চিররঞ্জন সরকার : এই রায়ে অনেক কিছুই বদলাবে না ঠিক, কিন্তু নৈতিকভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং তাদের আশ্রয়প্রদানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ নতুন করে ভরসা খুঁজে পাবে। রোহিঙ্গাদের জাতিগত নির্মূলকরণ ও গণহত্যার বিপদ থেকে সুরক্ষার দাবিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) দ্বারস্থ হওয়া গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশকে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ নিপীড়ন ও বঞ্চনার অবসানের পথে একটি ছোট পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা জানি, এই আদেশ এক দিনে রোহিঙ্গাদের জীবন বদলে দেবে না। তবে এটি একটি প্রক্রিয়ার সূচনা, যার মাধ্যমে আমরা আশা করি, একদিন তারা নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে রাখাইনে ফিরে যেতে পারবেন’। এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে মিয়ানমারের দায়িত্ব হচ্ছে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে দেশে ফেরার ব্যবস্থা নেওয়া এবং রাখাইনে উপযুক্ত ও সহায়ক পরিবেশ তৈরির দিকে নজর দেওয়া। এ জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব হচ্ছে মিয়ানমারকে জবাবদিহির আওতায় আনা। পাশাপাশি সংকট নিরসনে মিয়ানমার যাতে দায়িত্বে অবহেলা না করে তা নিশ্চিত করা।
আইসিজের আদেশটি মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করেছে। সামনের দিনগুলোতে নিরাপত্তা পরিষদ যদি এ বিষয়ে নির্বিকার থাকে তাহলে সেটা কার্যত সমগ্র জাতিসংঘ ব্যবস্থা এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা হবে। আইসিজের আদেশ অমান্য করতে পারে, এমন অন্য কোনো শ্রেয়তর সংস্থার অস্তিত্ব জাতিসংঘ ব্যবস্থায় নেই। আদালতের এই আদেশ যদি মিয়ানমার না মেনে চলে, তাহলে সেটা মিয়ানমারই শুধু নয়, নিরাপত্তা পরিষদ এবং জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলো যারা মিয়ানমারের সঙ্গে নানাভাবে সম্পর্ক রক্ষা করে চলবে তাদের সবার উপরই দায় বর্তাবে। এটা জাতিসংঘের সনদ এবং একটা সাধারণ ও আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে দেখা দেবে। কাজেই আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে একটি নতুন সূচনা হিসেবে দেখতে হবে। আগামী দিনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চীন-রাশিয়ার ভূমিকা যেন পরিবর্তিত হয় এই লক্ষ্যে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। ফেসবুক থেকে