শওগাত আলী সাগর: ১. বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমেকো ফার্মাসিউটিক্যালস দাবি করেছে, ঢাকা যাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতেতে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন পেতে পারে সেজন্য তারা ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের ভ্যাকসিনে বিনিয়োগ করেছে। কোম্পানিটি দাবি করেছে, এই ভ্যাকসিনের বেক্সিমকো হবে বাংলাদেশের একমাত্র সরবরাহকারী।
সঙ্গত কারনেই এই খবরটি মিডিয়ার ব্যাপক মনোযোগ পেয়েছে। মানুষের মনেও এ নিয়ে উৎসাহ তৈরি হয়েছে। তবে বেক্সিমকো সিরাম ইন্সটিটিউটে কি পরিমান বিনিয়োগ করছে- সেই তথ্য প্রকাশ করেনি। এই ঘোষনার পর ঢাকার শেয়ার বাজারে বেক্সিমকোর শেয়ারের দাম বেড়েছে।
২. সিরাম ইন্সটিটিউট যে ভ্যাকসিনটি নিয়ে কাজ করছে সেটি ‘অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন’ হিসেবে সমধিক পরিচিত। এই ‘অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনে’র সঙ্গে ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের সম্পর্ক কি? ভারতসহ নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোয় সরবরাহের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডোজ কোভিড ভ্যাকসিন উৎপাদনের দায়িত্ব পেয়েছে। এই লক্ষ্যে দরিদ্রদেশগুলোয় ভ্যাকসিন সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে সক্রিয় থাকা ভ্যাকসিন এলায়েন্স – জিএভিআই এবং বিল মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে ভারতের সিরাম ইন্সটিউটের এই সহযোগিতা চুক্তির ঘোষনা হয় গত ৭ আগষ্ট।
ওই ঘোষনায় জানানো হয়, বিল মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন সিরামকে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহযোগিতা দিচ্ছে। গত ৭ আগষ্ট সিরাম ইন্সটিটিউট সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই সহযোহিতা চুক্তির কথা ঘোষনা করে। সেখানে উল্লেখ করা হয় এই ভ্যাকসিনের প্রতি ডোজের দাম ধরা হবে সর্বাচ্চ ৩ মার্কিন ডলার এবং বিশ্বের ৯২টি দেশে এর সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।
সিরাম ইন্সটিটিউট যেখানে একটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চুক্তির আওতায় ভ্যাকসিন উৎপাদনের দায়িত্ব পেয়েছে সেখানে তারা নিজেরা আলাদাভাবে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে সরবরাহ চুক্তি করতে পারে কি? প্রাপ্ত তথ্যানুসারে. সিরামকে তহবিল দিচ্ছে বিল মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন আর ভ্যাকসিন বিতরনের বিষয়টি দেখভাল করছে- জিএভিআই, সেখানে বেক্সিমকো কিভাবে এই ভ্যাকসিনে বিনিয়োগ করে- এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা ঢাকার সাংবাদিকদের অবশ্যই দায়িত্ব।
ঢাকার বেক্সিমকো মিডিয়ায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ’সিরামের ভ্যাকসিনে বিনিয়োগের’ কথা ঘোষনা করলেও সিরামের ওয়েবসাইটে এই সংক্রান্ত কোনো তথ্য নাই। সেখানে বিল মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সাথে সহযোগিতা চুক্তির বিজ্ঞপ্তিটি আছে।
৩. ভারতের স্থানীয় দুটি কোম্পানির আবিষ্কার করা কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন মানবদেহে দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আছে। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নামে পরিচিতি পাওয়া ভ্যাকসিনটি ভারতের নিজস্ব ভ্যাকসিন নয়। পুনের সিরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া এই ভ্যাকসিনটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করবে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানানো হলেও এই কোম্পানিটি মুলত: ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যানুসারে, ‘ভ্যাকসিন কূটনীতিতে’ ভারত তাদের নিজস্ব ভ্যাকসিন দুটি নিয়েই এগুতে চায়। ভারতের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়ার (এনআইটিআই) ড. ভি কে পল এর নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি ভ্যাকসিন নিয়ে ভারত সরকারের জন্য পাঁচটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। প্রথম পরিকল্পনায় রয়েছে- প্রতিবেশ দেশগুলো বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেয়া আর পাঁচ নম্বর পরিকল্পনায় রয়েছে অন্যদেশকে ভ্যাকসিনের উৎপাদনের অংশিদার করা। সেক্ষেত্রেও তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে তাদের নিজস্ব ভ্যাকসিন দুটো।
তবে ভ্যাকসিন উৎপাদনের লাইসেন্সে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কোথায় ভ্যাকসিন বিক্রি করতে পারবে কোথায় পারবে না- তার উল্লেখ আছে।শেষ পর্যন্ত যে ভ্যাকসিনটিই আলোর মুখ দেখুক না কেন- তাদের লাইসেন্সের শর্ত অনুসরণ করতে হবে।
৪. ভ্যাকসিন নিয়ে দেশে দেশে রাজনীতি, কূটনীতি হচ্ছে বলে বিভিন্ন সময় বলা হয়েছে। ভ্যাকসিনের তথ্য ব্যবহার করে কেউ কোথাও ফায়দা লোটার চেষ্টায় আছে কী না, সেদিকেও নজর দেয়া দরকার।
লেখক: শওগাত আলী সাগর, প্রধান সম্পাদক, নতুনদেশ ডটকম