লিহান লিমা: গত মে মাসে তিউনেশিয়ার উপকূল থেকে উদ্ধারকৃত বাংলাদেশি শরণার্থীদের দেশে ফেরত আসছে চাপ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে জাতিসংঘ অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) বিরুদ্ধে। আইওএম বাংলাদেশি অভিবাসীদের স্বেচ্ছায় দেশে প্রত্যাবসন নথিতে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছে। দ্য গার্ডিয়ান
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিষয়টি নিয়ে আগস্টে আইওএম এর বিরুদ্ধে অনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছে তিউনেশিয়া ভিত্তিক এনজিও ‘তিউনেশিয়ান ফেরাম ফর ইকোনোমিক এন্ড সোশ্যাল রাইট’ (এফটিডিইএস)। অভিযোগে বলা হয়েছে, আইএমওর কূটনৈতিক ও কর্মকর্তারা ৬৪ বাংলাদেশি অভিবাসীকে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবসন নথিতে স্বাক্ষর করতে চাপ প্রয়োগ করেছেন এবং গ্রেপ্তারের ভয় দেখাচ্ছেন।
মে মাসে ম্যারিডাইব ৬০১ নামের একটি জাহাজ থেকে এই অভিবাসীদের উদ্ধার করা হয়। কিন্তু কোনও ইউরোপীয় দেশ তাদের গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে সাগরে তারা প্রায় তিন সপ্তাহ আটকে পড়েছিলেন। পরে জুনে তিউনেশিয়ার রেড ক্রিসেন্ট তাদের আশ্রয় দেয়। ইতোমধ্যে ৫৩জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। দুই জন পালিয়ে গিয়েছেন। এর মধ্যে এক কিশোর লিবিয়ার ডিটেনশন কেন্দ্রে রয়েছেন।
বাকি ৯ জন অভিবাসী সাক্ষাৎকারে বলেছেন, উদ্ধারের পর থেকেই বাংলাদেশি অভিবাসীদের তিউনেশিয়ার রেড ক্রিসেন্ট হাউজিং নানা হুমকি দিয়ে আসছে। তারা বলছে তিউনেশিয়ার পুলিশ আমাদের গ্রেপ্তার করবে এবং কবে ছাড়বে তার কোন ঠিক নেই। বাংলাদেশ ও তিউনেশিয়ার কোন সরকারই আমাদের সাহায্য করবে না। আরেকজন বলেন, সবাই আমাদের বলছে সিদ্ধান্ত নিতে। সংখ্যালঘু, ইউএনএইচসিআর বা অভিবাসী কি আমি জানি না। তারা আমাদের ফরাসী ভাষায় লেখা একটি কাগজ স্বাক্ষর করতে বলে। কিন্তু ভাষা না জানায় আমরা ওই কাগজে স্বাক্ষর করি নি। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে ফিরলে আমাদের জীবন হুমকি ও নির্যাতনের মুখে পড়বে। কারণ আমরা অনেক টাকা ধার করে এসেছি।
তিউনেশিয়া ভিত্তিক এনজিওটি জানায়, বাংলাদেশ দূতাবাসের কূটনীতিকরা তাদের বলেছেন স্বেচ্ছায় ফিরে না গেলে তারা অঙ্গপাচারের শিকার হতে পারেন। তবে বাংলাদেশি অভিবাসীদের দেশে ফেরত যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার কথা অস্বীকার করে আইওএম বলছে, অভিবাসীদের সব ধরনের বিকল্প দেখানো হয়েছে। তিউনিসিয়ার দায়িত্বে থাকা ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাসের এক মুখপাত্র জানান, দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগটি গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়েছে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে নিজেরা তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই। তবে যদি তা ঘটে তাহলে ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় অভিযোগ খতিয়ে দেখবে।
এফটিডিইএস বলেছে, স্বেচ্ছায় দেশে ফেরত যাওয়ার কাগজে স্বাক্ষর না করা ও তিউনিসিয়ায় থাকতে আগ্রহী চার বাংলাদেশিকে গত সপ্তাহে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :