সুজন কৈরী : রাজধানীতে বিনা অপরাধে সাজা পেতে যাচ্ছিলেন কামাল হোসেন নামের এক মোটরসাইকেল মেকানিক। একটি মাদক মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামির সঙ্গে নাম ও বাবার নামের মিল থাকায় কামালকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। তবে ভুল আসামি ধরার সত্যতা পাওয়ায় থানার ওসির নির্দেশে নিরীহ ওই মোটর মেকানিককে ছেড়ে দেয়া হয়। ফলে অল্পের জন্য নতুন করে জাহালম কাণ্ড থেকে বেঁচে যান মোটর সাইকেল মেকানিক কামাল হোসেন।
এদিকে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। সোমবারের মধ্যেই কমিটি প্রতিবেদন দেবে বলে জানা গেছে। আর অভিযুক্ত মোহাম্মদপুর থানার এএসআই পদমর্যাদার দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে ক্লোজড করা হয়েছে। তারা হলেন- জাকারিয়া ও আলমগীর।
জানা গেছে, গত ৩০ আগস্ট বিকেলে মোহাম্মদপুরের শ্যামলী রিং রোডের বাদশাহ ফয়সাল ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গলিতে তল্লাশি চালিয়ে মোহাম্মদপুর থানার এএসআই জাকারিয়া মাদক মামলার আসামি উল্লেখ করে মেকানিক কামাল হোসেনকে আটক করেন। এ সময় বারবার নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও কামালকে থানায় নিয়ে আটকে রাখে পুলিশ।
মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের একটি মাদক মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামির নাম মো. কামাল। বাবার নাম মনির। নিরীহ কামাল হোসেনের বাবার নামও মনির হোসেন। শ্যামলীর রিং রোডে কামাল হোসেনের নিজের একটি মোটরসাইকেল গ্যারেজ রয়েছে। এলাকায় মোটর মেকানিক হিসেবেই পরিচিত তিনি। কামালকে থানায় নেয়ার পর পুলিশ যাচাই করে দেখে আসামি কামালের জন্ম ১৯৮২ সালে। আটক কামাল হোসেনের জন্ম ১৯৮৭ সালের ২৬ নভেম্বর। আসামি কামালের মায়ের নাম, জন্মসাল, এলাকা ও পেশার সঙ্গে আটক কামাল হোসেনের মায়ের নাম, জন্মসাল, এলাকা ও পেশার মিল নেই। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ডিএমপির কোনো থানায় মামলা বা সাধারণ ডায়েরিরও নেই। শুধুমাত্র আসামির সঙ্গে নাম ও বাবার নামের মিল থাকায় তাকে আটক করে থানায় নেয়া হয়। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই শেষে থানার ওসির নির্দেশে শুক্রবার রাতেই তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। ছাড়া পেলেও একদিন পর রোববার রাতে মেকানিক কামালের গ্যারেজে হাজির হন অভিযানে অংশ নেয়া মোহাম্মদপুর থানার আরেক এএসআই আলমগীর।
মেকানিক কামাল হোসেন বলেন, আমাকে শুক্রবার এএসআই জাকারিয়া থানায় নিয়ে যান। রোববার জাকারিয়ার বন্ধু পরিচয়ে মোহাম্মদপুর থানার আরেক এএসআই আলমগীর আমার কাছে বলেন, মামলা খারিজ পেতে বা মামলা থেকে আমার নাম বাদ দিতে চাইলে পুলিশকে খুশি করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে আমাকে ঝামেলা পোহাতে হবে। আমি তাকে বলেছি, আপনারা মূল আসামি ধরেন। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে তার ও আমার এনআইডি নিয়ে মিলিয়ে দেখেন। তাহলেই ভুলটি কোথায় তা বুঝতে পারবেন। দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের কারনে আমি আরেক জাহালাম হওয়ার হাত থেকে বেচেঁ গেলাম বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি আনিসুর রহমান বলেন, ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওই দুই পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড (প্রত্যাহার) করে ডিসি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া মোহাম্মদপুর জোনের এডিসি ওয়াহেদুল ইসলামকে ঘটনাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি তদন্ত করে সোমবারের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। তদন্তে দোষি প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত দুই পুলিশ সদস্যের বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এডিসি ওয়াহেদুল ইসলাম বলেন, আসামির নামের সঙ্গে মিল থাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। সোমবার রাতে বা মঙ্গলবার সকালে প্রতিবেদন দেয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :