আরিফুজ্জামান তুহিন : জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, হিযবুত তাহরীর কিংবা আইএস, আল-কায়েদা যেমন মুসলমানদের মুক্তি দিতে পারবে না, সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে তারা বরং মুসলমানদের মূল সমস্যাকে আড়াল করে একটি প্রক্সি ওয়ার চালাচ্ছে। তেমনি বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষের মুক্তি দেয়া তো দূরের কথা তাদের উপর জুলুম-নির্যাতন কমাতে পারবে না, উল্টো তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তির ঘুটি হয়ে প্রক্সি ওয়ার করবে।
কার্ল মার্কস ইহুদি প্রসঙ্গে বলেছিলেন, শ্রেণি বিভক্ত সমাজে আলাদা করে ইহুদিদের মুক্তি হবে না। আমি এ মতের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে সংহতি প্রকাশ করি। কারণ একটি শ্রেণি বিভক্ত সমাজে মালিক শ্রেণির উচ্ছেদ ছাড়া সেখানে আলাদা করে কারও উপর নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব নয়। সেই মূল সংগ্রাম না করে আলাদা আলাদা এসব সংগঠন মূলত মূল লড়াইকে ডিফোকাস বা লক্ষ্যহীন করে দেয়। বাংলাদেশে হিন্দুদের ক্ষেত্রে দিয়েছে, তেমনি ভারতে মুসলমানদের ক্ষেত্রে দিচ্ছে। প্রিয়া সাহা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা। তিনি ট্রাম্পের কাছে যে তথ্য দিয়ে নালিশ করেছেন তার সত্যতা নেই। এ জন্য তাকে গালমন্দ যা করার করেন। কিন্তু এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, গত সাড়ে চার দশকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর কম নির্যাতন হয়নি। এই নির্যাতনের কারণে তারা অনেকে দেশ ছেড়েছেন। অন্যের গল্প না বলে নিজেরটা বলি। নড়াইলের লোহাগড়াতে যেখানে বড় হয়েছি সেই পাড়ায় একসময় হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলো। ¯্রফে যে কেউ সেখানে গেলে দেখবেন এখন হিন্দুরাই সংখ্যালঘু। চেনা বহু পরিবার পশ্চিম বাংলায় ঠাঁই নিয়েছে। প্রিয় বন্ধুদের অনেকে চলে গেছেন। যাদের কাছের মানুষ দূরে যায় তারাই বুঝতে পারেন এর কষ্ট কতোভাবে আপনাকে পোড়ায়। প্রিয়া সাহা ভুল তথ্য দিয়ে নালিশ করেছেন। কিন্তু ভুল তথ্য দিয়ে তো হেফাজতে ইসলামও নালিশ জানিয়ে বলেছিলো তাদের ২ হাজার মানুষ শাপলা চত্বরে নিহত হয়েছেন।
শাপলা চত্বরে যদি ৫৭ জনও নিহত হয় তাহলে সেটি কি কম? তার জন্য কি আমরা বিচার দাবি করতে পারি না? কেন আমাদের সংখ্যা বাড়িয়ে বলতে হবে? এই সংখ্যা তত্ত্বের কাছে মানুষ নাই হয়ে যায়। দুনিয়াবিতে মানুষের চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই। সেই মানুষ একজনও যদি নাই হয় তাহলে ওই জুলুমের রাষ্ট্রে মজলুমের বিচার চাওয়ার অধিকার আছে। তেমনি প্রিয়া সাহাকে ভুল তথ্যের উপর কেন ভর করতে হবে? সরকারপন্থী অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বরকাতের হিসেবে দেশের ৪০ ভাগ হিন্দুর সম্পত্তি আওয়ামী লীগের দখলে। তো দখল হয়ে যাওয়া সম্পদের মালিকেরা দেশে আছে? নাকি পশ্চিমবঙ্গে গেছে? ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো পৃথিবীর সব থেকে আগ্রাসী দেশের প্রেসিডেন্টের কাছে সংখ্যালঘু হিন্দুরা নালিশ জানাচ্ছে এর মাজেজা কিন্তু ভিন্ন। এর অর্থ দেশে একটা ‘সেক্যুলার’ সরকার থাকার পরও তারা শান্তিতে নেই। তাদের মানুষ ‘গুম’ হচ্ছে। এই রাজনীতি কি ঘুমে থাকা আওয়ামী লীগের ব্যক্তিরা বুঝতে পারছেন? প্রিয়া সাহার দাবি বাড়াবাড়ি। কিন্তু সংখ্যালঘুদের উপর গত সাড়ে চার দশকে যতো হামলা আক্রমণ হয়েছে তা মিথ্যা হয়ে যায় না প্রিয়া সাহার বক্তব্যে। সংখ্যালঘু এক বন্ধু। যিনি সরকারের এখন বড় কর্তা। ও প্রায় আড্ডায় বলতো, যদি শুধু কাটা হতো মানে সুন্নতে খতনা তার থাকতো মানে মুসলমান হতো তাহলে সে বুক ফুলিয়ে হাঁটতে পারতো, মন খারাপ করে হাঁটতো না। সেই বন্ধু এখনো মন খারাপ করেই থাকে। যতো বড় সরকারি আমলা বিচারকই হোক না কেন দিন শেষে সংখ্যালঘু হওয়ার যন্ত্রণা আপনি বুঝবেন না। বুঝতেন যদি বাংলাদেশি মুসলিমদের বাড়ি ঠিকানা ঠিকুজি গুজরাট, কাশ্মীর, বিহার বা ভারতের কোথাও হতো। দুনিয়াতে সংখ্যালঘু হওয়া একটা পাপ, একটা অন্যায়। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :