নির্মলেন্দু গুণ : ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদানকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে পুরস্কারের অতিরিক্ত একটি দুই টাকা মূল্যের চকচকে ধাতব মুদ্রা প্রদান করেছিলেন। আমি সেটি সযতনে আমার সংগ্রহশালায় সংরক্ষণ করেছি। কেননা ওই দুই টাকার ধাতব মুদ্রার
মূল্য বাজারমূল্যে বিবেচ্য হবার নয়। এই তথ্য তো আপনাদের জানাই আছে যে, স্বাধীনতা পুরস্কারে আমাকে ভূষিত করার জন্য আমার নাম আমি নিজেই সুপারিশ করেছিলাম। পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও আমার নাম সুপারিশ করেন এবং ওই বছরের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপকদের তালিকায় আমার নামটি যুক্ত করে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এই ঘটনাটি তো গোপন কিছু নারে ভাই। এই বিষয়টা নিয়ে আমার বিরুদ্ধে তখন কতোজনে যে কতো কথা বলেছেন। সেগুলো একত্র করলে কম করেও একটা পাঁচশ পৃষ্ঠার বই তো হবেই হবে। ভবিষ্যতের গবেষকরা ওইসব লেখা নিয়ে গবেষণা করে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করলে করতেও পারেন। এ রকম তুচ্ছ বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করা ডক্টরেটের সংখ্যা কিন্তু দেশে-বিদেশে কম নয়। আমার উপরেই তো একজন করেছেন। তাই বলি প্রচলিত পথে ভূমিষ্ঠ হওয়া নরম্যাল বেবি কিন্তু আমি নই, আমি একজন সিজারিয়ান বেবি। আমার স্বভাব যে অন্য পাঁচজনের মতো নয়, আমি যে একটু ঘাউড়া টাইপের মানুষ, এটা তো আপনাদের সবারই জানা থাকারই কথা। নজরুলের ভাষায় বললে... ‘আমি মানি না কো কোনো আইন,/আমি ভরা তরী করি ভরাডুবি/আমি টর্পেডো, ভীম, ভাসমান মাইন।’
আমার সুপারিশে এই পর্যন্ত যাদের চাকরি হইছে, তারা আমারে দুই টাকা কইরা দিলেও আমার ৫০ টাকার একখান নোট হইতো। কিন্তু তারা কেউ আমারে দুই টেকাও দেয় নাই। আর দিতে চাইলেও আমি নেই নাই। কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা সামান্য বদল করে বলি... এই হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ,/এই হাতে আমি কি ঘুষ নিতে পারি? তবে মিথ্যা বলবো না... পায়জামা ছাড়া পাঞ্জাবি, বিছানার চাদর, ফলমূল, মিষ্টি, দই... কবিতাকুঞ্জের জন্য কিছু বই... এসব আমি উপঢৌকনাকারে কিছু নিছি।
একজন মহিলারে আমি বদলি করাইয়া দিছিলাম, তিনি খুশি হইয়া আমার কাশবন বিদ্যানিকেতনের শিক্ষকদের হাতে ৫০ হাজার টাকা দিছিলেন, স্কুলের খেলার মাঠে মাটি ফেলার জন্য। তখন স্কুলের মাঠ সংস্কারের কাজ চলছিলো। তিনি আরও বেশি দিতে চাইছিলেন, আমি পারমিট করি নাই।। সেই টাকা আমি হাতেও ধরি নাই, চোখেও দেখি নাই। আমার সুপারিশ সফল হওয়ার পর আমি ক্যাশ না নিলেও ইন-কাইন্ড যে কিছু জিনিসপত্র নিছি, তা এইজন্য যে, আমি শুনেছি, ঘুষ-দক্ষিণা ছাড়া পাওয়া বিদ্যা ও চাকরির বরকত হয় না। আমার এই ছোট গল্পটা কেমন লাগলো, জানাবেন। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :