রাশিদুল ইসলাম : [২] এক সাক্ষাৎকারে এমনই মন্তব্য করলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেন, তার দেশে যৌন হিংসা বাড়ছে। তাই সমাজ ব্যবস্থাকে বদলানোর কোনও দরকার নেই, শর্টকাটে চূড়ান্ত শাস্তি দেওয়া উচিত প্রকাশ্যে। টাইমস অব ইন্ডিয়া
[৩] ইমরান খানের এই মন্তব্যে প্রশ্ন উঠেছে, কোনও প্রধানমন্ত্রী কি কোনও অপরাধের ক্ষেত্রে এ ধরনের ফয়সালা দিতে পারেন? কেউ বলেছেন, এমন তালেবানি বিচার পাকিস্তানেই সম্ভব। আইনরক্ষা ও সমাজের নিরাপত্তা বজায় রাখা যেখানে রাষ্ট্রব্যবস্থার চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত, সেখানে খোদ প্রধানমন্ত্রীর প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য প্রশ্ন তুলে দিয়েছে আইনকানুনের সুরক্ষা নিয়ে।
[৪] এ মন্তব্যের উৎস এক নারকীয় ঘটনা। ৯ সেপ্টেম্বর রাতে দুই সন্তানকে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে লাহোর থেকে গুজরানওয়ালা প্রদেশে যাচ্ছিলেন ৩০ বছরের এক তরুণী। হাইওয়েতে হঠাৎ তেল শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি যখন স্বামীকে ফোন করছেন, পুলিশের সাহায্য খুঁজছেন, তখন দুই যুবক এসে সন্তানদের সামনে ওই নারীকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। তার টাকা ও কার্ডও কেড়ে নিয়ে পালায় তারা।
[৫] ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ পাল্টা দোষ দেয় ধর্ষিতা ওই নারীকে, কেন তিনি কোনও পুরুষসঙ্গী ছাড়া একা রাতের রাস্তায় বেরিয়েছেন! এর পরেই পাকিস্তানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পথে নামে নানা মানবাধিকার সংগঠন। হাজার হাজার পোস্টারে ছেয়ে যায় পথ। চাপের মুখে পড়ে বৃহস্পতিবারই ধর্ষণে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
[৬] অভিযুক্ত দু’জনের ছবিও প্রকাশ করে পুলিশ। তাদের ধরিয়ে দিলে ২৫ লাখ পাকিস্তানি মুদ্রা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। এক অভিযুক্ত আত্মসমর্পণ করে বলে জানা গেছে, তবে সে এখনও অপরাধ স্বীকার করেনি। দাবি করেছে, সে এই ঘটনায় জড়িত নয়। তার ডিএনএ টেস্ট করা হবে।
[৭] পাকিস্তান জুড়ে এই বিপুল আন্দোলনকে শান্ত করতেই অপরাধীদের কড়া শাস্তির বার্তা দেওয়া জরুরি ছিল বলে বোঝেন ইমরান খান। তার জেরেই পুরুষাঙ্গ কর্তনের দাবি করে বসেন তিনি। ইমরান ব্যাখ্যা করেন, এই ধরনের ক্যাপিট্যাল পানিশমেন্ট নিয়ে যতবার কথা হয়েছে ততবার দেখা গেছে আন্তর্জাতিক মহল থেকে আপত্তি এসেছে। অপরাধের তীব্রতা অনুযায়ী ‘ডিগ্রি’ নির্ধারণ করে রাসায়নিক ভাবে বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুরুষাঙ্গ বাদ দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন ইমরান। এও বলেন, বহু দেশেই এই শাস্তি প্রচলিত।
[৮] পাশাপশি ইমরান মন্তব্য করেন, দুনিয়ার ইতিহাসের দিকে তাকালে বোঝা যায়, সমাজে যখন উগ্রতা বেড়ে যায়, তখন দুটো জিনিস ঘটে। এক, যৌন হিংসার ঘটনা বাড়তে থাকে এবং দ্বিতীয়ত, পারিবারিক কাঠামো ভেঙে যায়। পাকিস্তানেও তাই হচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি। উদাহরণ দিয়ে বলেন, ইংল্যান্ডের সমাজে উগ্রতা বেড়ে যাওয়ায় ডিভোর্সের রেট বেড়ে গেছে ৭০ শতাংশ।
[৯] পাশ্চাত্যের তুলনায় আমাদের দেশের পারিবারিক ব্যবস্থা অনেক ভাল। আমরা আইন গড়তে পারি, প্রতিষ্ঠান গড়তে পারি। কিন্তু পরিবার ভেঙে গেলে আর গড়তে পারি না। এসব রুখতে সামাজকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি টিভি-তে দেখানো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করেন। ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান দেখলে সামাজিক উগ্রতা কমবে বলেও দাবি করেন।
https://twitter.com/i/status/1305555547849216000