কামরুল হাসান মামুন : এক সপ্তাহের মধ্যে দুদক স্ট্রাইকস এগেইন। আসলে এসব সম্ভবত জাস্ট ঃরঢ়ং ড়ভ ঃযব রপবনবৎম! এগুলো আমাদের এয়ারপোর্টে এয়ারক্রাফটের টয়লেটে, যাত্রীর লাগেজ কিংবা পেটে স্বর্ণ পাওয়ার মতো। প্রকৃত চিত্র নিশ্চয়ই এর চেয়ে ভয়াবহ। আর এটা কেবল দুদক কিংবা এয়ারপোর্টেই সীমাবদ্ধ নেই। আমাদের দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে যতো আইন হাতে তুলে দেবেন ততোই তাদের ঘুষ ও দুর্নীতির করার ক্ষমতা এবং পরিমাণ বাড়ে। নতুন আইন মানে মানুষ আইন ভাঙবে আর আইন ভাঙা মানে ঘুষ খেয়ে পার করে দেয়া। এখন অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে এক সরকারি কর্মকর্তা অন্য কর্মকর্তার কাছ থেকেও ঘুষ আদায় করছে। মানে ভয়াবহতার একটি সীমা আছে। সেটাও অতিক্রমের পথে।
আরেকটি ভয়াবহ সংবাদ : ‘সিবিএ নেতার টাকায় নির্মিত হচ্ছে ২০১ গম্বুজ মসজিদ!’
মাত্র দুইদিন আগের সংবাদে জানলাম টাঙ্গাইলের গোপালপুরে সিবিএ নেতার টাকায় নির্মিত হচ্ছে ৩০১ ফুট উচ্চতার ২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। তিনি নাকি ১৫ কোটি টাকা হাতে নিয়ে মসজিদের কাজ শুরু করেন এবং এ পর্যন্ত মসজিদের নির্মাণ কাজে ব্যয় হয়েছে ১০০ কোটি টাকা এবং নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ করতে নিশ্চয়ই আরো অনেক টাকা লাগবে। যেই মানুষ গ্রামে মসজিদ দিয়েছে সে নিশ্চয়ই নিজেকে নিঃস্ব করে ওই মসজিদ বানায়নি। কারো ১০০ থেকে ১০০০ গুণ বেশি টাকা থাকলেই কেবল ১০০ কোটিকে সামান্য টাকা মনে করে দান করবে। কারো কি ধারণা আছে এই সিবিএ নেতা চাকরির পোস্ট কি বেতন কেমন? সারাজীবনের বেতনের একটি টাকাও খরচ না করে যদি ব্যাংকে শুধু জমায় তাহলেও কি এতো টাকার কাছাকাছি জমানো সম্ভব হতো? অর্থাৎ সে নিশ্চয়ই ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে পুরো টাকা অথবা তার বড় একটি অংশ, যা হতে পারে ৫০০ থেকে ১০০০ কোটি টাকা, মেরে দিয়েছে। এখন সে হয়ােত ভাবছে সেখান থেকে ১০০-২০০ কোটি খরচ করে আল্লাহর ঘর বানালে ইহকাল এবং পরকাল দুইকালেই লাভ। ইহকালে লাভ হলো এলাকার লোকজন তাকে মহামানব ভেবে আগামীতে সংসদ সদস্যও বানিয়ে ফেলতে পারে। আর নিশ্চয়ই সে ভাবছে এতে আল্লাহও খুশিতে গদগদ হয়ে তাকে একদম বেহেশতে পাঠিয়ে দেবে। এই যে এই লোকটা অবৈধভাবে এতো টাকার মালিক হয়ে গেলো কোথায় আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন আর কোথায় আইন আদালত? এ রকম সিবিএ নেতা দেশে কি সে একাই? এটাই আমার দেশ! একটি দেশে এসব বেশি বেশি ঘটা মানে দেশে সুশাসন আর বিচারের অভাব। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে দেশে এখন ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট, পাচার, ভেজাল ইত্যাদির মহোৎসব চলছে। এসব কেন হচ্ছে? মানুষ কি জানে না যে এসব করে আমরা কেউ সুখে থাকতে পারবো না। সমাজ তো একটি কমপ্লেক্স রহঃবৎঃরিহবফ, রহঃৎরমঁরহম এবং পড়ৎৎবষধঃবফ ফেনোমেনা। এখানে দুর্নীতি লুটপাট করা মানে উপর দিকে থুথু দেয়ার মতো। যা দিলে আবার নিজের মুখে ফিরে আসে। এই সামান্য বিষয়টা আমরা বুঝি না তার কারণ আমাদের বোঝার ক্ষমতার অভাব।
আর এই অভাবটা মানসম্মত শিক্ষার অভাবজনিত কারণে। প্রকৃত শিক্ষা মানুষকে সৎ উঁচু মনের মানুষ হতে সাহায্য করে। যেই শিক্ষা মানুষের ভেতরে আরেক জোড়া চোখ খুলে দেয় যা দিয়ে আপাত যা দেখা যায় না তা দেখার জন্য। আমার ধারণা বর্তমান বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ে যারা আছেন তাদের প্রায় কারো ওই চোখ ফুটেনি। অনেক পাখি আছে এমনকি কুকুরও জন্ম হয় বদ্ধ চোখ নিয়ে। আর সেটা খুলে জন্মের অনেক পরে আপনাআপনি। মানুষও জন্ম হয় বদ্ধ ভেতরের চোখ নিয়ে। কারো ক্ষেত্রে সেই চোখ জীবনেও খুলে না এবং ঁহভড়ৎঃঁহধঃবষু বাংলাদেশের ক্ষমতাধর অধিকাংশেরই সেই চোখ খোলেনি আর কোনোদিন খুলবে বলেও মনেও হচ্ছে না। সূত্র : কালের কণ্ঠ
আপনার মতামত লিখুন :