মুনমুন শারমিন শামস : যৌনকর্মীর জীবন কোনো পেশাজীবীর জীবন নয়। এটি স্রেফ এক্সপ্লয়টেশন। পিতৃতান্ত্রিক পুঁজিবাদী সমাজ প্রতিটা যৌনকর্মীকে এক্সপ্লয়েট করে। তা সে স্বেচ্ছায় এ পেশায় আসুক বা না আসুক। পুঁজিবাদ যৌনকর্মীদের টিকিয়ে রাখবে। যতোদিন পুঁজিবাদ থাকবে, এই পেশাও থাকবে। এক্সপ্লয়টেশনও থাকবে। তাকে পতিতার বদলে যৌনকর্মী নাম দিয়েও সেই এক্সপ্লয়টেশন ঠেকানো যাবে না। আপনি মুখে বা কাগজে লিখবেন যৌনকর্মী, কিন্তু মনে মনে উচ্চারণ করবেন পতিতা, বেশ্যা, খানকি। যৌনকর্মীর জন্য জানাজা পড়া হয়েছে, এটা হয়তো একটা পরিবর্তন। কীসের পরিবর্তন? সেটা হলো ইমাম সাহেবরা পুলিশকে ভয় পাচ্ছেন, ভয় পেয়ে জানাজা পড়াইতে আসছেন। আবার পুলিশের মধ্যেও বদল আসছে। তারা ইমাম সাহেবকে নিয়ে আসছেন, জানাজা পড়াইতে বাধ্য করছেন। এই দুই ক্ষেত্রে পরিবর্তন ভালো, খারাপ নয়। এই ঘটনার পর হয়তো আরও যতো যৌনকর্মী মরবেন, তাদের বেশিরভাগেরই জানাজা হবে। এটা ভালো। আশা করা যায়। একসময় যৌনকর্মীরা স্যান্ডেল পায়ে হাঁটতে পারতেন না। এখন স্যান্ডেল-জুতা পরেন। তাদের ছেলেমেয়েরা বিশেষ স্কুলে পড়ে।
হ, পরিবর্তন বহুদিন থেকেই আসছে। এ সব ছোট ছোট পরিবর্তন আমাদের সুখী করছে। ঠিক যে রকম পতিতা নামের বদলে গালভরা যৌনকর্মী নাম। বহুকাল আগেই এই বদল আনা হয়েছে। তাতে পতিতার জীবনের পতন থামেনি। সমাজের মনের ভেতরে তাকে পতনের নি¤œতর স্তরে রাখা বন্ধ হয়নি। দশ বছরের মেয়েকে গরু মোটাতাজাকরণ ইঞ্জেকশন দিয়ে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা বন্ধ হয়নি। বাড়িতে এক বউ রেখে দৌলতদিয়ায় একজন পতিতাকে বিয়ে করে রেখে বছরে দুবার সতী স্বামীর আসা বন্ধ হয়নি। পতিতার অপেক্ষারও শেষ হয়নি। পতিতার সন্তানকে বেশ্যার বাচ্চা বলে আলাদা স্কুলে দেয়া বন্ধ হয়নি। পতিতার আট ফুট বাই আট ফুট ঘরে জীবন কাটায়ে হাজারটা যৌনরোগ নিয়ে মরা বন্ধ হয়নি। পতিতার শিশুকে দুই হাত দূরে উঠানে বসিয়ে রেখে খদ্দের নিয়ে পতিতা মায়ের ঘুপচি ঘরে কুচ্ছিৎ সেক্স বন্ধ হয়নি। সংসদ ভবনের পাশে মাত্র ৫০ টাকায় শরীর দেয়া বন্ধ হয়নি। জানাজা হচ্ছে। জানাজা আরও হবে। পতিতাবৃত্তির জানাজা কবে হবে, জানা যায়নি। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :