কাজী নুসরাত
------------------------------------------------------
নারী ভোগ্য, নারী ব্যবহার্য, ছুঁড়ে ফেলার তো বটেই। এটাই কট্টর পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা। বালুর জাহাজের সালাম সর্দারও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রতি মৌসুমে নতুন নতুন ঘাটে নোঙর ফেলা, নারী শ্রমিকের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে তাকে বিয়ে করা তার মৌসুমি স্বভাব। ফি বছর নতুন ঘাটের উদ্দেশ্যে নাওয়ে পাল তুলতেই সালাম সর্দার এ পাড়ের মাটি থেকে সম্পর্কের শেকড় উপড়ে ফেলেন। পেছনে পড়ে থাকে ফুলবানুর নিঃসঙ্গ ঘটি-বাটি, পরিত্যক্ত সংসার। আর সর্দারের প্রতারণার চিহ্ন বুকে আগলে জেগে থাকে প্রতারিত স্থবির জীবন।
মন পবনের নাওয়ে রঙিলা পাল উড়িয়ে নতুন বতরে নতুন শিকার খোঁজে সর্দার। চলতে থাকে মৌসুমি বিয়ে বতরে বতরে। বালুর ঘাটে নারী শ্রমিকের দাসত্বের জীবন বাধা পড়ে সর্দারের লোভ আর সেচ্ছাচারে। কিন্তু প্রকৃতির প্রতিশোধ থেকে নিস্তার পায় না সালাম সর্দারও। তখনই এ গল্পে ফিরে আসে গ্রিক পুরানের ইডিপাস কমপ্ল্েেক্সর মতো ঘটনা। এমনই গল্পে নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘বতর- দ্য সিজন’।
বতরে বতরে বালুমহলে নতুন শিকার খুঁজতে খুঁজতে একদিন নোঙর ফেলে ফুলবানুর গ্রামে। প্রকৃতির শাস্তিস্বরূপ লালসার চোখ যায় ফুলবানুর ঘরে রেখে যাওয়া নিজেরই ঔসরজাত কন্যার উপর। পিছু নেয় তার। জীর্ণ মাটির ঘরের উঠোনে উঁকিঝুঁকি মারতেই দেখে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো দরজায় বসে আছে ফুলবানু, এক ঝটকায় মনে পড়ে যায় নষ্ট অতীত। জানতে পারে সালমার পিতৃ পরিচয়। দ্রæত পালাতে চায় সালাম সর্দার, এই নির্মম নির্লজ্জ দৃশ্যপট ছেড়ে। দু’ফোটা চোখের জলও হয়তো গড়িয়ে পড়ে গাল বেয়ে। পেছনে পড়ে থাকে বালু শ্রমিক ফুলবানুর দীর্ঘশ্বাসে ভরা মৌসুমি জীবন। এ চলচ্চিত্রে তুলে ধরা হয়েছে- নারী শ্রমিকের জীবনের অসহায়ত্ব, আর বঞ্চনার কথা। মানুষ অন্যায় করবে, মানুষই শাস্তি পাবে। তাই ‘বতর’ এর বার্তা হচ্ছে প্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রণ আর নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা।
স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটির চিত্রায়ন হয়েছে মাটিয়ালের ব্যানারে। ইডিপাসের নাটক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন তরুণ নির্মাতা অমৃতাভ মিহির। এর কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপও তার। এতে অভিনয় করেছেন মুশফিক আরিফ ও তানিয়া। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন পংকজ দেবনাথ, সুদীপা এবং মিম।