হাসনাত কাইয়ূম : আমাদের অনেক বন্ধু আমাদের প্রশ্ন করেছেন কেন আমরা রান্না করা খাবারের কথা বলছি, কেন অন্যদের কথা বলছি না? আসলে আমরা উদ্ভূত পরিস্থতির সঙ্গে পরিচিত নই, কিন্তু আমরা প্রত্যেকে জানি, এই ধরনের অবস্থা যখন সৃষ্টি হয় তখন সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়ে তারাই যাদের প্রকৃতপক্ষে কোনো ঘরই নেই। আমরা গিজগিজে ভিড়ের শহরে তিতিবিরক্ত খাকি বলে খুব একটা দেখতে পাই না, এ শহরের কতো মানসিক প্রতিবন্ধী, শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষ অন্যের দয়ায় খেয়ে না খেয়ে বেঁচে থাকে। আমরা সারাদিনে তাদের মাত্র খুব অল্প ক’জনকেই নেশাগ্রস্ত হয়ে পথের পাশে ঘুমিয়ে থাকতে দেখি, যারা রাতে রাস্তার পাশে একটু পলিথিনের আড়াল করে অতি সস্তায় নিজেকে বিক্রি করে পেট চালায়। আমরা সে সব, যারা শিশুকালেই সংসার থেকে ছিটকে পথে এসে পড়েছে, যারা কখনো হাত পেতে, কখনো ফুল বেচে, কখনো পানি বেচে, স্টেশনের কার্ড করা কুলিদের ধমক খেয়েও চুরি করে ব্যাগ টেনে, কখনো কাগজ কুড়িয়ে আর কখনো ময়লাপোতায় দুর্গন্ধ ঘেঁটে বেচে থাকে, তাদের দেখার মতো ফাঁক পাই না, কিন্তু তারা থাকে। আরও অনেক রকম মানুষেরা এ শহরে থাকে যাদের ঘর নেই, রান্না করে খাওয়ার সরঞ্জাম ব্যবস্থা নেই। হঠাৎ করে শহর এ রকম সুনসান জনমানবহীন হয়ে গেলে সবার আগে তারাই সবচেয়ে আদিম সমস্যাটায় পড়ে। যারা দরিদ্র, অতি দরিদ্র, যারা বস্তিতে থাকে, যে বাপে ছেড়ে যাওয়া মা’র ফেলতে না পারা পরিবারের কাঠামোর মধ্যে আছে, আর যার এ কাঠামোর আশ্রয়টুকুও নেই, তাদের মধ্যকার পার্থক্য মাপার মতো অর্থনৈতিক মানদ- এখনো ফরমাল ইকোনমিতিতে নেই, বন্ধুরা। এ রকম যে মানুষেরা আছে, আমরা মনে করি সবার আগে তাদের কাছে পৌঁছা দরকার প্রস্তুতকৃত খাবার নিয়ে। বাকিদের কারও একদিন চলার সামর্থ্য আছে, কারও এক সপ্তাহ। ২ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে তারা ভেঙে পড়বে। এর মধ্যেই সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এগিয়ে আসতে বাধ্য করতে হবে। সে কাজ সবার। করোনা থেকে রেহাই পেতে হলে যেমন সবাইকেই করোনামুক্ত করতে হবে, তেমনি সবাইকে করোনামুক্ত রাখতে হলে সবাইকেই ন্যূনতম জীবিকার নিশ্চয়তা দিতে হবে। ছিনাই (ঝিনুকের খোল) দিয়ে যেমন সমুদ্র সেচা যায় না, তেমনি আমাদের মতো ব্যক্তি-সংগঠনের উদ্যোগে তা রক্ষা করা যাবে না জানি। তা সত্ত্বেও আমরা অন্যদের কথাও বলতে চাই, কিন্তু আপনি কেন বলছেন না, কেন মনে করছেন এটা বলার এজেন্সি কেউ একজন বা কোনো একটা সংগঠন বা কতোগুলো সংগঠন নিয়ে নিয়েছে? কথা বলুন, নিজের অবস্থান থেকেই কথা বলুন। ভয়ে, বিপদে, মানুষ মানুষের কণ্ঠস্বর শুনতে চায়। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :