মতিনুজ্জামান মিটু: [২] করোনাভাইরাসের ভয়াবহতায় কৃষির ওপর চাপ বাড়ছে। বাংলাদেশের কৃষির ওপর করোনা পরিস্থিতির প্রভাব মোকাবিলায় করণীয় প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এপিএ এক্সপার্ট পুল সদস্য ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাক্তন সদস্য মো. হামিদুর রহমান জানান, ‘সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিব করোনা পরিস্থিতিকে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর সংঘঠিত সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক ও মানবিক সংকট হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সাধারন মানুষের কাছে করোনা সংক্রমন ও কারোনা সংক্রমনজনিত মৃত্যু পরিস্থিতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ। কেননা বিশ্বযুদ্ধের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত দেশের সংখ্যা ছিল সীমিত কিন্তু করোনায় ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে ২১২ এর বেশি দেশ। ইতোমধ্যেই প্রায় ৮০ হাজার মানুষের প্রানহানি ঘটেছে(ডব্লিউডব্লিউ ডব্লিউ.হু.ইন্ট ৮ এপ্রিল ২০২০)। নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত হয়েছে সাড়ে ১৩ লাখের বেশি মানুষ। আমেরিকা-ইউরোপের মত জ্ঞান-বিজ্ঞানে অতি উন্নত দেশগুলো পরিস্থিতি মোকাবিলায় হিমসিম খাচ্ছে, অসহায় বোধ করছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা এতটাই তীব্র যে, গোটা মানব সভ্যতা হুমকির মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীর প্রায় সাতশো কোটি মানুষ করোনার আক্রমণ থেকে বাঁচার আশায় স্বপ্রণোদিত গৃহবন্দীত্বের জীবন বেঁচে নিয়েছে। এমন বিপর্যয় উত্তরাধুনিক সভ্যতার প্রতিটি মানুষের কাছে ছিল অকল্পনীয়।
[৩] বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্য জয়ের লড়াইয়ে নিয়োজিত দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের একটি তীব্র ঘনবসতিপূর্ণ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১১৪৬ জন মানুষ বসবাস করে। এ দেশের অর্থনীতির বুনিয়াদ কৃষি এবং শ্রমশক্তির ৪০.৬ ভাগ মানুষ কৃষি খাতে নিয়োজিত। সাধারন ভাবে বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও জীবন-জীবিকা ৪টি খুঁটির উপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। এগুলো হলো; কৃষি, রপ্তানিমুখী পোষাক শিল্প, বিদেশে কর্মরত শ্রমশক্তি এবং দেশের অভ্যন্তরের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ।
[৪] অর্থসংস্থানের এসব ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে খাদ্যের যোগানদার খাত হিসেবে কৃষি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ দেশের কৃষি ব্যবস্থার এক ধরনের চিরাচরিত নিজস্বতা থাকলেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এ ব্যবস্থা এখন এক আশাজাগানিয়া সমৃদ্ধির স্তরে উঠে এসেছে। ধান, গম, ভুট্টা ও আলুর মত প্রধান খাদ্য শস্য উৎপাদনে সাফল্যের পাশাপাশি সবজি, ফলমূল ও মশলা জাতীয় ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিপুল সাফল্য অর্জন করেছে। সেইসঙ্গে ডাল ও তৈল বীজ উৎপাদনে উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করছে। পাশাপাশি-মাছ, মাংশ, ডিম ও দুধ উৎপাদনে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
[৫] করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা আক্রান্ত হওয়া মানে বাঁচা-মরার আর এক সংকটের মুখোমুখি হওয়া। এ কারণে কৃষির ওপর করোনা পরিস্থিতির প্রভাব সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ বা উত্তরণের জন্য করণীয় নির্ধারণ করতে হবে এবং তা করতে হবে এখনই। কেননা, বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ইতোমধ্যেই করোনা পরিস্থিতির প্রভাবে বিশ্ব খাদ্য পরিস্থিতির হালহাকিকত সম্পর্কে ইতোমধ্যেই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে।
[৬] করোনা পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের কৃষি: চলতি বছরের শুরুতেই কোভিড-১৯ পরিচয়ে করোনা ভাইরাস চীন দেশে মানুষের জন্য মহামারী আকারে দেখা দেয়। তার প্রকোপ বাংলাদেশে এসে পৌঁছায় মার্চ মাসের সূচনায়। এক মাস যেতে না যেতে অর্থাৎ মার্চ মাসের মধ্যেই করোনা বিশ্ব জুড়ে ভয়াবহ মহামারী আকার ধারণ করে। আজ পর্যন্ত আমাদের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ২১৮ জন এবং মৃত্যুর সংখ্যা ২০ জন এবং এ হার জ্যামিতিক হারে বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। গত ২৬ মার্চ আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস থেকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন রোধে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার জন্য সব নাগরিককে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করাসহ কিছু বিশেষ স্বাস্থ্য সুরক্ষা আচরণ রপ্ত করার জন্য রাষ্ট্রীয় নিদের্শনা দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকান, স্কুল-কলেজ ও গণপরিবহন। শহর থেকে বিপুল পরিমান মানুষ গ্রামে চলে যায়। মানুষের মধ্যে কাজ করতে থাকে ভয় ও অসহায়ত্ব। সংগত কারণেই এর কিছু না কিছু প্রভাব কৃষি ব্যবস্থার উপর পড়ছে। কেননা মানুষেরা অর্থাৎ কৃষক কৃষাণী ভাই বোনেরাই কৃষির চালিকা শক্তি। বাংলাদেশের ফসল উৎপাদন ব্যবস্থায় অক্টোবর মাস থেকে পরের বছর মার্চ মাস পর্যন্ত সময়টাকে বলা হয় রবি মৌসুম। এ মৌসুম মাঠ ফসল উৎপাদনের জন্য প্রধান মৌসুম। এ মৌসুমে প্রাকৃতিক বৈরিতা তেমন থাকে না সে কারণে ফসল উৎপাদন নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হয়। এ মৌসুমে প্রধান খাদ্য শস্য বোরো ধানের পাশাপাশি গম, ভুট্টা, আলু, ডাল ও তৈল বীজ, পিয়াঁজ, রসুন, মরিচের মত প্রধান প্রধান মশলা উৎপান ও সংগ্রহের কাজ চলে। প্রতিটি কৃষক পরিবার কাটায় ব্যস্ত সময়। এমন একটি সময়ে যদি কৃষকদের ঘরে থাকতে হয়, উৎপাদিত পণ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিক্রয় না করতে পারে, মাঠের ফসলের যদি প্রয়োজনীয় পরিচর্যা না হলে এর প্রভাব কৃষির উপর পড়বে বইকি। এ ছাড়া সমাগত খরিপ-১ মৌসুমে আউশ ধান, পাট, মুগডাল ইত্যাদি ফসল চাষের প্রস্তুতি ও পরিচর্যা, মধ্য এপ্রিল থেকে মে মাস জুড়ে বোরো ধান কাটা ও সংগ্রহের কাজে প্রতিনিয়ত কৃষকদেরকে মাঠে যেতে হবে। এপ্রিলের ১৫ তারিখের পর থেকেই হাওড় অঞ্চলে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটার কাজ। এ সময় উত্তর বঙ্গের পাবনা, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট এবং জামালপুর ও ময়মনসিংহ থেকে কৃষি শ্রমিক হাওড় অঞ্চলে যাতায়ত করবে। দরকার হবে ভর্তুকীর মাধ্যমে সরকার প্রদত্ত কাটার যন্ত্র ব্যবহারের। করোনা পরিস্থিতির কারণে এসব কার্যক্রম যদি বাধাগ্রস্থ হয় তার ফলাফল নিশ্চয় কৃষির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
[৭] অন্যদিকে বাংলাদেশের কৃষিতে যে বিপুল পরিমান রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক ব্যবহৃত হয়। এ সব রাসায়নিক দ্রব্যের কোন কোনটি কাঁচামাল হিসেবে আবার কোনটি তৈরি পণ্য হিসেবে বিদেশ থেকে আসে। আমরা যে সবজি, ভুট্টা এবং পাট উৎপাদন করি এসব ফসলের বীজের প্রধান উৎস বিদেশ। আলু এবং কিছু কিছু হাইব্রিড নের বীজও বিদেশ থেকে আসে। পাশাপাশি কৃষি যন্ত্রপাতির সিংহভাগ আসে বিদেশ থেকে। করোনার কারণে এসব পণ্য বিদেশ থেকে সময়মত আসা বিঘ্নিত হলে তার নেতিবাচক প্রভাব কৃষির উপর পড়তে বাধ্য।
[৮] উৎপাদিত কৃষি পন্যের বাজারজাতকরা কৃষি ক্ষেত্রে আরেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। দেশের ভিতরে এবং বাইরের পঁচনশীল কৃষিপন্যের বাজারজাতকরার কাজ বিঘ্নিত হলে তার প্রভাবও কৃষির ওপর পড়বে নানাভাবে নানা মাত্রায়। এই বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিয়েই আমাদের কৃষি উৎপাদনের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। বিষয়টি কত বড় চ্যালেঞ্জ তা আমরা অনুমান করতে পারি। এমনিতেই কৃষি জলবায়ুর প্রভাব নির্ভর অনিশ্চয়তার পেশা, তার ওপর যদি এই প্রাণঘাতি মহামারীর মুখোমুখী হয়ে কৃষি উৎপাদন বেগবান করতে হয় সে তো হবে এক অন্য রকম মহাযুদ্ধ। এই মহামারী থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে মহাযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে এবং জয়ী হতেই হবে।
[৯]আর জয়ী হতে দরকার হবে। এই যুদ্ধের প্রধান সৈনিক কৃষক ভাইদের পাশে সর্বোচ্চ এবং সর্ব প্রকার সহায়তা দিয়ে রাষ্ট্রকে দাঁড়াতে হবে, সবার আগে করোনা থেকে এদের রক্ষা করতে হবে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে কৃষক ভাইয়েরা করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থায় যেন সামিল থাকে সেজন্য সরকার স্বাস্থ্য বিভাগ ও তথ্য বিভাগরে পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ কর্মী ও কৃষক নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে। সম্প্রসারণ কর্মীগণ স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে দ্বিগুন সতর্কতা, দায়িত্বশীলতা ও অঙ্গীকারের সঙ্গে যাতে মাঠ পর্যবেক্ষণ এবং প্রযুক্তি ও পরামর্শ সেবা অব্যাহত রাখেন সেজন্য সংস্থা পর্যায়ে এবং মন্ত্রণালয় পর্যায়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে। স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে এবং সম্প্রসারণ কর্মীদের জন্য মোবাইল ভাতা বাড়িয়ে এই সেবার পরিধি বাড়ানোর প্রচেষ্টা নিতে হবে। প্রধান কাজ হবে উৎপাদনে কৃষকের মনোবল সুদৃঢ় করে তাদের জন্য দরকারি উপকরণ ও অর্থ প্রবাহ নিশ্চিত করা ইত্যাদি। এই কাজগুলোই এখন আমরা করার চেষ্টা করছি। বিদ্যমান মাঠ ফসলের (ঝঃধহফরহম ঈৎড়ঢ়ং) প্রয়োজনীয় পরিচর্যা অব্যাহত রাখা; কৃষক ভাইয়েরা স্ব-উদ্যোগেই এ কাজটি করে থাকেন। আমাদের সম্প্রসারণ কর্মীরা এ কাজে পরামর্শ সেবা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত আছেন। দরকারি কৃষি উপকরণ, বীজ, সার, বালাইনাশক, সেচ ব্যবস্থাপনাসহ কৃষি যন্ত্রপাতির সঠিক সময়ে প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা। রাজস্ব খাতের প্রনোদনা এবং বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম যাতে মাঠ পর্যায়ে যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয় সেদিকে নজরদারী জোরদার করা। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় কৃষি পণ্যের পরিবহন, গুদামজাতকরা, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরার কাজগুলো নির্বিঘ্ন হয় সে ব্যবস্থা করা। ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া ধান কাটা যন্ত্রসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ১২ এপ্রিলের মধ্যে হাওড় অঞ্চলের কৃষকের মধ্যে পৌছানো নিশ্চিত করা। হাওড় অঞ্চলে কৃষি শ্রমিকের ঘাটতি পূরণে উত্তরবঙ্গ ও জামালপুর-ময়মনসিংহ থেকে আগত বোরো ধান কাটা মৌসুমে যাতে কৃষি শ্রমিক যাতায়াত করতে পারে সে বিষয়ে দরকারি ব্যবস্থা গ্রহণ করা। খরিপ-১ মৌসুমের প্রধান প্রধান ফসল যেমন আউশ ধান, পাট, মুগডাল ইত্যাদি চাষের লক্ষ্যমাত্রা যাতে অর্জিত হয় সে বিষয়ে কৃষি গবেষনা, বিএডিসি এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যৌথ কর্মধারা জোরদার করা। এ ক্ষেত্রে বীজ ব্যবসায়ী বিশেষ করে যারা হাইব্রিড ধান বীজ এবং পাট বীজ বিপণন করে থাকেন তাদের সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানো। আমন তথা খরিপ-২ মৌসুমে ইতোমধ্যে নেওয়া পরিকল্পনা পুন;নিশ্চিত করা এবং বোরো মৌসুমের ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়ার বিষয়টি পরিকল্পনায় সংযুক্ত করে বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা প্রস্তুত রাখা। খরিপ-১ ও খরিপ-২ মৌসুমে ফসল চাষ নির্বিঘ্ন করার জন্য দরকারি আমদানীযোগ্য উপকরণের যোগান নিশ্চিত করার জন্য উৎস দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ এবং এ সব পন্যের আগমন ও পরিবহন এবং ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য আমদানিকারক ও বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ নিশ্চিত করা। করোনা দূর্যোগকালে উদ্ভাবনমূলক সম্প্রসারণ সেবা দিতে হবে। এ জন্য উদ্ভাবনী কর্মকর্তাদের প্রণোদনা দেওয়ার মাধ্যমে উৎসাহিত করা। এসব উদ্ভাবনী সম্প্রসারণ সেবা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। উদ্ভুত করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত ২৬ মার্চ এর ভাষনে চাষযোগ্য প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল উৎপাদন এর যে দিক নিদের্শনা দিয়েছেন এবং বৈশ্বিক মানবিক বিপর্যয়কালে অধিক দুর্দশাগ্রস্থদের খাদ্য শস্য পাঠানোর যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তা সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে বাস্তবায়নে কৃষক সমাজের সার্বিক সহায়তা নেওয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় সর্বশক্তি নিয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পরিস্থিতির অনাকাক্সিক্ষত অবনতি ও কৃষি ক্ষেত্রে করণীয়: আমাদের এতসব প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা অতি অবশ্যই ভূলুন্ঠিত হবে যদি পরিস্থিতির অনাকাক্সিক্ষত অবনতি ঘটতে থাকে। করোনা সংক্রমন যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করে বাংলাদেশের জনঘনত্ব এবং চিকিৎসা সুবিধার তুলনামূলক অপ্রতুলতা আমদের জন্য অধিকতর ঝুঁকির কারণ হতে পারে। পরিস্থিতি আরো ঝুঁকিপূর্ণ হলে অন্য সব ব্যবস্থার মত কৃষি খাতের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ছাড়াও কৃষি উপকরনের ওপর আমাদের বিদেশ নির্ভরতা আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করতে পারে। অধিকন্তু তৈরি পোষাক রপ্তানি ও জনশক্তি থেকে আয় কমে গেলে তা আমাদের সার্বিক অর্থনীতি তথা রাষ্ট্রীয় সামর্থ্যরে উপর প্রভাব ফেলবে। এমন চরম খারাপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আমরা কি পর্যায়ে কৃষি উৎপাদনের ধারা অভ্যাহত রাখবো তথা খাদ্যোৎপাদন চাহিদার সমানুপাতে রাখবো সে বিষয়টি এখন থেকেই ভাবতে হবে। এই প্রস্তুতির ক্ষেত্রে করণীয় হলো ; করোনা মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা কঠোর ভাবে মেনে চলে সম্ভাব্য কি কি নিরাপদ বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে কৃষি উৎপাদন চালু রাখতে হবে সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া। এ বিষয়ে বিশ্ব পরিসরের কোন কৌশল বা অনুমোদন যোগ্য অভিজ্ঞতা থাকলে তা গ্রহণ ও প্রয়োগের চর্চা করা। সেই সঙ্গে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগের উপযোগী উদ্ভাবনমূলক কার্যকর কর্মকৌশল নেওয়া। মাঠে থাকা বোরো ধান যাতে সম্পূর্ণরূপে সংগ্রহ করা সম্ভব হয় তার সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, এ ক্ষেত্রে মাঠ প্রশাসন এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে সহযোগীতামূলক কর্মধারা অনুসরণ করতে হবে। কৃষকের সহায়তায় সবাইকে সর্বোতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। ভুট্টা, গম, আলু, পেয়াজ, রসুন সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে কৃষকদের সহযোগীতা করতে হবে।
গ্রামাঞ্চলে কৃষকের বসতবাড়িতে এবং শহরাঞ্চলের বাড়িতে পুষ্টি বাগান রচনার কাজ দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে। হোম কোয়ারিনটাইনে থাকা অবস্থায় এ কাজে সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে। নার্সারী থেকে যাতে বীজ বা চারা সংগ্রহ করে এ কাজ করা যায় তার সুব্যবস্থা করতে হবে। দরকারী কৃষি যন্ত্রপাতির মজুদ গড়ে তুলতে হবে এবং ভর্তুকি মূল্যে অধিক সংখ্যক কৃষক যাতে কৃষি যন্ত্রপাতি পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষি উপকরণ দেশের বাইরে থেকে আনা, খাদ্যপণ্য আমদানি রপ্তানি এবং কৃষিপন্যের ও উপকরনের অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থা সুচারুরূপে চালু রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে কৃষি, বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আন্ত;সমন্বয় জোরদার করতে হবে। চলতি বোরো মৌসুম থেকে সরকারের পক্ষ থেকে ন্যায্যমূল্যে প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে ধান চাল সংগ্রহের কার্যক্রম বাড়াতে হবে। দরকারে বেসরকারি গোডাউন এবং সরকারি শস্যগুদামগুলো ব্যবহার করতে হবে। করোনা মোকাবেলায় এটা হবে অতি গুরুত্বপূর্ন কার্যক্রম। কৃষক, কৃষি উদ্যেক্তা এবং ক্ষুদ্র মাঝারি ও বড় কৃষি ব্যবসায়ীদের কম সূদে (৪% হারে) ঋন দিতে হবে।’