কেএম নাহিদ : কৃষি নির্ভর অর্থনীতি থেকে উঠে আসা একটা দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের কৃষি বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকা জরুরী। আমাদের দেশে বইপত্রে একটা নির্দিষ্ট শ্রেণি পর্যন্ত কৃষিশিক্ষা বাধ্যতাম‚লক হলেও সে শিক্ষাটা হাতে কলমে নয়। ফলে একজন শিক্ষার্থী যেমন কৃষকের ব্যথাটা অনুভব করতে পারে না, ঠিক তেমনি কৃষকের ফসল ফলানোর অনন্য আনন্দটুকু থেকেও সে বঞ্চিত হয়। এমনি ভাবে ধানের দরপতনের দায় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন, টিভি ও গণমাধ্যম ব্যাক্তিত্ব এবং চ্যানেল আইর বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ। শনিবার ২৫ শে মে এই প্রতিবেদনটি চ্যানেল আই অনলাইনে ছাপা হয়। নিম্নে প্রতিবেদনের চুম্বক অংশ দেয়া হলো।
তিনি তার প্রতিবেদনে বলেন, আমি প্রতিবছর ‘ফিরে চল মাটির টানে’ নামে একটা কার্যক্রমের মাধ্যমে শহরের শিক্ষার্থীদের কৃষির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। আমার এ কাজের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এটা দেখে অন্যরাও যেন তাদের সন্তানদের কৃষির সঙ্গে সংযোগ ঘটায়। এই ছেলে-মেয়েরা হয়তো বড় হয়ে কেউ কৃষক হবে না, কিন্তু তাদের চিন্তা-ভাবনায় যেন কৃষিটা থাকে। যে ছেলেটা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হলো, সে যেন কৃষকের কথা চিন্তা করে একটা সফটওয়্যার ডেভেলপ করে।
যাইহোক, সা¤প্রতিক সময়ে কৃষকের ধানের বাজারদর নিয়ে মিডিয়া বাজার খুব গরম, বিশেষ করে স্যোশাল মিডিয়া। আমি মনে করি বর্তমানে ধানের দর না থাকার পেছনে আমাদেরও দায় আছে, দায় আছে সবরকমের মিডিয়ার। ২০১৭ সালে আকস্মিক বন্যায় হাওড় অঞ্চলের ফসল নষ্ট হওয়ার ঘটনাটি মিডিয়াতে এমনভাবে ফোকাস পায় যেন দেশে খাদ্য ঘাটতি অবশ্যম্ভাবী। সরকার থেকে বলা হয়েছিলো, এই ক্ষতির ফলে ঘাটতি হবে ১০ লাখ টন চালের। সে সময় সাধারণ কৃষক থেকে শুরু করে চাল ব্যবসায়ী, আড়ৎদার, চাতাল মালিক লাভের প্রত্যাশায় প্রচুর চাল মজুদ করে। সরকারও আপতকালীন নিরাপত্তার জন্য বাইরে থেকে চাল আমদানি করে। চাল আমদানির শুল্ক ২৮% থেকে ২%- এ নামিয়ে আনা হয়। সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রচুর চাল আমদানি হয়। ২০১৭-২০১৮ সালে আমদানি হয় ৬০ লাখ টন চাল। কিন্তু সে বছর হাওড়ে ও উত্তরাঞ্চলে বন্যায় সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্য নষ্ট হয়। হাওড়ে বন্যায় ফসল নষ্ট হলেও সে বছর সারাদেশে বোরোর ফলন ভালো ছিলো। প্রকৃত অর্থে খুব বেশি ঘাটতি হয়নি। কিন্তু আমদানি থামেনি। সরকার আমদানি শুল্ক পুনরায় আরোপ করার আগেই প্রচুর এলসি খোলা হয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা লাভের প্রত্যাশায় প্রচুর চাল নিয়ে আসে। তারপর আমনেও বাম্পার ফলন। আর ২০১৮ সালেও ধানের ফলন বেশ ভালো হয়েছে।
যে লাভের আশায় চালকল মালিক, আড়ৎদার ও ব্যবসায়ীরা খাদ্য মজুদ করেছিলো, সেই আশায় গুঁড়েবালি। তাদের গুদামে এখনো পুরনো চাল রয়ে গেছে। ফলে তারাও এখন আর চাল কিনছে না। বেশ কয়েকজন চালকল মালিকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, বোরোর এই মৌসুমে সারাদেশে চালু রয়েছে মাত্র ১ হাজার চালকল। অথচ বোরো ধান কাটা শুরু হওয়ার সময় দেশের ১৬ হাজার চালকলের প্রায় সবকটিই চালু থাকতো। চালকল মালিকরা লোকসান গুনেছেন। তারা টাকা বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন না। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট। ব্যাংক ধান কিনতে ব্যবসায়ীদের টাকা দিচ্ছে না।
চালকল মালিকরা এ মৌসুমে ধান কিনছেন না- এটিই কৃষকের ধানের দর না পাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ। খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সরকারি গুদামের ধারণ ক্ষমতা ২১ লাখ মেট্রিকটন। বর্তমানে খাদ্য মজুদ আছে প্রায় ১৩ লাখ টন। সরকার এ মৌসুমে ১২ লাখ টন চাল কেনার কথা বলেছে, যা মোট উৎপাদনের ৫ শতাংশেরও কম। ফলে উদ্বৃত্ত চাল নিয়ে ধানের দরের এই সংকট কাটিয়ে ওঠা কঠিন ব্যাপার।
আমি অনেক দিন থেকে বলে আসছি সরকারের খাদ্যমজুদ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। সেটা কমপক্ষে ৫০ লক্ষ টন হওয়া উচিত। কৃষকের অভিযোগ, সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনে না। কৃষকের কাছ থেকে সরকার সরাসরি ধান না কেনারও কারণ আছে। সরকারি গুদামে ধান দিতে হলে সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ আর্দ্রতা নিশ্চিত করতে হয়। এসব ছাড়াও ধানের বাজারে অন্য কোন সিন্ডিকেট কাজ করছে কিনা সরকারের তা তলিয়ে দেখা উচিত। সম্পাদনায়: কায়কোবাদ মিলন।