বাকী বিল্লাহ : ভারতে দেওবন্দী আলেমরা সেক্যুলার শক্তিকে ক্ষমতায় দেখতে চেয়ে বিশেষ দোয়া করেছেন। বস্তুত আমিও সর্বাংশে তাদের সঙ্গে একমত। ভারতে সেক্যুলার, অসাম্প্রদায়িক শক্তিকেই ক্ষমতায় দেখতে চাই। কারণ ওখানে সংখ্যালঘু মুসলমান, খ্রিস্টান ও দলিতদের জন্য একটা মর্যাদাপূর্ণ-নিরাপদ ভারত রাষ্ট্রের প্রত্যাশী। আমি মনে করি না, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে ভারতের সব কিছু কেবল হিন্দুত্বের নিরীখেই হতে হবে। কিন্তু একইসঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায়ও একটি প্রকৃত সেক্যুলার, অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে দেখতে চাই (আওয়ামী লীগের মতো লুটেরা, ছদ্ম সেক্যুলার অবশ্যই নয়) যাতে করে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব ধর্ম ও জাতিসত্তার মানুষের জন্য সমান মর্যাদার একটি দেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই পয়েন্টে বাংলাদেশের দেওবন্দ বা চরমোনাই আলেমরা কি আমার সঙ্গে একমত হবেন?
তারা তো সারাক্ষণই বলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে সব কিছুই হতে হবে ইসলামী কেতায়। তারা তো অন্য সব আইন ছুড়ে ফেলে দিয়ে কেবল ইসলামী আইনের ভিত্তিতে রাষ্ট্র চালাতে চান। স্বাধীন ও মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশে নির্বিঘ্ন ধর্ম চর্চার অধিকার পৃথিবীর সব মানুষেরই রয়েছে এবং কালে কালে ধর্মাচ্ছন্ন রাষ্ট্রেই এটি সবচেয়ে বেশি বিঘ্ন হয়েছে। এমনকি পূর্ণাঙ্গ ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলেও গোটা পৃথিবীর রাষ্ট্র ক্ষমতায় সেক্যুলারদেরই থাকতে হবে। আয়রনি হচ্ছে এই মুহূর্তে সমস্ত পৃথিবীর মুসলমানরা ইউরোপে, আমেরিকায়, ভারতে সেক্যুলার-প্রগতিশীল-লিবারেলদের পেছনে দাঁড়িয়েছেন। কারণ তারা প্রত্যক্ষ করেছেন, ডানপন্থি উগ্রবাদীরা সবখানেই সংখ্যালঘু মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে আক্রান্ত করছে। সেখানে তাদের রক্ষায় ঢালের মতো কাজ করছে সেক্যুলার প্রগতিশীলরা। কিন্তু এই মুসলমানরাই আবার সব মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশকে ইসলামী আইনে, পরিপূর্ণ ইসলামী কেতায় দেখতে চান। তারা ভুলে যান, হিন্দু বা খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে মুসলমানদের যেমন স্বাধীন মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের অধিকার আছে ওই একই অধিকার মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে সংখ্যালঘু অন্য ধর্ম সম্প্রদায়েরও আছে। কিন্তু তারা ভাবতে ভালোবাসেন যে, এসব দেশে রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম এবং হিন্দু বা খ্রিস্টান সংখ্যালঘুরা জিজিয়া কর দিয়ে তাদের দয়ায় বেঁচে থাকবেন। একই যাত্রায় পৃথক ফলের আকাক্সক্ষার এই ভ-ামী থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। লেখক : সাবেক ছাত্রনেতা। ফেসবুক থেকে