সোহেল হোসাইন, মানিকগঞ্জ : [২] গত ২৪ ঘন্টায় মানিকগঞ্জের আরিচা পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ৪ সেন্টিমিটার করে বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার অভ্যন্তরীন নদীগুলোর পানি বেড়েই চলছে। এতে জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে সিংগাইর উপজেলা ব্যতীত বাকি ছয়টি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ এরই মধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলার বানভাসি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ বেশি হয়েছে। এই তিন উপজেলার বানভাসি মানুষেরা পরিবার-পরিজন ও গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পরেছেন।
[৩] জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ সহয়তা অব্যাহত থাকলেও বন্যা কবলিত এসব এলাকায় অনেকেই কোনো ত্রাণ সহায়তা পায়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া জেলার তিনটি উপজেলার চরাঞ্চল বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাদ্যের সংকট। উপজেলার গুলোর বেশিরভাগ রাস্তা-ঘাটই তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। এতে বিপাকে পরেছেন খেটে খাওয়া মানুষগুলি। তিন উপজেলায় গো-খামারিরা কোরবানির গরু ক্রেতা না থাকায় হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন।
[৪] দৌলতপুর উপজেলার সমেতপুর গ্রামের করিম বলেন, শুনেছি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিকট কয়েকবার গিয়েও তিনি কোন ত্রাণ পাননি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ তাদের পরিচিত একই ব্যক্তিকেই বার বার ত্রাণ দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
[৫] নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরকাটারি এলাকার এক স্কুল শিক্ষক বলেন, চরকাটি ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ। ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের বাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনা অপ্রতুল বলে জানান তিনি।
[৬] হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, পদ্মার পানিতে নাকাল উপজেলার অধিকাংশ এলাকা। পদ্মা নদীর পানি উপজেলা পরিষদ চত্তরে প্রবেশ করেছে প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে। বন্যার পানিতে ক্ষতি হয়েছে এলাকার বহু রাস্তাঘাট। খাদ্য সংকটে রয়েছে উপজেলার চরাঞ্চলের বাসিন্দারা।
[৭] এদিকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পৌর এলাকাসহ কয়েকটি ইউনিয়নে গত দুই দিনে বন্যার পানি ঢুকে পরেছে। এতে তলিয়ে গেছে অনেক রাস্তাঘাট।
[৮] জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলার ২৩১ বর্গকিলোমিটার এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। আর পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে সাত হাজারেরও বেশি মানুষ। এছাড়া জেলায় ২২ হাজার হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে।
[৯] বন্যা কবলিত এলাকার জনসাধারণের জন্য ১৩০ মেট্রিক টন চাল ও ১৭’শ শুকনো খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
[১০] মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এসএম ফেরদৌস বলেন, বন্যা কবলিত এলাকার মানুষদের জন্য জেলায় ১০৪ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এরই মধ্যে হরিরামপুর ও দৌলতপুর উপজেলার বেশ কিছু পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
[১১] এদিকে সরকারি হিসাবে পানিবন্দি সংখ্যা সাত হাজারের ওপরে দেখালো জেলায় পানিবন্দি হয়ে পরেছে লক্ষাধিক মানুষ।
আপনার মতামত লিখুন :