কামরুল হাসান মামুন : বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা এক বৈঠকে বসে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, আগামী বছর থেকে বাংলাদেশের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্র ভর্তি করা হবে। তার আগে আমাদের রাষ্ট্রপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে এই বিষয়ে আলোকপাত করেন। বিষয়টা যদি এমন হতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা নিজেরা যদি প্রসব বেদনার মতো করে অভিন্ন বা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কথা ভাবতেন তাহলেও বিষয়টার একটি ভিন্ন মাত্রা পেতো। তখন প্রমাণিত হতো যে আমরা শিক্ষকরা ছাত্রদের ভালোমন্দ নিয়ে ভাবি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আইডিয়াটা চাপানো। এ রকম চাপানো আইডিয়া ধারণ করে সফল কাজে রূপান্তর কঠিন।
আমাদের ইউজিসি বা ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশনের কাজ কী? তাদের কাজ হলো দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সরকারের কাছে দেন দরবার করে টাকা এনে প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে বণ্টন করা। তারা করছে কি? তারা কী লেবার দেনদরবার করছে? দেশের শিক্ষায় জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৬০০ কোটি টাকা বছরে বরাদ্দ দেওয়া হয় যেটা পৃথিবীর অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের বরাদ্দের চেয়েও কম। লজ্জা লাগে না? জীবনে কোনোদিন তো শুনিনি সরকারের কাছে বেশি বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন বা দেনদরবার করেছেন। ওইসব কাজ বাদ দিয়ে আপনারা লেগেছেন শিক্ষক নিয়োগ কেমন হবে, ছাত্র ভর্তি কীভাবে হবে এ সব নিয়ে মাথা ঘামাতে। জানেন নাকি এ সব কাজ পৃথিবীতে কারা করে? সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এটি আপনাদের কাজের আওতায় পড়ে না। এগুলো দেখবে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়।
অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা, অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা নীতিমালা ইত্যাদির চালুর চেষ্টার পেছনে গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যায়। এতোগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমন্বয় অত্যন্ত দুরূহ একটি ব্যাপার হবে। কাজটি যতো বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়া হবে প্রশ্ন ফাঁসের মতো যেকোনো ঘটনার ফলাফল ততো ভয়াবহ হবে। বিভাগের মাধ্যমে পরীক্ষা হলো সারা পৃথিবীতে ব্যাপকভাবে পরীক্ষিত একটি ব্যবস্থা। হ্যাঁ ইউরোপ-আমেরিকায় ঝঅঞ নামক একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়, কিন্তু সেটি করা হয় যেহেতু সেখানে সারাবিশ্ব থেকে বিভিন্ন মানের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা দরখাস্ত করে এবং তাদের সার্টিফিকেটের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকে সে জন্য। আমাদের এখানে তো সেই সমস্যা নেই।
আমাদের ইউজিসি সরকার এবং মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যদিও এটি একটি স্বাধীন কমিশন। কাজীর গরু কেতাবে থাকলেও গোয়ালে নেই। এ রকম একটি প্রতিষ্ঠানকে যদি সমন্বয়ের ভূমিকায় দেওয়া হয় পুরো প্রক্রিয়াটি ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা জানি ইউজিসির সদস্য থেকে শুরু করে এর সচিব ও তাদের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির খবর। বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়েও কোনো সমস্যা ছিলো না। কিন্তু শিক্ষকদের নিয়োগ ও প্রমোশন নিয়ে যতোই দলীয়করণ হবে ততোই এই সমস্যা মাথাছাড়া দিয়ে উঠছে। এটা একটা ইউটোপিয়ান আইডিয়া যা শুনতে ভালো শোনায়। আর এটাকে পুঁজি (ছাত্রছাত্রীদের সমস্যাকে) করে এ রকম সিদ্ধান্ত পরিশেষে সমস্যা আরও অনেক জটিল করে তুলবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :