হাসান শান্তুনু : শাবানা বাঙালি মুসলমানের ‘শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী’। যে কাজের জন্য তিনি এক বা প্রায় দুই দশক আগে সৌদি গিয়ে হজসহ তওবা করেন, সেই কাজের জন্য বছর দেড়েক আগে ‘আজীবন সম্মাননা’ পুরস্কারও নেন। যেখানে তওবা লাগে, সেই কাজের জন্য পুরস্কার নেওয়া শাবানার জন্য ‘জায়েজ’ হলে বাউল শিল্পী শরীয়ত বয়াতি বক্তব্য দিয়ে কারাগারে যাবেন কেন, এ প্রশ্নের উত্তর ‘আধা সরকারি’ ও পুরো সরকারি মৌলবিদের কাছ থেকে এখনো মেলেনি। ঢাকার সিনেমাপাড়ার পপি দাবি করেছিলেন, ‘মুসলমান ঘরের মেয়েদের হাত পর পুরুষের হাতে রাখা নাজায়েজ’। পর্দায় কয়েকশ পুরুষের হাতে হাত রাখা পপি অবশ্য নিজের বিষয়ে কিছু বলেননি। সিনেমাপাড়ায় আজকাল তেমন চাহিদা না থাকা এ নায়িকা কথিত ওই বক্তব্যের পরও পরপুরুষের হাতে হাত রেখে দু’য়েকটা সিনেমায় নেচেছেন, প্রেম ভালোবাসাবাসি করেছেন। তবু তার কী দারুণ উপলব্ধি। ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের দেশে মুসলমানদের অভিনেত্রী’ বলে কথা। শুধু সিনেমাপাড়াতেই নয়, ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে, আচরণে, কর্মে, সুবিধা আদায়ের রাজনীতিতে বাঙালি মুসলমানের দ্বিচারিতা, ভ-ামি প্রমাণিত, প্রতিষ্ঠিত সত্য। রাষ্ট্রপিতা (ফাউন্ডিং ফাদার অব দ্য নেশন) বঙ্গবন্ধুর আমলে যে অধ্যাপক ‘নাস্তিক’ ছিলেন, উর্দি শাসক জিয়ার আমলে সেই শিক্ষকের গাল, ঠোঁটের উপর চুল গজিয়ে ও মাথায় টুপি বসিয়ে ‘পাক্কা ঈমানদার’ হয়ে রাষ্ট্রীয় সুবিধা নেওয়ার কথা লেখক আহমদ ছফা জানিয়ে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের বদলে ‘হিন্দু ভারত’ গড়ার দিকে হাঁটছে। দেশটির অসাম্প্রদায়িক সংবিধান মুছে দিয়ে সরকার ‘মনুস্মৃতি’র ভিত্তিতে নতুন করে শাসনতন্ত্র লিখতে চাচ্ছে কি না, এ প্রশ্নও কেউ কেউ করছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের চোখে বেদের পর সবচেয়ে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ মনুস্মৃতি। মোদীর সরকারের গেরুয়াকরণ নিয়ে বাংলাদেশের মুসলমান, মওলানা-মৌলবিরা তীব্র উত্তেজিত। সঙ্গে তাদের দ্বিচারিতাও নিলর্জ্জ রকমে প্রকাশ্য।
মোদীর সরকার দেশটির সংবিধান সংশোধন করলে সেখানে মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে উঠার শঙ্কায় এ দেশীয় মৌলভী, মৌলবাদমনস্ক মধ্যবিত্ত শ্রেণির মুসলমানরা জেহাদি জোশে উত্তেজনা দেখাচ্ছেন। অথচ এ দেশের সংবিধানে এক ফৌজি শাসক ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ যোগ করে সংখ্যালঘুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানালে সেই শাসককে তারা ‘বিশেষ ইমামের’ মর্যাদা দেন।১৯৮২ সালে প্রণীত বার্মিজ নাগরিকত্ব আইন অনুসারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করে মিয়ানমার। ওই আইনের বিরুদ্ধে এ দেশের যতো মুসলমান সরব, প্রায় একই সময়ে এ দেশের সংবিধানকে সামরিক শাসকের ‘মুসলমান’ বানানোর জঘন্য কা-ে তারা তেমনই নীরব। যা আমাদের সেই নির্মম সত্যের মুখোমুখি করেÑ ‘রাজনৈতিক ইসলামকে (পলিটিক্যাল ইসলাম) কেন্দ্র করে গড়া উঠা সমাজ বহুত্ববাদ ধারণ করতে পারে না। শুধু দ্বিচারিতাকে মুখ ও মুখোশ করে টিকে থাকে। ফেসবুক থেকে