শিরোনাম
◈ আবারও মে‌সির জোড়া গোলে ইন্টার মায়ামির জয় ◈ এখন থেকে আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নাম থাকবে না: জ্বালানি উপদেষ্টা ◈ ‘তুমি কেন ফুয়েল কেটে দিলে?’ ভারতীয় বিমান বিধ্বস্তের আগে পাইলটদের শেষ ককপিট ভয়েস রেকর্ডিং ◈ দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসীদের জন্য সুখবর: মৃত্যু হলে লাশ দেশে পাঠাবে সরকার, ক্ষতিপূরণ মিলবে বীমার আওতায় (ভিডিও) ◈ বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হতে যাচ্ছে ভারত: পিউ রিসার্চ ◈ বেপরোয়া বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ছয় মাসে নিহত ৪৩ ◈ স্প‌্যা‌নিশ ক্যাবরেরাই থাক‌ছেন বাংলা‌দেশ ফুটবল দ‌লের কোচ ◈ সন্ধ‌্যায় নেপালের বিরু‌দ্ধে লড়াই‌য়ে নাম‌ছে বাংলা‌দে‌শের মে‌য়েরা ◈ ঢাকায় হবে এশিয়া কাপের সভা, ভারত অংশ নে‌বে না ◈ এবার যে কারণে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করলেন ড. ফয়জুল হক

প্রকাশিত : ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০৭:৪৮ সকাল
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০৭:৪৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ভিডিও কনটেন্টের চাহিদা আকাশচুম্বী

আরিফ জেবতিক : ফেসবুকে এখন আমার একটা বিনোদন হচ্ছে ওয়াচে গিয়ে নানা কিসিমের ভিডিও দেখা। দেখেটেখে যা বুঝলাম, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ভিডিও কনটেন্টের চাহিদা আকাশচুম্বী। এই কনটেন্ট মার্কেট একতরফাভাবে দখল করে রেখেছেন আমাদের হুজুররা। কোনো ওয়াজই পেলাম না যেখানে হাজারের নিচে কমেন্ট আছে, দশ হাজারের নিচে লাইক আছে। এতেই বোঝা যায় কী বিপুল সংখ্যক মানুষ অনলাইন ভিডিওতে অভ্যস্ত হয়েছেন।

গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে যা বুঝলাম, হুজুরদের মধ্যে এই কনটেন্ট মার্কেট দখল নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা চলছে। যার কারণে অনেকেই একে অপরের বিরুদ্ধে লেগে আছেন, ট্রল করছেন। যেমন আজহারী বলেছেন রাসূলের (সা.) সিক্সপ্যাক শরীর ছিলো, এটা নিয়ে তাকে গালাগালি করে ওয়াজ করছেন আরও কয়েক হালি হুজুর। তাহেরি হুজুর (বিখ্যাত চা খাবেন, ঢেলে দিই... ডায়লগের জন্মদাতা) এর বিরুদ্ধেও অনেকে আছে, আবার তাহেরি হুজুর নিজের পক্ষেও জোরদার ভূমিকা রেখে চলছেন।

ইন্টারেস্টিং একজন আছেন, উজানির পীর সাহেব, তার ওয়াজের সময় কিছু লোক পাগল হয়ে যায়। পরম জজবায় তারা পীর সাহেবকে জড়িয়ে ধরে চুম্মাচাটি খেতে চায়, কাপড়-চোপড় ধরে টানাটানি করে। কী একটা অবস্থা। এই ভক্তরা আসলেই বাতেনি ভক্ত নাকি ভ- সেটা নিয়ে কমেন্টের পর কমেন্ট ঝগড়াঝাঁটি চোখে পড়ে। সব মিলিয়ে একটা উত্তেজনাকর অবস্থা। ফেসবুকের পোস্ট থেকে এই উত্তেজনা পাওয়া সম্ভব নয়, সেটা একমাত্র ভিডিওই দিতে পারে। তবে এর মাঝে একটি সূক্ষ্ম রাজনীতি চোখে পড়লো। সেটি হচ্ছে ওয়াজের সিজন ঘিরে জামায়াতি বক্তারা ধীরে ধীরে মানুষকে উত্তেজিত করার একটা চেষ্টা করছে সারাদেশজুড়ে। তারা যে কাজটি করছে সেটি হচ্ছে প্রথমে কোরআন-হাদিস থেকে ভালোভালো কথা বলে ওয়াজ করছে। যখন লোকজনের জজবা তৈরি হচ্ছে, তখনই কৌশলে সাঈদীর কথা বলা শুরু করে।

সাঈদীর কথা বললে অবধারিতভাবেই সেখানে ওই এলাকার নেতা টাইপের যারা আছে তারা প্রতিবাদ করেন। কারণ এখন তো নেতা বলতেই আওয়ামী লীগ, এলাকার প্রভাবশালী মানেই সবাই আওয়ামী লীগ। সুতরাং তারা তাদের রাজনীতির জন্যই এখানে আপত্তি তোলে। কিছু কিছু জায়গায় লোকাল থানার পুলিশ এসেও বাধা দিচ্ছে। এই বাধার সঙ্গে সঙ্গেই বক্তারা অত্যন্ত জোশে, ‘কোরআনের কথা বলতে বাধা দেয়া যাবে না। যারা বাধা দেয়, তারা আল্লাহর দুশমন, নবীর দুশমন’ এ রকম করে বড় করে হাউকাউ তৈরি করে মঞ্চে। তখন ওয়াজ শুনতে আসা জনগণও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে।

অনেকগুলো ভিডিও দেখে বুঝলাম যে, এই রাজনীতি বেশ জোরেশোরে শুরু হয়েছে। ‘দেখুন কীভাবে প্রশাসন বাধা দিলো ওয়াজ মাহফিলে’ এমন শিরোনামের ভিডিওতে অনলাইন সয়লাব। জামায়াতি কিছু নতুন নতুন বক্তা দেখলাম, তারা ভালোই বলে। সম্ভবত জামায়াতি নেতা তারিক মুনওয়ারও এই সিজনে দেশে এসেছে, একটা ওয়াজ দেখে মনে হলো এটা এ বছরের ওয়াজ সম্ভবত, পুরনো নয়। তো এই যে কনটেন্ট মার্কেট টেক্সট থেকে ভিডিওতে শিফট হয়ে যাচ্ছে, এটি কয়জনের চোখে পড়েছে জানি না। প্রগতিশীলদের মধ্যে সুলতান মির্জাকে দেখেছি অনেকদিন ধরে ভিডিও কনটেন্ট বানাতে, আর কাউকে তেমন চোখে পড়েনি। অনলাইনে বাংলা আসার পর পর এর প্রভাব সম্পর্কে প্রথমে যে রাজনৈতিক শক্তিটি সচেতন হয়, সেটি হচ্ছে জামায়াত। তারা বাংলা ব্লগে একচেটিয়া দাপট দেখানো শুরু করে। এর বিপরীতে আমরা প্রবল বেগে নেমেছিলাম।

সুবিধা ছিলো, বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি মোটাদাগে জামায়াতবিরোধী এবং টেক্সট তৈরি বা লেখালেখিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণিই এগিয়ে আছে। তাই ব্লগ জগতে জামায়াতিরা আমাদের সঙ্গে পেরে উঠেনি। সেই ধারাবাহিকতায় শাহবাগ এসেছে। ২০১৫-১৬ সাল পর্যন্ত রাজাকারদের ফাঁসি দেয়ার ক্ষেত্রে সেই অনলাইন এক্টিভিজম বড় আকারে ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু ভিডিও কনটেন্টের বেলাতেও দেখা যাচ্ছে যে জামায়াতিরা এটিকে বেশ ভালোভাবে ব্যবহার শুরু করেছ। ভিডিও কনটেন্টের শক্তি টেক্সটের চাইতে অনেকগুণ বেশি। লেখালেখি দিয়ে একেবারে তৃণমূলের গ্রামে-গঞ্জে পৌঁছানো যতোটা কঠিন, ভিডিও কনটেন্ট দিয়ে ততোটাই সহজ। সুতরাং ভিডিও সুনামি আরও বড় আকারে আসবে। ভিডিও কনটেন্ট তৈরির এই রাজনীতিতে জামায়াতিদের পাল্টা বয়ান তৈরির জন্য কি এই প্রজন্মের এক্টিভিস্টরা প্রস্তুত? দেখে তা মনে হলো না। অবশ্য টেক্সটের রাজনীতি যখন নির্মিত হয়, তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিলো না। রাজাকারবিরোধী আন্দোলনটা জনগণের আন্দোলন ছিলো। সেই নিঃস্বার্থ প্রেমটা বোধহয় এখন আর নেই। এখন অনলাইনে সব আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে। সবাই ক্ষমতাসীনদের সহমততুতো ভাই। গ্রামে-গঞ্জে জামায়াত যে নতুন জাল বিছানো শুরু করেছে, এই সহমততুতো বলদরা সেই জালে প্যাঁচ খেয়ে পুঁটি মাছের মতো তড়পাবে, আমার কেন জানি তেমনই মনে হলো। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়