শিরোনাম
◈ রোববার থেকে আবার গাউন পরতে হবে আইনজীবীদের ◈ সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে বাধা নেই: ডেপুটি গভর্নর ◈ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কেউ যেন বৈষম্যের শিকার না হন: রাষ্ট্রপতি ◈ দেশের জিডিপির পূর্বাভাস কমালো জাতিসংঘ, চিন্তা মূল্যস্ফীতি নিয়ে ◈ আমি ইন্ডিয়া জোটেই আছি: মমতা  ◈ হিজবুল্লাহ’র হামলায় ইসরায়েলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে: গ্যালান্ট ◈ কোন দেশে সেন্ট্রাল ব্যাংকে অবাধে সাংবাদিকরা ঢুকতে পারে, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের ◈ ভারতে চলন্ত বাসে আগুন, ৮ জনের প্রাণহানি ◈ তাপপ্রবাহ কমে বৃষ্টি ও ৮০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস ◈ যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি, সঙ্গে ডেপুটি গভর্নর

প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ০৫:০৫ সকাল
আপডেট : ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ০৫:০৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আজীবন সমাজ পরিবর্তনকামী রাজনীতিতে বিশ্বাসী মানুষ ছিলেন মোজাফফর আহমেদ

মোরশেদ শফিউল হাসান : অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ ছিলেন এদেশের বাম রাজনীতির সর্বশেষ জীবিত প্রধান নেতা। তার মৃত্যুতে যেন ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের অবসান হলো। যে ইতিহাসের অনেক ঘটনার তিনি ছিলেন অনুঘটক ও সাক্ষী। রাজনীতির সাফল্য-ব্যর্থতার ঊর্ধ্বে অন্তত অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চা এবং বামধারার প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময়ের অবদানের জন্য এদেশের ইতিহাসে তার নাম, আরও কয়েকজনের সঙ্গে, প্রথম সারিতে উচ্চারিত হবে। তার ব্যক্তিত্বের যে দিকটি কিশোর বয়স থেকেই আমাকে এবং নিশ্চয় আরও অনেককে আকৃষ্ট করতো তাহলো তার স্পষ্টবাদিতা এবং রসবোধ। রাজনীতির লোক হয়েও তিনি অনেক সময় আগপিছ ভেবে বা ডানে-বাঁয়ে তাকিয়ে কথা বলতেন না। কৌশলবাদী রাজনীতির অনুসারী হয়েও তিনি সবসময় রাজনৈতিক কৌশল মেনে কথা বলেননি বা কাজ করেননি। তার এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই তাকে শেষ জীবনে বাংলাদেশের রাজনীতির একজন নিঃসঙ্গ মানুষে পরিণত করেছিলো। সহকর্মীরা একে একে তাকে ছেড়ে গেছেন। তার বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ ছিলো অহমিকা বা উচ্চমন্যতার, আর সে অভিযোগ বোধহয় একেবারে ভুলও ছিলো না। তার সব উপলব্ধি বা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই যে সঠিক ছিলো তাও নিশ্চয় বলা যাবে না। এদেশের বাম রাজনীতির ব্যর্থতা বা বিপর্যয়ের দায়িত্ব আরও অনেকের মতো তার উপরও বর্তায়।
তার মৃত্যুতে বড় যে আক্ষেপটি রয়ে গেলো তাহলো ‘কিছু কথা’ নামে একটি পুস্তিকার কথা বাদ দিলে, এদেশের বাম রাজনীতির এই পুরোধা পুরুষ... আবারও বলি, এদেশের গত প্রায় অর্ধ শতকের রাজনীতি... বিশেষ করে বাম আন্দোলনের প্রকাশ্য ইতিহাস ও নেপথ্য অনেক ঘটনার যিনি ছিলেন শরিক ও সাক্ষী... ভবিষ্যৎকালের জন্য কোনো আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথা লিখে রেখে গেলেন না (নাকি লিখে গেছেন, আমরা জানি না?)।
তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কখনো সাক্ষাৎ বা আলাপ-পরিচয়ের সুযোগ আমার হয়নি। দূর থেকে তার বক্তব্য-বিবৃতি, সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করেছি। ১৯৬৯-এ গোলটেবিল বৈঠক থেকে ফেরার পর এবং ১৯৭৩-এর সাধারণ নির্বাচনের সময় চট্টগ্রামে ন্যাপের দুটি কর্মিসভায় উপস্থিত থেকে তার রসাত্মক বক্তৃতা শোনার সুযোগ আমার হয়েছিলো। স্বাধীন দেশে ৯ জানুয়ারি ১৯৭২ ঢাকার লালবাগে তার বক্তৃতা শুনেছিলাম। ১৯৭৩ সালে এবং তারপর ঢাকা ও চট্টগ্রামে কয়েকটি জনসভায় তার বক্তৃতা শুনেছি। ১৯৮০ দশকের মাঝামাঝি বায়তুল মোকাররমে তার দলের একটি জনসভায় তার ভাষণ শুনেছিলাম। সেটাই ছিলো বোধহয় ঢাকায় কোনো জনসভায় তার সর্বশেষ ভাষণ। আমার স্পষ্ট মনে আছে সে ভাষণে তিনি বলছিলেন, ‘এখন বুঝতে পারি, আমার নেতা ভাসানীই ঠিক ছিলেন।’ বলেছিলেন মারা যাবার আগে ভাসানী নাকি তাকে বলেছিলেন, ‘মোজাফফর তুমি হক কথা বাহির করিও।’ সেই সময়টা ছিলো অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের ‘ধর্ম-কর্ম-সমাজতন্ত্র’ প্রচারের কাল। তার পুরনো সহকর্মী ও ভক্ত-অনুসারীরা, তথা সামগ্রিকভাবে বাম রাজনীতিতে বিশ্বাসী মহলের অনেকেই সেদিন তার এই নতুন স্লোগানকে সহজ বা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি । অনেকে এর সমালোচনা করেছেন, অনেকে বিষয়টিকে উপহাসের দৃষ্টিতে দেখেছেন। আমিও এ নিয়ে যথেষ্ট সমালোচনা ও ঠাট্টা-মশকরা করেছি। রাজনীতির অঙ্গনে এভাবে ধর্মকে টেনে আনার ব্যাপারটিকে সেদিনও যেমন, তেমনি আজও ইতিবাচকভাবে নিতে পারি না। তবে সময়ের ব্যবধানে দাঁড়িয়ে মনে হয় এর মধ্য দিয়ে বাস্তবতার অন্তত একটা উপলব্ধি বোধ করি তিনি তার নিজের মতো করে তুলে ধরেছিলেন।
বেশ কয়েক বছর ধরে তার সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে একটি বই লেখার পরিকল্পনা আমরা কয়েকজন মিলে করছিলাম। কিন্তু তিনি আগ্রহ না দেখাতে তা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ বছর দুই হলো তার দলের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক (বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী) মনজুর আলী ননতু, দেশে এসে তার একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার গ্রহণের প্রস্তুতি ও উদ্যোগের কথা জানালে ননতু ভাইয়ের অনুরোধে সম্ভব দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমি সে সাক্ষাৎকারের জন্য একপ্রস্থ প্রশ্নমালা তৈরি করে দিই। বিশদ সে প্রশ্নমালার দ্বিতীয় প্রস্থের জন্য ননতু ভাই আর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। পরে একই কাজটি করার ব্যাপারে পিয়াস মজিদও তার পরিকল্পনার কথা জানালে এবং আমার কাছে প্রশ্নমালার ওই প্রথমাংশ চাইলে আমি সাগ্রহে সেটা তাকে সরবরাহ করি। ২৩ আগস্ট মাত্র এই ফেসবুকে অধ্যাপক মোজাফফরের অসুস্থতা বিষয়ে বিভুরঞ্জন সরকারের স্ট্যাটাসের সঙ্গে সংযুক্ত ননতু ভাইয়ের একটি মন্তব্য থেকে জানতে পারলাম, কেন তিনি কাজটি করতে পারেননি। প্রশ্নমালা তৈরি হওয়ার পর সাক্ষাৎকার নেয়ার ব্যাপারে যোগাযোগ করতে গিয়েই তিনি আবিষ্কার করেন যে, অধ্যাপক মোজাফফর তার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলছেন। সদ্য প্রয়াত জননেতা, আজীবন সমাজ পরিবর্তনকামী রাজনীতিতে বিশ্বাসী অধ্যাপক মোজাফফরের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়