স্বপ্না চক্রবর্তী : ক্রেতার অভাবে হু হু করে দাম কমছে চামড়ার। সরকার নির্ধারিত মূল্য তো দূরের কথা এর আশেপাশের মূল্যও পাচ্ছেন না বিক্রেতারা। অনেকেই চামড়া বিক্রি করতে না পেরে স্থানীয় মসজিদ-মাদ্রাসায় দান করে দিচ্ছেন। লক্ষাধিক টাকা দামের গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র দুইশ থেকে পাঁচশ টাকায়। ছোট গরুর চামড়ার কেউ দামই করছেন না। আর ছাগলের চামড়া কেনা হচ্ছে ১০-২০ থেকে ৫০ টাকায়।
অন্যদিকে, রাজধানীতে চামড়ার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অনেকেই সকালে বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া সংগ্রহ করলেও বাজার খারাপের শঙ্কায় দুপুরের পর থেকে কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা বলছেন, গত কয়েকবছরের মধ্যে এবারই চামড়ার দাম সবচেয়ে কম। কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদরে সংগঠন বাংলাদশে হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হাজী দেলোয়ার হোসনে এ ব্যাপারে বলেন, এবার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সব চামড়া কেনা সম্ভব হবে না। এছাড়া চামড়া কেনার মতো পর্যাপ্ত টাকাও ব্যবসায়ীদের কাছে নেই। এ কারণে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের লবণ দিয়ে চামড়া রাখার মতো ক্যাপাসিটি থাকলেই তাদের চামড়া কেনার পরামর্শ দিচ্ছি।
একই কথা বলেন বাংলাদেশ ট্যানার্ন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ।
তিনি বলেন, আমরা আগে থেকেই এবারের চামড়ার বাজার খারাপ যাওয়ার কথা বলেছি। আমরা সাধারণত মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরাসরি চামড়া কিনি না। লবণ দেওয়ার পর কিনে থাকি।
তিনি বলেন, চামড়ার পুরো বাজার নির্ভর করছে রফতানির ওপর। আগের চেয়ে রফতানি কমে গেছে। ফলে চামড়া সংগ্রহও আমাদের কমাতে হয়েছে। এছাড়া এবার ট্যানারি ব্যবসায়ীদের অনেকেই আগের বছরের চামড়া বিক্রি করে শেষ করতে পারেনি। আর অর্থের সংকট তো আছেই।
ধানমন্ডি ৭ এর বাসিন্দা মাহ রহমান মিয়া জানান, আগে বেলা ১০টা সাড়ে ১০টার মধ্যে চামড়া কেনার লোকজনের আনাগোনা বেড়ে যেত। আর এখন দুপুর একটা বাজে। এখন পর্যন্ত দুজন ছাড়া চামড়া কিনতে কেউ আসেনি। তিনি জানান, প্রায় দেড় লাখ টাকার গরুর চামড়ার দাম সকালে করলো মাত্র ৫শ টাকা। এরপরতো আর কেউ কিনতে আসেনি। বিক্রি করতে না পারলে কোনো এতিমখানা কিংবা মাদ্রাসায় দান করে দেবো।
গত ৬ বছর ধরে ধানমন্ডি, গ্রীনরোড, কলাবাগান এলাকায় কোরবানির সময় চামড়া কিনতেন মো. সবুজ মিয়া। এ বছর তিনি এই ব্যবসা করছেন না। কেন করছেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার চামড়ার দাম ভালো যাবে না, এটি আগে থেকেই জানছি। কারণ ট্যানারি মালিকরা এবার কম দামে চামড়া কিনবে। এইসব কারণে এবার ব্যবসা করছি না। তিনি জানান, এবার ধানমন্ডি কলাবাগান এলাকার অন্তত ২০ জন মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া কিনছে না।
সরকারের নির্ধারণ করা দাম অনুযায়ী, এবার গরুর কাঁচা চামড়ার দাম ঢাকায় প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। সারাদেশে খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকা হলেও দাম পড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গরুর চামড়ার দাম ৭ বছরে অর্ধেক, খাসির এক-তৃতীয়াংশ কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, চামড়া শিল্প একটা বড় ধরণের চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে। তবে আশা করছি খুব দ্রুত এ কঠিন সময় পার করা সম্ভব হবে। সম্পাদনা : ইকবাল খান
আপনার মতামত লিখুন :