এম.এ. হালিম, সাভার: অস্থায়ী ডাম্পিং স্টেশন দিয়েই সাভার চামড়া শিল্প নগরীর কার্যক্রম খুড়িয়ে চলছে বলে অভিযোগ করেছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। তারা জানিয়েছেন কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোন উদ্যোগ না নেয়ায় বিদেশি বায়ররা এ শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
এছাড়া ত্রুটিপূর্ণ সিইটিপিপ্লান্ট থেকে মাঝে মধ্যে দুষিত পানি ফেলা হয় পার্শবর্তী ধলেশ্বরী নদীতে যা পরিবেশ এবং প্রতিবেশ উভয়ের জন্যই মারাত্বক হুমকি স্বরূপ। সরেজমিনে সাভার চামড়া শিল্পা নগীর ঘুরে দেখা যায়, শিল্পনগরীরর দক্ষিন পশ্চিম কোনে ধলেশ্বরী নদী ঘেষে একটি ডোবার মধ্যে ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন ট্যানারীর কঠিন বর্জ্য। মাঝে মধ্যে বৃষ্টির পানিতে ডোবাটি ভরে গিয়ে বিভিন্ন মারাত্বক কেমিক্যাল মিশ্রিত ডাম্পিং এর পানি ড্রেনের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে নদীতে। একটি আধুনিক চামড়া শিল্প নগরীর লক্ষ্য নিয়ে প্রায় দুই দশক ধরে সাভারের হরিণধরা মৌজায় গড়ে উঠছে পরিকল্পিত চামড়া শিল্পনগরী। আদালতের আদেশে ২০১৭ সালের শুরুতে এখানে কারখানা সরিয়ে আনতে বাধ্য হন হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকরা।
এর আগে দেড় দশকের বেশি সময় চলে সরকারের সঙ্গে তাদের দর কষাকষিআর ধীরগতিতে স্থানান্তর কাজ। প্লট বরাদ্দের দীর্ঘ সময় পর এখনও কোনো কোনো ইউনিট ফাঁকা পড়ে রয়েছে, আবার কোথাও কোথাও কচ্ছপ গতিতে চলছে নির্মাণ কাজ। অথচ ট্যানারি মালিকদের সংগঠনই বলছে ধলেশ্বরী নদীপাড়ে ২শ' একরের এই নগরীতে স্থান স্বল্পতার কারণে বাদ পড়েছেন হাজারীবাগে ট্যানারি ছিল এমন অন্তত ৭০ জন উদ্যোক্তা। আলোচনা চলছে খুব শিগগিরই আরও ২শ' একর জমি নিয়ে চামড়া শিল্পের দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু হবে যেখানে অগ্রাধিকার পাবেন প্রথম ধাপে বাদ পড়া উদ্যোক্তারা।
সাভার বিসিক চামড়া শিল্প নগরীর প্রকল্প পরিচালক জীতেন্দ্রনাথপাল বলেন, প্রতিটি ট্যানারী মালিককে তাদের ব্যবহৃত কেমিকেলযুক্ত পানি দুই দিন পর্যন্ত ধরে রাখার সেডিমেন্টেশন ট্যাঙ্ক করার জন্য উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশ দেওয়া হলেও কোন প্রতিষ্ঠানই তা করেনি। স্বল্প পরিসরে অনেকে সেডিমেন্টেশন ট্যাঙ্ক করলেও এর আউট লাইন নীচ দিয়ে দেয়ায় বালু এবং চুন মিশ্রিত পানি সিইটিপিতে গিয়ে এর ফাংশনাল কার্যক্রমকে বাঁধাগ্রস্ত করছে। এছাড়া সিইটিপি প্ল্যান্টের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি পরিমাণ পানি ব্যবহার করায় ওভারফ্লু হয়ে কিছু পানি বাইরে চলে যায়। বিষয়টি সমাধানের জন্য আরও দুইশ একর জমি অধিগ্রহন করা হচ্ছে। যেখানে আরও তিনটি সিইটিপিপ্লান্ট, শ্রমিকদের জন্য হাসপাতাল, ক্যান্টিন ও ডাম্পিং স্টেশন তৈরি করা হবে। তবে সেখানে কঠিন বর্জ্য রিসাইক্লিং করবে এমন প্রতিষ্ঠানকেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্লট বরাদ্দ দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, গত কয়েকদিনে তারা সরকারি নির্ধারিত মূল্যে প্রায় ৪ লক্ষ চামড়া ক্রয় করেছেন। তবে গরম এবং বৃষ্টির কারণে অনেক চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে যা ফিনিসড লেদার করার পর ধরা পড়ে। গতবার আমাদের প্রায় ১০ হাজার চামড়া এই কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম কম হওয়ায় আগের কেনা অনেক চামড়া অবিক্রিত রয়ে গেছে।এই মুহুর্তে বিসিক কর্তৃপক্ষ আমাদের জমির কাগজপত্র বুঝিয়ে না দেয়ায় আমরা ব্যাংক থেকে কোন ঋণ নিতে পারছিনা। যে কারণে অনেকেই ইচ্ছা থাকলেও চাহিদা অনুযায়ী চামড়া কিনতে পারবেনা বলে জানান।
আপনার মতামত লিখুন :