সিদ্দিক মাহমুদ: মাইকেল মধুসূদন দত্ত সম্পর্কে আমি একটা কথা বহুবার বলেছি, সে কথা আমি শতবার বলবো। মাইকেল তার শত বছরের সংস্কৃতি, ধর্ম, আদর্শ, পরিবার, সমাজ ত্যাগ করে, জলাঞ্জলি দিয়ে ধর্ম ত্যাগ করলেন। বিদেশিনি বিয়ে করলেন, ইংল্যান্ডে গেলেন কেন? ইংরেজ হওয়ার জন্য। নিজের ধর্ম, নিজের সংস্কৃতি, নিজের পিতা-মাতাকে ত্যাগ করলেন, কেন? ইংরেজ হওয়ার জন্য। তার অতো মেধার বহুলাংশ নষ্ট করলেন, কেবল ইংরেজিতে সাহিত্য রচনা করতে, কেন?
ইংরেজ হওয়ার জন্য। কীটস, শেলি, বায়রন হবেন তিনি। তারপর ইংরেজরা যখন তাকে ছুঁড়ে পাঁকে ফেলে দিলো, না খেতে পেয়ে তার প্রায় মরার দশা হলো, তখন বিদ্যাসাগরের বদান্যতায় তিনি ফিরতে পারলেন তার নিজ দেশে। একে আমি কী বলবো। অথচ তার যা মেধা, তার যা লেখনি শক্তি, তার যে কল্পনাশক্তি, সেসব তিনি প্রথম থেকে বাংলা সাহিত্যে কাজে লাগালে, তার সম্মান দীগন্ত প্রসারী হয়ে যেত। তিনি বাবার জমিদারিতে, কবি রবীন্দ্রনাথের মতো আয়েশী জীবনযাপন করে সাহিত্য রচনা করে যেতেন। হয় তো বাংলা সাহিত্যের স্রোতধারা অন্য খাতে প্রবাহিত হতো। বাবা-মা, পরিবার পরিজন তাকে ত্যাজ্য করতো না।
বাংলার সমাজ তাকে মাথায় করে রাখতো। হ্যাঁ তারপর তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন দিকপাল হয়েছিলেন। কিন্তু জাত-ধর্ম ত্যাগ করে তার মরণ হলো হতভাগ্যের মতো। তাকে আমি কী বলবো। বিদেশ-প্রেম, নিজ জাতি-ধর্মের প্রতি হীনমন্যতা। আমি এ কথা সব সময় বলি, বাঙালির চরম সর্বনাশ হয়েছে বারবার, তাদের এই হীনমন্যতার জন্য, স্বদেশি সিরাজ-উদ্দৌলাকে ত্যাগ করে বাঙালি বিদেশি ‘লাল মুখো’ ইংরেজকে ডেকে আনলো। বাঙালির সর্বনাশ সকল সময় হয়েছে, তাদের এই ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্সের জন্য। বাঙালিরা তার জাতির পিতাকে হত্যা করলো, তাদের এই ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্সের জন্য। বাঙালিরা তার বড় বড় বীর সেনাকে হত্যা করলো, তাদের এই ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্সের জন্য। আজও দেশের যে দুরবস্থা, তাও বাঙালির হীনমন্যতার জন্য।
নিজের ডাক্তার ভালো না, নিজের সাহিত্যিক ভালো না, নিজের আইটি এক্সপার্ট ভালো না, নিজের ইঞ্জিনিয়ার ভালো না, সব বিদেশিরা জানে। ওরাই ভালো। নিজেকে ভালো লাগে না, নিজের ভাই-বোন-আত্মীয়-স্বজন-প্রতিবেশী ভালো না, নিজের দেশ ভালো না। এদেশের ৩০/৫০ হাজার টাকার বেতন ভালো না, বিদেশে গিয়ে পরের গোলামি করে লাখ টাকা কামাবো। নিজের বিদ্যার, নিজের জ্ঞানের, অর্থের অভাব। সেটাকে কেবল দম্ভ আর অন্যায়-অনাচার দিয়ে ডেকে দেওয়ার প্রয়াশ। হায় রে বাঙালি, কবে জ্ঞান হবে। মাইকেলের মতো শেষ জীবনে কবরে যাওয়ার সময়। ফেসবুক থেকে