শিরোনাম
◈ হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প জেলেনস্কির বৈঠক শুরু ◈ মিয়ানমারে তীব্র সংঘর্ষ: নাফ নদীর পাড়ে কয়েকশ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে প্রবেশে বাধা ◈ গাজা সংকটে আলোচনার নতুন সূচনা: হামাস যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত ◈ জুলাইয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের এক টাকাও খরচ করতে পারেনি ১২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ◈ শেখ হাসিনার মামলায় ট্রাইব্যুনালে ১২ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ ◈ চলতি সপ্তাহে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে: ইসি সচিব ◈ সিলেটে পাথরকাণ্ড: ডিসির পর এবার ইউএনওকে বদলি ◈ যে তিন শর্তে পিতৃত্বকালীন ছুটি দিতে রাজি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ◈ ৫৫ বছরের রেকর্ড ৯৩৭ কোটি টাকা মুনাফা বিমানের ◈ ভারত কি বাণিজ্য যুদ্ধ সামাল দিতে পারবে?

প্রকাশিত : ১৩ জুলাই, ২০১৯, ০৭:৪০ সকাল
আপডেট : ১৩ জুলাই, ২০১৯, ০৭:৪০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাংলায় নীল চাষের ইতিহাস ও পরিণতি

সাইদুর রহমান: ‘নীলচাষ’ শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে বাংলার অসহায় কৃষকের মুখ, বাংলার কৃষকের উপর ইংরেজ বণিকদের অত্যাচার, নির্যাতন, কৃষকের আহাজারি, ক্ষুধার জ্বালা ইত্যাদি নির্মম চিত্র। আজও কালের স্বাক্ষী হয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কিছু নীলকুঠি।

প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই ভারতবর্ষে নীল চাষ ও প্রক্রিয়াকরণ করা হতো। ওড গাছ এককালে নীল তৈরির উৎস ছিল। ভারতবর্ষে বাণিজ্য শুরুর পর ইংরেজ বণিকরা ভারত থেকে নীল কিনে নিয়ে যেত ইউরোপের বাজারে, দ্রুতই ভারতীয় উন্নতমানের নীল ইউরোপের জনপ্রিয় হয়ে উঠে যার ফলে ওড গাছ থেকে উৎপাদিত নীল বাজার হারায়। ব্রিটিশরা রঙ প্রাপ্তির সহজলভ্য উৎস হিসেবে ভারতবর্ষের প্রতি উৎসাহিত হয়ে উঠেছিল।

১৭৫৭ সালে ভারতের শাসন ক্ষমতা ইংরেজ দখল করলে ১৭৭৯ সালে এ কোম্পানী নীল চাষ করার আদেশ জারি করে। এ আদেশ জারির পরেও ভারতীয়রা নীল চাষে তেমন আগ্রহী হয়নি।১৭৭৭ সালে বাংলায় প্রথম নীল চাষ শুরু হয়। সে সময় ইংরেজ বণিকরা জোর করে কৃষকদের দিয়ে নীল চাষ শুরু করে। ইংরেজ বণিকরা গ্রামে কুঠি স্থাপন করে নীল চাষ তদারকি করত। সেই কুঠি নীলকুঠি নামে পরিচিতি পায়, সেই নীল কুঠি আজও বাংলার আনাচে কানাচে কষ্টস্মৃতির মিনার হিসেবে ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনিচ্ছুক চাষীদের নীলচাষে বাধ্য করা, ভালো উর্বর জমিতে নীল চাষ করার জন্য জবরদস্তি করে খুটি পুঁতে আসা এমনকি নীল সংগ্রহ ও কেনার সময় ও অর্থ পরিশোধ করত না। উপরন্তু পেয়াদা ও লাঠিয়ালদের দিয়ে দৈহিক নির্যাতন করা হত গরিব চাষীদের। এই ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যবসায়ী সম্প্রদায় নীলকর নামে পরিচিতি, যাদের অত্যাচারে বহুবিত্তশালী গৃহস্থ গ্রাম ছেড়ে পালায়, বহুমানুষ জীবন হারায়। নীলচাষ না করলে চাষীদের ওপর যে অমানবিক অত্যাচার ও নির্যাতন চালানো হত সেই কষ্টের ইতিহাস এখনো বাংলার মানুষের মুখে মুখে, মননে মেধায় ও স্মৃতিতে।

নীল তৈরির প্রক্রিয়া: নীল গাছ থেকে রঙ উৎপাদন ছিল অত্যন্ত দুরুহ একটি পদ্ধতি। নীল রঙ তৈরির জন্য প্রয়োজন হতো প্রচুর স্বচ্ছ পানির। এজন্য নীল তৈরির কারখানাগুলো তৈরি হত সবসময় নদী তীরবর্তী এলাকায়। নদীর পানি হস্তচালিত পাম্প দ্বারা কারখানার জলাধারে আনা হতো। তারপর সেই পানি নেয়া হত নিরেটভাবে তৈরি সারি সারি চৌবাচ্চায়। আর থাকতো তামা বা লোহার তৈরি একটি বয়লার। নীলগাছ কাটার পর একজন রায়ত গাড়ি বা নৌকা বোঝাই করে কারখানায় নিয়ে আসত। গাছগুলোকে নেয়া হত জোড়া চৌবাচ্চার ওপরে। চৌবাচ্চার মধ্যে গাছগুলোকে সাজানোর পর তাতে পানি ভরা হত। গাছগুলো যাতে ভেসে না উঠতে পারে, সে জন্য বাঁশ দিয়ে চেপে রাখা হত। এভাবে, সারারাত গাছগুলোকে গাঁজানোর জন্য ডুবিয়ে রাখা হয়। সকালে পানির উপরে তামাটে নীল রঙের ফেনা জমত, এরপর জোড়া চৌবাচ্চার উপরের চৌবাচ্চার ছিপি খুলে দেয়া হত ফলে উপরের চৌবাচ্চার তরল তখন নিচের চৌবাচ্চায় এসে পড়ত। এই তরল হত কমলা বর্ণের ও কটু গন্ধবিষ্টি। নিচের চৌবাচ্চায় রঙিন তরল জমা হওয়ার পর ১০ জন মুজুর একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়তো চৌবাচ্চার মধ্যে, তারা বাঁশের লাঠি দিয়ে রঙিন তরল নাড়াতে থাকে। নাড়ানোর ফলে তরলের মধ্যে অক্্িরজেনের উৎপাদন হয় যার ফলে এই তরল হলুদ ফেনা সহ সবুজাভ রঙ ধারণ করত। শেষে চৌবাচ্চার মধ্যে ঘূর্ণি তৈরি হত যার ফলে চৌবাচ্চার তরল ধীরে ধীরে থিতিয়ে পড়লে নীল রঙের তলানী জমা পরত। পরে এই নীল রঙকে বয়লারে ফুটানো হত। জমাট বেঁধে যাওয়া এই নীল এরপর আয়তাকার পিন্ডে পরিণত হত। পরে ৩ ইঞ্চি মাপে কাটা হত যার ফলে ঠিক যেন ছোট ছোট নীলের কেক তৈরি হয়ে যেত। এই কেকের গায়ে কোম্পানির নাম ও তৈরির তারিখ ছাপ মেরে দেওয়া হত। এরপর নীল কেকগুলি ড্রাইং রুমের সেলফে তিন মাস শুকানো হত। এরপরেই নীল কেক গুলো বাক্্রবন্দী করে বাজারজাতের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হত।

১৮৫৯ সালে নীল চাষীরা নীলকরদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সারা বাংলায় তা ছড়িয়ে পরে। অর্ধশতাব্দী ধরে নৃশংসতার শিকার জনগোষ্ঠীর কাছে কৃষকদের কাছে নাটকীয়ভাবে শক্তিশালী রুপ ধারণ করে। কৃষকদের এই আন্দোলন সম্পৃর্ণ অহিংস প্রতিরোধ ছিল। এই বিদ্রোহের মাধ্যমেই চাষীরা বাংলায় নীল চাষের ইতি ঘটায়। দীনবন্ধু মিত্র ১৮৫৯ সালে নীল বিদ্রোহ নিয়ে নীল দর্পণ নাটক রচনা করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়