মোহাম্মদ আবদুল অদুদ : ব্রিটিশ আমলের কথা। এক ইংরেজ ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, ‘দুধ পান করবেন’? তিনি জানতে চাইলেন, ‘দুধ কী’? উত্তরদাতা বাঙালি বললেন, ‘দুধ সাদা’। ইংরেজ লোকটির জিজ্ঞাস- ‘সাদা কেমন’? বাঙালি বললেন, ‘সাদা হলো বকের মতন’। ইংরেজ লোকটির পুনঃজিজ্ঞাসা- ‘বক কেমন’? উত্তর-‘কাঁচির (কাস্তের) মতন’। ইংরেজ এবার বিরক্ত হয়ে জানতে চাইলেন, ‘কাঁচি কেমন’? বাঙালি বললেন, কাঠের বাটে ধারালো লোহা, ‘যা দিয়ে কোনকিছু পুচিয়ে পুচিয়ে কাটা হয়’। ইংরেজ লোকটি বললেন, ‘ভাই আমার দুধ পানের দরকার নেই’।
আজকাল দুধ নিয়ে দফায় দফায় গবেষণা চলছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত (পাস্তুরিত) দুধের ১০টি নমুনার ১০টিতেই এন্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক এবং বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের সদ্য সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। প্রথম দফায় পাওয়া গিয়েছিলো ৩টি (৩ রকমের) এন্টিবায়োটিক। এবার পাওয়া গেলো ৪টি এন্টিবায়োটিক। এগুলো হলো-অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, এনরোসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং লেভোক্সাসিন। (দৈনিক আমাদের নতুন সময়, ১৪ জুলাই ২০১৯)। দুধে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এন্টিবায়োটিক, সিসা, মেলামাইন প্রভৃতি থাকলে আমরা কীভাবে দুধ পান করবো?
একালের ছেলেদের উত্তর, ‘বাবা, আমরা তাহলে দুধপান করবোই না’। দুধপানকে বিপজ্জনক ভেবে তরুণ প্রজন্ম এখন এতে সর্বোচ্চ অনীহা দেখাচ্ছে। আর অভিভাবকরা শংকায় আছেন যে, তাদের সন্তানকে দুধের পরিবর্তে তাহলে কী পান করাবেন? অথচ আমাদের বাবা-মায়েরা দুধপান করানোর সময় বলতেন, দুধপান করলে ব্রেইন বাড়বে (প্রখর হবে) ইত্যাদি ইত্যাদি। তখনো আমাদের দুধে অনীহা ছিলো দাড়াশ সাপের (কারো কারো মতে দুধরাজ) বিষের ভয়ে। প্রায়ই শুনতাম, আজ রাতে সব দুধ সাপে সাবাড় করে ফেলেছে। গাভীর ওলানে-বানে (স্তনে) সাপের দুধপানের আলামতও দেখা যেতো পরদিন সকালে। তাই সাপের বিষের ভয়ে অতি সতর্কতাবশত অনেকেই দুধপান থেকে বিরত থাকতেন। এমন মানুষ আমাদের পরিবারেও একজন আছেন। এখনও আছেন। কিন্তু আমি এসব অনীহার মধ্যে নেই। কারণ, আমি মেধাভিত্তিক জাতি গঠনে নতুন প্রজন্মের স্বার্থে স্বাস্থ্যসম্মত দুধসহ অন্যান্য খাদ্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে আন্দোলনেও প্রস্তুত। এমন প্রস্তুতি আপনারও থাকা চাই, আন্দোলন চাই, যেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ নিশ্চিতভাবে তাদের কর্তৃপক্ষীয় দায়িত্ব পালন করেন। সুকান্তের ভাষায়, ‘এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান...এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’
লেখক : উপ-সম্পাদক, দৈনিক আমাদের নতুন সময়, সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব
আপনার মতামত লিখুন :