শিরোনাম
◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও) ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী 

প্রকাশিত : ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০৭:৫৭ সকাল
আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০৭:৫৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শিক্ষার্থী পাচ্ছে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো!

ডেস্ক রিপোর্ট : উচ্চশিক্ষা বাণিজ্যিকীকরণের পর থেকেই একের পর এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পাসের হার বৃদ্ধির ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সঙ্কটের কারণে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ঝুঁকতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মানসম্পন্ন শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে সুনাম অর্জন করেছে। অনেক ক্ষেত্রে কিছু কিছু সরকরি বিশ্ববিদ্যালয়কেও ছাড়িয়ে গেছে। তবে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেই সার্টিফিকেট বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

করোনাভাইরাস এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে বড় সড় ধাক্কা দিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি এবং করোনাপরিস্থিতির কারণে আয় কমে যাওয়া, অন্যদিকে চলতি বছরের এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় শিক্ষার্থী সঙ্কটে পড়েছে বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এমনিতেই আর্থিক টানাপোড়েনে থাকা অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার উপক্রমও হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে সবধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি বৃদ্ধি করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এই অবস্থায় গত জুন-জুলাইয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে নর্থ-সাউথ, ইস্ট ওয়েস্ট, ব্র্যাক, আহসান উল্লাহ, ইউনাইটেড, ইন্ডিপেন্ডেন্টসহ প্রথম সারির কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকিরা শিক্ষার্থী সঙ্কটে পড়েছে। আগের সেমিস্টারে যে পরিমাণ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল তার অর্ধেকও এবার পাচ্ছে না তারা। জানা যায়, প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যায়গুলো মোট আসনের মধ্যে গড়ে ৬০-৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পেরেছে। এর মধ্যে ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ও ব্র্যাক আসনের কোটা পূরণ হয়েছে। নর্থ-সাউথ ১৩শ, ইউনাইটেড পেয়েছে সাড়ে ৪শ’র মতো শিক্ষার্থী পেয়েছে। আর মধ্যসারির ৫০ শতাংশও পায়নি। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি পেয়েছে ৫শ’ আর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি পেয়েছে ১৬২ জন শিক্ষার্থী। স্টেট, প্রাইম, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল, ইস্টার্ন, আইইউবিএটি’র মত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী খরায় ভুগছে। এছাড়া নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ১০ থেকে ২০জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পেরেছে। কোন কোনটিতে এখনো শিক্ষার্থীই পায়নি।

নতুন সেমিস্টারে শতাধিক শিক্ষার্থীও হয়নি মধ্যসারির এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। আর নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা আরও খারাপ। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন ফি কমিয়ে, নানা সুযোগ-সুবিধার কথা বলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার জন্য অফার দিচ্ছে। তারপরও শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারছে না নতুন গড়ে উঠা বিশ্ববিদ্যালয়। আর এতে ভবন ভাড়া, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিবোর্ডের সদস্যরা।

ফল ও স্প্রিং দুই সেমিস্টারে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করছে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি (আইএসইউ)। বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে ফল সেমিস্টারের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ভর্তির ক্ষেত্রে সব শিক্ষার্থীর টিউশন ফির ওপর ৪০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে আইএসইউ। ছাত্রীদের জন্য ছাড় দেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত আরো ২০ শতাংশ। এ বড় ছাড় ঘোষণার পরও তেমন সাড়া মিলছে না শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। ফল সেমিস্টারে ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল প্রায় ২৫০।

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (ডিআইইউ) গত বছরের সামার ও ফল দুই সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল প্রায় এক হাজারের কাছাকাছি। এবার এখন পর্যন্ত ডিআইইউতে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে আড়াইশর কিছু বেশি।

এরই মধ্যে সেপ্টেম্বর অক্টোবরে নতুন সেমিস্টার শুরু হওয়ার কথা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। যেখানে আগের সেমিস্টারেই শিক্ষার্থী সঙ্কটে ভুগতে হয়েছে, সেখানে এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়াতেই এই সেমিস্টার ফাঁকা যাবে বলে জানিয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি।

সংগঠনটির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ভর্তিতে নতুন (গত ১০-১২ বছরে যেগুলো অনুমোদন পেয়েছে) বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুব একটা সাড়া পাচ্ছে না। পুরাতন ও বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিছুটা ভালো আছে। তবে সামনের এইচএসসি পরীক্ষা ও রেজাল্ট না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে না। ফলে আর্থিক সমস্যা এখনই চলছে ভবিষ্যতে আরও প্রকট হবে। বিশেষ করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। এদের অবস্থা খুবই খারাপ। আর্থিক সমস্যা সমাধানে সরকারের কাছে ঋণের আবেদন করা হয়েছে জানিয়ে কবির হোসেন বলেন, আমরা বলছি স্বল্প সুদে কিংবা বিনা সুদে ঋণ প্রদানের জন্য দাবি জানিয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। তবে এখনো কোন সাড়া পায়নি।

তিনি বলেন, একদম শীর্ষ পর্যায়ের দু-চারটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আসন অনুপাতে শিক্ষার্থী পেয়েছে। এছাড়া সবাই শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে বড় সংকটে রয়েছে। গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে, এ বছরের সামার সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি কমেছে ৭৫ শতাংশ। তবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ হার এক নয়। কোথাও এটি ৫০ শতাংশের মতো কমেছে। আবার কোথাও ৮০-৯০ শতাংশও কমেছে।

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. চৌধুরী মফিজুর রহমান বলেন, নতুন যে সেমিস্টার শুরু হয়েছে সেটিতেই শিক্ষার্থী অনেক কমে গেছে। এইচএসসি পরীক্ষা দেরিতে হওয়ায় সামনের সেমিস্টার ফাঁকা যাবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়বে। তিনি বলেন, পুরাতন ও যাদের নিজস্ব ক্যাম্পাস আছে তারা হয়তো কোন মতে চলতে পারবে। কিন্তু যারা নতুন, ভবন ভাড়া দিতে হয় তাদের অবস্থা আরও করুন। অনেকেই ভাড়া ও বেতন দিতে পারছে না। সেক্ষেত্রে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় হয়তো বন্ধও হয়ে যেতে পারে।

ইউজিসির সদস্য মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, কভিড-১৯ সংক্রমণের শুরুর দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় ইউজিসি। পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর্থিক সংকটসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়। তবে বাস্তবতা হলো অনুমোদনের পরও তারা শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। পরিবারের আর্থিক সংকটের পাশাপাশি এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়াটাও এখন শিক্ষার্থী না পাওয়ার বড় একটি কারণ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ শিক্ষার্থী সংকট কাটিয়ে ওঠা দুষ্কর।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, করোনাপরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ার কারণে এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। পরিবেশ অনুকূল মনে হলেই ১৫ দিন সময় দিয়ে এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে। এইচএসসি পরীক্ষা না হলে ভর্তি ও আয় বন্ধ হয়ে যাবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, নতুন ভর্তি হবে না, তবে অন্যান্য সেমিস্টারে যারা ভর্তি রয়েছে তাদের ক্লাস চলবে। যখন পরীক্ষা হবে তখন নতুন ভর্তি হবে।

সূত্র- ইনকিলাব

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়