অঞ্জন রায় : সেই কিশোর যার ফাঁসি হওয়ার দিনে বয়স ছিলো ১৮ বছর ৭ মাস ১১ দিন। উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের কনিষ্ঠতম এই বিপ্লবী কিশোর প্রফুল্ল চাকির সঙ্গে মিলে ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে বোমা ছুড়েছিলেন। ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড অন্য একটা গাড়িতে বসেছিলেন যে কারণে সে বেঁচে গেলেও দুজন ব্রিটিশ মহিলা বোমায় নিহত হন। রংপুরে জন্ম নেয়া প্রফুল্ল চাকি গ্রেপ্তারের আগেই আত্মহত্যা করেন। ক্ষুদিরাম গ্রেপ্তার হন। আদালত কিশোর ক্ষুদিরামকে ফাঁসির আদেশ দেয়।
ঐতিহাসিকরা লিখেছেন, ফাঁসির সাজা ঘোষণা শুনে বীর কিশোর ক্ষুদিরাম হেসেছিলেন। ফাঁসির সময়ে তাকে মুখোশ পরানোর সময়েও তার মুখে ছিলো সাহসের সেই হাসি। তার ফাঁসির পর ব্রিটিশ পত্রিকা ‘এম্পায়ারে’ প্রকাশিত প্রতিবেদনের একটি লাইন ছিলো ‘নিথর মৃতদেহ। কিন্তু মুখের হাসি সেই হাসি।’ ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ইতিহাস বলে গোটা উপমহাদেশ ক্ষুদিরামের এই মৃত্যুতে উত্তাল হয়ে উঠলেও মহাত্মা গান্ধী ক্ষুদিরামকে সর্মথন করেননি, ইংরেজদের বিরুদ্ধে হিংসাকে নিন্দা করে, দুজন নিরপরাধ মহিলার মৃত্যুতে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে গান্ধী বলেছিলেন ‘ভারতীয় জনগণ এই পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে পারবে না’।
অবশ্য গান্ধীর অহিংস পথ আর অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের পথ একদমই আলাদা ছিলো, সে কারণেই তার কাছে এমন মূল্যায়নই তো স্বাভাবিক। আর গান্ধী ও ক্ষুদিরাম দুজন ইতিহাসের নিজ নিজ অবস্থানেই সম্মানিত হয়ে আছেন।
একটু অন্যদিকে তাকাই সেই অতীত থেকে বাঙালির ইতিহাসে ঘাতকেরা বারবার আগস্টকেই বেছে নিয়েছিলো দেশপ্রেমিকদের হত্যার জন্য। ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট ব্রিটিশ ঘাতকেরা ফাঁসির মাধ্যমে খুন করেছিলো কিশোর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুকে। ইতিহাস হয়ে আছে সেই গান ‘একবার বিদায় দে মা, ঘুরে আসি’। একইসঙ্গে কোটি দেশপ্রেমিকের সাহসের প্রতীক হয়ে আছে ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসির মঞ্চে বীরের মুদ্রায় হেঁটে উঠে যাওয়া। পরবর্তীতে সেই পথ ধরে অজস্র রক্তপাত মৃত্যু-অচল আধুলির মতো অপরাষ্ট্র পাকিস্তানের জন্ম-ইতিহাসের অনিবার্য স্লোগান ‘ইয়ে আজাদী জুটা হ্যায়, লাখো ইনসান ভুখা হ্যায়।’ ইতিহাস থেমে থাকেনি, নিরন্তর লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় জনকের উত্তোলিত তর্জনী বেয়ে নেমে আসে স্বাধীনতা। শ্রদ্ধা, ভালোবাসা অগ্নিযুগের কিশোর শহীদ ক্ষুদিরাম বসু। ফেসবুক থেকে