফে কোনো স্মরণসভার আয়োজন করা যায় নি। গতবছর আমরা জাতীয় প্রেস ক্লাবে যে সভা করেছিলাম, তাতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট সমাজচিন্তক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রফেসর ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। গতবারের আতাউস সামাদ স্মরণসভার প্রধান অতিথির বক্তব্য একঝলক স্মরণ করে নিতে চাই এ সুযোগে। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছিলেন, সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে রোহিঙ্গা সমস্যা, এনআরসি সমস্যা আরো বড় আকারে তুলে ধরতে পারতেন। এগুলো দ্বিপাক্ষিক সমস্যা নয়। এসব আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে হবে। সাংবাদিকরা কখনোই নিরপেক্ষ নন। তারা সব সময়ই জনগণের কল্যাণের পক্ষে। আতাউস সামাদের মতো নির্ভীক ও নিবেদিতপ্রাণ প্রত্যয়ী সাংবাদিক এমন দুঃসময়ে সাহস করে সত্য তুলে ধরতেন।
তার জন্ম ১৯৩৭ সালের ১৬ নবেম্বর কিশোরগঞ্জের সতের দরিয়া গ্রামে। ছাত্রজীবন কেটেছে জলপাইগুড়ি, সিলেট, বরিশাল, রাজশাহী এবং ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স এবং ১৯৬০ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের প্রচার-সম্পাদক হিসেবে হল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেন।

সাংবাদিকতা শুরু করেন ১৯৫৬ সালে, সচিত্র সন্ধানীতে। ১৯৫৯ সালে দৈনিক আজাদে সাব এডিটর ছিলেন। ১৯৬১ সালে ওই পত্রিকারই রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬২ সালে যোগ দেন পাকিস্তান অবজার্ভারে। ১৯৬৯ সালে চীফ রিপোর্টার হন। ১৯৭০-৭১ সালে তিনি করাচির দি সান পত্রিকার পূর্ব পাকিস্তান ব্যুরোর চিফ ছিলেন। স্বাধীনতার পর যোগ দেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস)। দিল্লিতে বাসসের বিশেষ প্রতিনিধি (১৯৭২-১৯৭৬) এবং বাংলাদেশ টাইমস-এর বিশেষ প্রতিনিধি (১৯৭৮- ১৯৮২) হিসেবেও দায়িত্ব¡ পালন করেছেন।

দীর্ঘ এক যুগ (১৯৮২-৯৪) তিনি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের বাংলাদেশ সংবাদদাতা ছিলেন। এক সময়ে বিবিসি ও আতাউস সামাদ অভিন্ন সত্তায় পরিণত হয় বাংলাদেশে। সে এক বিরল সম্মাননা ও অর্জন। তিনি দুই মেয়াদে (১৯৭৯-৭০) পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের (ইপিইউজে) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সেই সময়ে ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ শহীদুল্লা কায়সার।

আতাউস সামাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে অধ্যাপনা করেছেন দীর্ঘ ২০ বছর। সাপ্তাহিক ‘এখন’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। ২০০৪ সালে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় উপদেষ্টা-সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। আমৃত্যু সেই পদে বহাল ছিলেন। উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব¡ পালনের পাশাপাশি ২০০৭ সালে তিনি বেসরকারি টিভি চ্যানেল এনটিভি’র সিইও হিসেবেও কিছুকাল দায়িত্ব পালন করেন।

দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনে নিবন্ধ, প্রবন্ধ ও কলাম লিখেছেন প্রচুর। সেসব পত্র-পত্রিকা হলোঃ পাকিস্তানের দৈনিক মুসলিম, কুয়েতের দৈনিক আরব টাইমস্, লন্ডনের সাউথ ম্যাগাজিন ও ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর, বাংলাদেশের সাপ্তাহিক যায় যায় দিন, প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, সমকাল, যুগান্তর ইত্যাদি। তার প্রকাশিত একমাত্র গ্রন্থের নাম ‘একালের বয়ান’। তিনি ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য।

আতাউস সামাদ অনেক ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম রিপোর্টার ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মওলানা ভাসানীর মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে সাংবাদিক হিসেবে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ঢাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের নানা কাজে সহায়তা করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারত থেকে দেশে ফেরার পথে বিমানে বঙ্গবন্ধুর সহযাত্রী ছিলেন। তখন বঙ্গবন্ধুর একটি মূল্যবান সাক্ষাৎকার নেন তিনি।

আতাউস সামাদ বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস নিউজ-এর সংবাদদাতা হিসেবে কাজ শুরু করেন মার্শাল ল’ চলাকালীন ১৯৮২ সালের অক্টোবর থেকে। তার সাহসী বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টসমূহ সামরিক সরকারের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই ছিল অস্বস্তিদায়ক ও বিব্রতকর। এসময় বিবিসি ‘হাসিনা অন্তরীণ: খালেদা আত্মগোপনে: জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের হুঁশিয়ারি’ এবং ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি’ শিরোনামে দু’টি প্রতিবেদন সম্প্রচার করে। নিরাপত্তার খাতিরে তাকে আত্মগোপনে চলে যেতে হয়। আত্মগোপনে থেকেও তিনি নিয়মিত বিবিসিকে আসন্ন গণঅভ্যুর্ত্থান ও সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্যাবলি জোগান দেন। ১৯৮৭ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৯৪-৯৫ সালে নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ নিরসনে দুই নেত্রীকে আলোচনায় বসানোর প্রচেষ্টায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো।

সাংবাদিকতা ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯২ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। ছিলেন বাংলা একাডেমির ফেলো। পেয়েছেন বেগম জেবুন্নেসা ও কাজী মাহবুবউল্লাহ জনকল্যাণ ট্রাস্ট পুরস্কার, ভাষা শহীদ গোল্ড মেডেল, শিল্পী কামরুল হাসান স্মৃতি পদক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোল্ড মেডেল এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মুক্তিযোদ্ধা রিপোর্টার্স পদক। তিনি ইন্তেকাল করেন ঢাকায়, ২০১২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর।

লেখক: কবি,সিনিয়র সাংবাদিক। আহ্বায়ক, আতাউস সামাদ স্মৃতি পরিষদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়