ডা. জাকির হোসেন : আব্দুন নুর তুষার পেশায় চিকিৎসক হলেও মিডিয়ার প্রিয় মুখ হিসাবে বেশি পরিচিত। ছাত্র জীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন এই মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। চিকিৎসাশাস্ত্রের এই কঠিন পড়াশোনার চাপের মধ্যে থেকে নিযমিত অংশগ্রহণ করে গেছেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক র্বিতক অনুষ্ঠানে। ওই সময় তুখোড় বির্তাকিক হিসাবে দেশজুড়ে তাকে এক নামে চিনতো। মিডিয়ার অতি পরিচিতজন হলেও উনাকে খুব বেশি চিকিৎসাশাস্ত্র নিযে মিডিয়ায় কথা বলতে আমি দেখিনি। কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবৎ তিনি বাংলাদেশের ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে মিডিয়ায় অত্যন্ত সাবলীলভাবে লিখে যাচ্ছেন। সরাসরি চিকিৎসক নেতাদের সঙ্গে এক সারিতে বসে অংশগ্রহণ করেছেন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার টকশোতে। সেখানে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সুন্দর সাবলীল ভঙ্গিমায় তুলে ধরেছেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বল দিকগুলো সম্পর্কে। তার পাশে বসা অনেক প্রভাবশালী চিকিৎসক নেতারা যা কোনোদিন জাতির সামনে তুলে ধরতে পারেননি। অথচ এসব নেতারা র্দীঘদিন ধরেই নেতৃত্বের আসনটি দখল করে আছেন। যাদের দুর্বল নেতৃত্বের কারণে ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সব দায়ভার সাধারণ চিকিৎসকদের কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কথা বলে এখন অনেকেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছেন।
তবে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। র্দীঘদিন ধরে বেহাল এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রকৃত চিত্র এখন অনেক সাধারণ মানুষ জানতে শুরু করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে। বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোতে চিকিৎসকদের পদচারণ কম বলে এতোদিন এর প্রকৃত চিত্র নিজ থেকে কোনো মিডিয়া বা মিডিয়া ব্যক্তিই সাধারণ জনগণের কাছে ইচ্ছা করেই তুলে ধরেননি বা নিজেদের অজ্ঞতার জন্য তুলে ধরতে সমর্থ হননি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি প্রাণ হারিয়েছিলেন চিকিৎসক পেশাজীবীরাই, কিন্তু স্বাধীনতা উত্তর চিকিৎসকদের এই আত্মত্যাগের কথা কেউ মনে রাখেনি। এমনকি এই পেশাজীবীদের নিযে গড়া রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও সাধারণ চিকিৎসকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে গেছেন প্রতিনিয়ত। যার ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই ভগ্নদশাকে পুঁজি করে দেশের কিছু দুষ্কৃতিকারী রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। অতি সম্প্রতি মাছরাঙা টেলিভিশনের পর্দায় পাবনা মেডিকেলের যন্ত্রপাতি ক্রয় সংক্রান্ত বিশাল এক দুর্নীতি চিত্র তুলে ধরেছিলো।
এতে দেখা যায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যোগসাজশে একটি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট চক্র ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির থাবায় সেই মেডিকেলে কর্মরত নিষ্পাপ চিকিৎসক তত্ত্বাবধায়কে অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে ওএসডি করা হয়েছিলো। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিতে সবচেয়ে বেশি শ্রম দিয়ে থাকেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। বাংলাদেশে এমন কোনো সরকারি হাসপাতাল নেই যেখানে বেডের চেয়ে রোগীর সংখ্যা কম। প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে দ্বিগুণ বা তার অধিক সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা বিশ্বের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতেই হয়ে থাকে। চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসকদের দুর্নীতির জায়গাটা একেবারেই সংকীর্ণ বা নেই বললেই চলে। অথচ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক থাকে না এ রকম দোহাই তুলে সাধারণ মানুষদের মাঝে এন্টি চিকিৎসক সেন্টিমেন্ট তৈরি করে দুর্নীতির মহাসাম্রাজ বিস্তার করে রেখেছে দুর্নীতিবাজ আফজাল ও তাদের দোসরা। ভঙ্গুর এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র এতোদিন কেউই জনগণের সামনে উন্মুক্ত না করে স্বাস্থ্য সেবাকে চূড়ান্ত বিপর্যের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এই বিপর্যয়ের হাত থেকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে টেনে তুলতে প্রয়োজন ছিলো যোগ্য চিকিৎসক নেতৃত্বের। কিন্তু দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি সেই সুযোগটিও কেড়ে নিয়েছে। ডা. আব্দুন নূর তুষার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই দুঃসময়ের কা-ারির ভূমিকা পালন করেছেন। কাজটি তিনি না করলেও পারতেন। করেছেন হয়তো বাংলাদেশ নামক দেশ মাতৃকার ভালোবাসার অগাধ মমত্ববোধ থেকে। লেখক : চিকিৎসক ও কলামিস্ট
আপনার মতামত লিখুন :