কামরুল হাসান মামুন : বেসিক ব্যাংকের ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে কানাডায় নাহিদ-মিঠু দম্পতি। ‘প্রশান্ত কুমার ৩৫০০ কোটি টাকা নিয়ে চম্পট’। ‘বেগম পাড়ার সাহেব ও দেশ বিক্রির কচ্ছপেরা’ প্রথম আলো এইবার একটি দৈনিকে প্রকাশিত কয়েকজনের কাহিনি তুলে ধরবো (পঁঃ ধহফ ঢ়ধংঃব)। তাহলেই বুঝতে পারবেন কিছু অসভ্য মানুষ যারা এই দেশে জন্মে, এই দেশের আলো বাতাস খেয়ে বড় হয়ে, এই দেশের সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় পড়াশোনা করে এই দেশের অর্থনীতিকে ধর্ষণ করে মালয়েশিয়ায় কিংবা কানাডার বেগম পাড়ায় দ্বিতীয় হোম বানাচ্ছে। ১. বাঙালি পাড়া হিসেবে খ্যাত ডেনফোর্থেই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ। ঠিক কে যে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মনে করতে পারছি না। ‘তিনি চাঁটগাইয়া’ এভাবেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন কেউ একজন। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি সেই হিসেবে অনেকেই আমাকে চাটগাইয়াই ভাবেন। ভদ্রলোক কথা শুরু করলেন চাটগাইয়া বাংলায়। দু-এক মিনিট না যেতেই রাস্তার উল্টা দিককার ফিটনেস ক্লাবটা দেখিয়ে জানতে চাইলেন, এর মালিক কে জানেন? পর মুহূর্তেই বললেন, আমি এই বিল্ডিংটা কিনবো। আমি হতবিহ্বলের মতো তার দিকে তাকিয়ে থাকি। এই বিশাল বিল্ডিংটা তিনি কিনতে চান। অথচ তিনি বলছিলেন, তিনি ক’দিন হয় মাত্র কানাডায় এসেছেন। কীভাবে সম্ভব।
কয়েকদিনের মধ্যেই জানা হয়ে যায়, চট্টগ্রামের কোনো ব্যাংক থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা মেরে তিনি কানাডায়। ব্যাংকের মামলায় তার নামে ওয়ারেন্ট হয়েছে এমন কথাও শোনা যায়। টরন্টোয় চলতে ফিরতে যা দেখেন সব কিছুই কিনে ফেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। ২. ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতি থেকে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে আসা এই ভদ্রলোক কানাডায় পা দিয়েই বন্ধু-শুভাকাক্সক্ষীদের ‘যোগ্যতাকেই’ চ্যালেঞ্জ করে বসলেন। ‘এতো বছর কানাডায় থেকে আপনারা কি করেছেন’? তার এই প্রশ্নে বন্ধুরা যেন অসহায় হয়ে পড়ে। বুকটাকে টান টান করে তিনি ঘোষণা দেন কানাডার ব্যাংকারদের আমি ঘুষ খাওয়া শিখাবো। বাংলাদেশের ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে হয় না। কানাডায়ও সেটা আমি চালু করবো। ব্যাংকের টাকা নিয়ে ফেরত দিতে হবে না।
৩. দুটো ঘটনার উল্লেখ করলাম উদাহরণ হিসেবে। বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা লুটপাট করে কানাডায় এসে কানাডাকেও ‘বাংলাদেশ বানিয়ে ফেলার’ স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন তারা। নানা অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে আলোচিত অনেকেই কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন বলে শোনা যায়। ডেস্টিনির দুর্নীতির টাকার বড় অংশই টরন্টোয় বলে গুঞ্জন আছে। দুদক কর্তৃক দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞায় থাকা একটি টিভি চ্যানেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার পরিবারের সদস্যদের টরন্টোয় রেখে গেছেন বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচারের অভিযোগ করেছে দুদক। তিনি কী শুধু পরিবারের সদস্যদের রেখে গেছেন টরন্টোয়? ‘মুদ্রাটুদ্রা’ রেখে যাননি? ডিআইজি মিজানের ‘পরিবার’ এখন টরন্টোয় থাকে বলে আলোচনা আছে। এভাবে তালিকা করলে সেই তালিকাটা অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে। এ রকমভাবে অর্থনৈতিক ধর্ষণের পরও টিকে আছে আমার দেশটি। আমার সরকার যেমন নারী ধর্ষকদের ঠিকমতো আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ, ঠিক তেমনি ব্যর্থ এই অর্থনৈতিক ধর্ষকদের আইনের আওতায় আনতে। কারণ তারা তারাই যে। ফেসবুক থেকে