শিরোনাম
◈ শ্রীলঙ্কার কা‌ছে আফগা‌নিস্তান হে‌রে যাওয়ায় সুপার ফো‌রে খেলার সু‌যোগ পে‌লো বাংলাদেশ ◈ বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে টিউলিপের মিথ্যাচার, নতুন সংকটে স্টারমার: ডেইলি এক্সপ্রেসের রিপোর্ট ◈ শুধু অতীতের নয়, বর্তমানের দুর্নীতি থামাতেও নজর দিতে হবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ◈ বাংলাদেশ ও চীন সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে একসাথে এগিয়ে যাবে : প্রধান উপদেষ্টা  ◈ সাফ চ‌্যা‌ম্পিয়নশী‌পে নেপালকে ৪-০ গো‌লে হারা‌লো বাংলাদেশ ◈ শ্রীলঙ্কার প্রতি বাংলা‌দে‌শের সমর্থন, চোখ এড়ায়নি লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের ◈ আফগানিস্তান-শ্রীলংকা ম্যাচের ফল যেমন হলে লাভ বাংলাদেশের ◈ নির্বাচনী দায়িত্বে অপরাধের সাজা বাড়ছে: অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন ◈ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত সম্পূর্ণভাবে পৃথক করলো সরকার ◈ কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয় বিএনপি : সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ১৮ মার্চ, ২০২০, ০৭:৫৯ সকাল
আপডেট : ১৮ মার্চ, ২০২০, ০৭:৫৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সম্ভাব্য মহামারীতে আমাদের সামাজিক রাষ্ট্রীয় প্রস্তুতি এবং করণীয়

ফিরোজ আহমেদ: ঢাকা মেডিকেল কলেজে নাজমা আমিন নামের কানাডা প্রবাসী মেয়েটার মৃত্যুর ঘটনাতে একটা বিষয় খুব পরিষ্কার: রাষ্ট্র হিসেবে, প্রতিষ্ঠান হিসেবে করোনা কিংবা যেকোনো মহামারী ঠেকাবার ন্যূনতম কোনো প্রস্তুতি, প্রশিক্ষণ, কোনো আয়োজন আমাদের দেশে কারও নেই। সেটা দেখতে পাবেন প্রবাসীদের সামলানো কিংবা আরও কয়েকটা হাসপাতালের প্রস্তুতির দশা থেকে। আমি চিকিৎসক কিংবা নার্সদের সামান্যই দোষ দেখি। তাদের সুরক্ষার জন্য কী ধরনের প্রস্তুতির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে? করোনা রোগী সামলাবার কী ব্যবস্থা আছে? কিছুই না। ফলে আতঙ্কিত হয়ে দিশাহারা জনতার মতোই তারা ছোটাছুটি করেছেন তারাও, যাদের পেশাই অসুখের সামনে দাঁড়ানো।

এমনকি একটা সম্ভাব্য দুর্যোগে অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠানও যদি ভেঙে পরে, ব্যক্তিগতভাবে তাদের দোষারোপ করতে পারবেন কি? একটাই আশার খবর, যদিও তার সম্ভাবনা বেশ কম। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের একটা প্রতিবেদনে (৮মার্চ) বলছে, উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে এই ভাইরাসের প্রকোপ কমে আসবার বিষয়ে চীনা একদল গবেষক নিঃসন্দেহ। আবার ডব্লিউএইচওর আরেকদল গবেষক মনে করেন, এর উলটোটাও দেখা যাচ্ছে। দুইটাই সত্যি হতে পারে, ৭০ ডিগ্রির কমে ভাইরাসের মৃত্যু না হলেও তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভাইরাসটির সক্রিয়তা কমে আসতেই পারে। নাও পারে, আমরা এখনো নিশ্চিত না। তবুও আমার এখনো আশা, আমাদের দেশে কোনো করোনার মহামারী দেখা দেবে না। কিন্তু যদি দেখা দেয়? ধরে নিন, এটা একটা সম্ভাব্য যৌক্তিক কল্পনা। মহারমারীতে সবচেয়ে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কাদের? যারা সবচেয়ে বেশি জনগণের সান্নিধ্যে থাকেন। এর মানে সরকারি মানুষজনের মাঝে পুলিশ, চিকিৎসক। যারা সম্ভাব্য একটা মহামারীতে একদিনে চরম অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করবেন, অন্যদল চিকিৎসা দেবেন।

কিন্তু এই দুই অংশই যদি অপ্রস্তুত, আতঙ্কিত এবং অপ্রশিক্ষিত থাকেন, বাকি দেশবাসীর কী হবে? যদিও এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে যে করোনার মৃত্যুহার বেশ কম। ডেঙ্গুর বেলাতে কখনো কখনো মৃত্যুহার এর চাইতে বেশি। কিন্তু করোনার আতঙ্ক তৈরির ক্ষমতা বহুগুণ বেশি। কারণ শত্রু অদৃশ্য। ডেঙ্গু রোগীর সেবা করতে অপরজনের সমস্যা হয় না। কিন্তু করোনার প্রকোপ মানুষে-মানুষের হাত মেলানোকে বন্ধ করেছে। খুব খারাপ একটা দৃশ্য হতে পারে, দলে দলে মানুষ ঢাকা ত্যাগ করবেন। একটা বড় অংশের মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবেন, যেমন তারা যান ঈদের সময়ে। এমনিতেই ঢাকায় এখন কাজের সুযোগ খুব কমে গেছে গরিব মানুষের জন্য। রিকশা চালক বা গাড়িচালকরা অনেক কম আয় করছেন। আতঙ্ক তাদের একটা বড় অংশকে নগরছাড়া করবে। এদের একটা অংশ যদি সংক্রমণটাকে ঢাকার বাইরে নিয়ে যান, করোনা হবে দেশব্যাপী একটা মহামারী। আবারও, খুব কম মানুষ মারা যাবেন। কিন্তু আতঙ্ক ছড়াবে বহুগুণ বেশি। পুলিশ কিংবা চিকিৎসক-নার্স সমেত যারা সমাজকে চূড়ান্ত অরাজকতার হাত থেকে রক্ষা করবেন, যাদের কাছ থেকে মানুষ ভরসা আশা করবে মহামারী মোকাবেলায় তাদের সামর্থ্য নিয়ে যদি কোনো সংশয় তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে নাগরিকদের কিন্তু কিছু করবার আছে। সমাজের চরম অরাজকতায় তাদের পাশে দাঁড়ানোও কাজ হতে পারে, আবার তাদের শূন্যতা পূরণও কাজ হতে পারে। যেমন, সত্যিকারের মহামারীর বিস্তার দেশে ঘটলে অপ্রয়োজনীয গতিবিধি যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। কিন্তু এটাকে বাস্তবায়ন করতেই যদি রাষ্ট্র সামর্থ্য না হয়? অন্তত এক একটা জনপদকে বা পাড়াকে কোয়ারেন্টাইন করার মতো সামর্থ্য আমাদের দেশের যে নেই, তা তো খুবই স্পষ্ট তাই: প্রথম কাজটা করতে হবে তরুণদেরই। স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী বানাতে হবে, যদি প্রয়োজন হয়। মনে রাখতে হবে, এটা একটা যুদ্ধই, আর সব যুদ্ধের মতোই। সমাজকে তার মোকাবেলা করতে হবে। এবং এটা তরুণদের প্রধান কর্তব্য, সময়ের প্রয়োজনে সাড়া দেয়া। ততোটা তরুণ নই হয়তো, কিন্তু এই কাজে তরুণদের পাশে থাকতে চাই। করোনা ছড়ায় যেসব কারণে, সেগুলো নিয়ে মানুষকে আরও সতর্ক করতে হবে।

যাদের স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা, তাদের বাধ্য করতে হবে সামাজিক নজরদারির মাধ্যমে। ধুলোবালি, আবর্জনা করোনার বাহন হতে পারে, হাঁচি-কাশি দিতে মানুষকে বাধ্য করতে পারে। এগুলো সরিয়ে নিতে বাধ্য করতে হবে সিটি কর্পোরেশন আর তার ঠিকাদারদের। এমনকি বাড়ির সামনে নির্মাণকাজের বালু সিমেন্ট রাখাও ঠেকাতে হবে। প্রতিটি অঞ্চলে ও পাড়ায় এই নিয়ে টিম বানাতে হবে। এটা যদি স্থায়ী করা যায়, দেশের জন্য মঙ্গল ডেকে আনবে। যে সব অভ্যাস করোনা ছড়াতে পারে, সেগুলো নিয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সাবধান থাকার পাশাপাশি অন্যদের ওপর আরোপ করতে হবে। আক্রান্ত মানুষকে সেবা দানের সাহস রাখতে হবে। খারাপ পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে কর্মহারা/জীবিকাহারা মানুষদের যদি চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রয়োজন হয়, লঙ্গরখানা বা এই জাতীয় সেবার জন্য হয়তো প্রস্তুতি রাখতে হবে। দাবি করা যে, দায়িত্বপালনরত অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসক-পুলিশসহ অন্যান্য পেশার কারও মৃত্যু হলে রাষ্ট্র তার পরিজনের দায়িত্ব গ্রহণ করবে।

আমাদের দেশের পরিস্থিতি ইতালি বা চীনের ধারেকাছে হলে এখানে সামগ্রিক নৈরাজ্য নেমে আসবে। কারণ কোন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কোন বিশ্বাযোগ্যতা বা গ্রহণযোগ্যতা নাই। ফলে জনগণকেই প্রস্তুতি নিতে হবে বিকল্প আইনশৃঙ্খলা রক্ষার। এ সবই সবচেয়ে খারাপ সম্ভাবনাগুলোর পরিস্থিতিতে দূর পরিকল্পনা। আশা করবো তেমন কোন জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হবে না। কিন্তু মনে রাখবেন, দুর্যোগ যেমন অনাকাঙ্খিত, ঠিক তেমনি দুর্যোগ উৎরাবার এবং ভবিষ্যতে যেন দুর্যোগে না পড়তে হয় তার জন্য কাজ করবার মধ্য দিয়েই রাষ্ট্র-সমাজ-সভ্যতা অগ্রসর হয়। যারা এই কাজগুলো করবার জন্য শপথ নিয়েছে, রাষ্ট্র থেকে বেতন নেন, তারা যদি না পারে, যারা পারবে, তারাও এই দুর্যোগেই মানুষের সামনেই হাজির হবে। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়