শিরোনাম
◈ ফলকার টুর্ককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করল ভেনেজুয়েলার পার্লামেন্ট ◈ ভোলায় স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ: প্রধান আসামিসহ তিনজন গ্রেপ্তার, অভিযুক্ত নেতারা দল থেকে বহিষ্কৃত ◈ মুরাদনগরে মাদককারবারির অভিযোগে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা, একজন গুরুতর আহত ◈ গণঅভ্যুত্থান সরকারের কেউ কেউ ‘লুটপাট’ করে বেহুঁশ হওয়ার দশা: ইশরাক হোসেন ◈ যে কারণে পিআর পদ্ধতি চায় জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন ◈ ‘মেগাস্টার’ শব্দকাণ্ডে বিতর্ক: “আমি মানুষটা ছোট, অন্যকে ছোট করব কীভাবে” — জাহিদ হাসান ◈ এবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন শিল্পকলার চারুকলা পরিচালক ◈ কেশবপুর পৌরসভার  সাবেক মেয়র রফিকুল গ্রেফতার ◈ বেনাপোল কাস্টমসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩১৬ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় ◈ পার্বত্য চট্টগ্রামের একশ স্কুলে এবছরই ই-লার্নিং চালুর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

প্রকাশিত : ১৮ মে, ২০২০, ০৪:৩৪ সকাল
আপডেট : ১৮ মে, ২০২০, ০৪:৩৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] মানুষের মাথার ৯৫২টি মাথার খুলি দিয়ে নির্মিত একটি টাওয়ারের রহস্য!

মুসবা তিন্নি : [২] সার্বিয়ার নিস শহরে রয়েছে এই স্কাল টাওয়ারটি। তবে এটি ভৌতিক কোনো ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়, নৃশংসতার ইতিহাস বহনকারী একটি স্মৃতিস্তম্ভ।  বলকান উপদ্বীপের প্রাণ কেন্দ্রে নিস শহর অবস্থিত। সেখানে অটোমানদের ৪০০ বছরের শাসনের বিরুদ্ধে সার্বিয়ানদের সংগ্রামের একটি ভয়ঙ্কর স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। সার্বিয়ান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মাথার খুলি দিয়ে একটি টাওয়ার তৈরি করা হয় সেখানে। তবে এটি হাজারো নিহত যোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ ত্যাগের জন্য নির্মিত হয়নি। সার্বিয়ান সংগ্রামীদের ভীতি প্রদর্শনের জন্য অটোমানরা নির্মাণ করেছিল।
[৩] সার্বিয়ান সম্রাট পঞ্চম স্টেফান উরোস (১৩৩৬-১৩৭১ খ্রিষ্টাব্দ) এর অধীনে সার্বিয়ান সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়েছিল। রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রশাসকরা সম্রাটকে নাম মাত্র মান্য করত। ফলে সার্বিয়ান সাম্রাজ্য অনেকটা বিভক্ত হয়ে পড়ে। একই সময়ে অটোমান সাম্রাজ্য ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। তারা ধীরে ধীরে এশিয়া এবং ইউরোপ জুড়ে সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকে।
[৪] সার্বীয় সাম্রাজ্য চতুর্দশ শতাব্দীর দিকে অটোমানদের দখলে চলে যায়। শক্তিশালী অটোমানদের আক্রমণের বিরুদ্ধে সার্বিয়ানরা তেমন কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। অটোমান তুর্কিরা ১৩৭৫ খ্রিষ্ঠাব্দে প্রথম নিস শহর দখল করে। দীর্ঘসময় পর ১৪৪৩ খ্রিষ্টাব্দে সার্বিয়ানরা শহরটি ফিরিয়ে নিতে পারলেও মাত্র এক বছর পর অর্থাৎ ১৪৪৪ খ্রিষ্টাব্দে অটোমানরা পুনরায় নিস দখল করে।
[৫] এই শহরটির দখল ১৭ এবং ১৮ শতকে অটোমান তুর্কি এবং অস্ট্রিয়ানদের মধ্যে কয়েকবার হাত বদলেছে। তবে নিস শহরের ৪০০ বছরের পরাধীনতার বেশিরভাগ সময়ই অটোমানদের দখলে ছিল। অটোমানদের অধীনেই নিস শহর সর্বাধিক নৃশংসতার শিকার হয়েছে। এই সময় সার্বিয়ায় অঞ্চলের মধ্য দিয়ে ভ্রমণকারী অনেক পথযাত্রীরা অটোমানদের নৃশংসতার বর্ণনা দিয়েছেন।
[৬] অটোমান এবং সার্বিয়ানদের মধ্যে ১৮০৫ খ্রিষ্টাব্দে ইভাঙ্কোভাচে প্রথম পূর্ণ মাত্রায় যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে অটোমানরা পরাজিত হয়ে নিস শহরের দিকে পিছু হাঁটতে বাধ্য হয়। সার্বিয়ান বিপ্লবীদের সামরিক স্টিভেন সিনডেলিক এই যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে একজন চৌকস সামরিক নেতা হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি রেজাভা পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন।
[৭] ১৮০৯ খ্রীষ্টাব্দে কমান্ডার স্টিভেন সিনডেলিকের নেতৃত্বে সার্বিয়ান দেশপ্রেমিক বিদ্রোহী সৈন্যরা নিস শহরে অবস্থানরত দখলদার অটোমান বাহিনীর উপর হামলা করেছিল। যুদ্ধে অটোমানদের সৈন্য সংখ্যা প্রায় চারগুণ বেশি ছিল। তাদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে সার্বিয়ান বিদ্রোহীরা প্রাণপণে যুদ্ধ করেও শেষ রক্ষা হয়নি। এই যুদ্ধে কমান্ডার স্টিভেন সিনডেলিকসহ প্রায় তিন হাজার সার্বিয়ান সৈন্য নিহত হয়।
[৮] যুদ্ধ জয়ের পর অটোমানরা চরম নৃশংসতার পরিচয় দেয়। অটোমান সেনাপতি গ্র্যান্ড ভিজিয়ার হুরশিদ পাশা কমান্ডার সিনডেলিকসহ মৃত সার্বিয়ান সৈন্যদের দেহ থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যুদ্ধ জয়ের প্রমাণস্বরূপ হুরশিদ পাশা সার্বিয়ান সৈন্যদের মস্তকবিহীন দেহ অটোমান সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদের নিকট প্রেরণ করেছিলেন।
[৯] হুরশিদ পাশা বিদ্রোহীদের খুলি দিয়ে নিস শহরের প্রবেশ পথে একটি টাওয়ার তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। যাতে নৃশংসতার এই নিদর্শন দেখে কেউ অটোমানদের বিরোধীতা করার সাহস না পায়। এই ভাবনা থেকেই নিস শহরের প্রবেশ দ্বারে স্কাল টাওয়ার বা খুলির টাওয়ার নির্মাণ করে অটোমানরা। সার্বিয়ান বিদ্রোহী সৈন্যদের কেটে রাখা ৯৫২টি মাথার খুলি দিয়ে এই স্কাল টাওয়ার তৈরি করা হয়েছিল।
[১০] টাওয়ারটির উচ্চতা ছিল ১৫ ফুট এবং প্রস্থ ছিল ১৩ ফুট। টাওয়ারে খুলিগুলো ৫৬ সারিতে সাজানো হয়েছিল। আর বিদ্রোহীদের কমান্ডারের মাথার খুলি সবার উপরে রাখা হয়েছিল। খুলির টাওয়ারটি সার্বিয়ানদের ভীতি প্রদর্শনের জন্য নির্মিত হলেও কালক্রমে তা সার্বিয়ানদের বীর সন্তানদের আত্মত্যাগের স্মৃতিস্তম্ভে পরিণত হয়েছে।
[১১] তাদের প্রতিরোধের একটি শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে টাওয়ারটি এখনো আছে। বর্তমানে এর বেশিরভাগ খুলিই হারিয়ে গিয়েছে। আর ৫০টির মতো খুলি অবশিষ্ট আছে। খুলির টাওয়ারটি সংরক্ষণের জন্য চারপাশে একটি ছোট চ্যাপেল নির্মাণ করা হয়েছে। টাওয়ারের মূল অবয়ব কাঁচ দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে। যা দেখতে অনেকাটা মন্দিরের মতো।
সূত্র: আমেউসিংপ্লানেট
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়