দেবদুলাল মুন্না: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দুবছর আগেই এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান আর এন কাও সেসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে জানিয়েছিলেন। কাও তখন ইন্দিরা গান্ধীকে বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে ভারতের স্বার্থেই বাংলাদেশের পক্ষে দাড়াতে হবে। নাহলে চীনাপন্থীদের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে। এ তথ্য জানিয়েছে সাউথ এশিয়ান মনিটর।
রিপোর্টে বলা হয়, ১৯৬৯ সালের এপ্রিলে একটি গোয়েন্দা ক্যাবলে আর এন কাও সীমান্তজুড়ে আসন্ন সঙ্কটের পূর্বাভাস দেখতে পেয়েছিলেন। সেসময় ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার কৃষ্ণা আচার্য তাকে জানিয়েছিলেন পাকিস্তান যদি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ দমন করতে পারে তবে বাংলাদেশে চীনের প্রভাব বাড়বে যা ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরুপ। সেজন্য ভারতের উচিৎ হবে পশ্চিম পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে দাড়ানো। কাওয়ের এই মূল্যায়ন সমর্থন করেন সেসময়কার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা অশোক রায়।
তিনি বলেছিলেন, বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ভারতের স্বার্থকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। কাও ও অশোক রায়ের দৃষ্টিভঙ্গিই ইন্দিরা গান্ধী গ্রহণ করেছিলেন। এদিকে ঘটনাপ্রবাহ কাওয়ের ধারণাও সঠিক বলে নিশ্চিত করে। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো নতুন সংবিধান গঠনে আওয়ামী লীগের সাথে আলোচনার সম্ভাবনা বাতিল করে দিয়ে ঘোষণা করেন যে তার দল নতুন জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেবে না। ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করেন। ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়ে মুজিবুর রহমান অসহযোগিতা আন্দোলনের আহ্বান জানান। এতে পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে জনগণ উদ্দীপ্ত হয়। আর ইন্দিরা গান্ধী ২ মার্চ মন্ত্রী পরিষদ সচিব পি এন হাকসার, আর এন কাও, টি এন কাউল ও স্বরাষ্ট্রসচিবকে নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারতের সহযোগিতার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রভাব সম্পর্কে মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে বলেন। র’-এর প্রধান তখন হাকসার ও প্রধানমন্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে পূর্ব বাঙলার স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারতের উচিত হবে দ্রুত সহায়তা করা। পরে ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মিত্র শক্তি হিসেবে সাহায্য করে।
আপনার মতামত লিখুন :