আমিন মুনশি : স্বপ্নদোষ হলো একজন পুরুষের ঘুমের মধ্যে বীর্যপাতের অভিজ্ঞতা। এটাকে ‘ভেজাস্বপ্ন’ও বলা হয়। সাধারণ ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলেদের এবং প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার প্রাথমিক বছরগুলোতে স্বপ্নদোষ হয় খুব। তবে বয়ঃসন্ধিকালের পরে যেকোনো সময় স্বপ্নদোষ হতে পারে। এটার সাথে যৌন উত্তেজক স্বপ্নের সম্পর্ক থাকতে পারে, আবার নাও পারে। আবার পুরুষদের উত্থান ছাড়াই স্বপ্নদোষ ঘটতে পারে। ঘুম থেকে জাগার সময় কিংবা সাধারণ ঘুমের মধ্যে যে স্বপ্নদোষ হয়, তাকে কখনো কখনো ‘সেক্স ড্রিম’ বলে। মহিলাদেরও ঘুমের মধ্যে চরম পুলক লাভের অভিজ্ঞতা ঘটতে পারে।
স্বপ্নদোষের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হয়। কিছু পুরুষের টিনএজারদের মতো বেশিসংখ্যক স্বপ্নদোষ হয়, আবার অনেক পুরুষের একবারও হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের ৮৩ শতাংশ পুরুষের জীবনে কখনো না কখনো স্বপ্নদোষের অভিজ্ঞতা ঘটে। পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরের দেশগুলোতে ৯৮ শতাংশ পুরুষের স্বপ্নদোষের অভিজ্ঞতা ঘটে। অবিবাহিতদের ক্ষেত্রে, ১৫ বছর বয়সী ছেলেদের সপ্তাহে ০.৩৬ বার থেকে শুরু করে ৪০ বছর বয়সী পুরুষদের সপ্তাহে ০.১৮ বার স্বপ্নদোষ হয়। বিবাহিত পুরুষদের ক্ষেত্রে এই মাত্রা ১৯ বছর বয়সী ছেলেদের সপ্তাহে ০.২৩ বার থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষদের সপ্তাহে ০.১৫ বার হয়।
অনেকের প্রশ্ন, মাহে রমজানে রোজাবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা ভেঙে যায়? এর উত্তর হলো, স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙ্গে না। (সুনানে কুবরা বায়হাকি: ৪/২৬৪) হাদিস শরিফে এসেছে, হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন, নবি করিম সা. বলেছেন- তিনটি জিনিস রোজা ভঙ্গের কারণ নয়। যথা: বমি, শিঙ্গা লাগানো ও স্বপ্নদোষ। (সুনানে নাসাঈ, বাইহাকী ৪/২৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৬) তবে এ স্বপ্নদোষ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে না হতে হবে। এমনিভাবে যদি কোনো ব্যক্তির চিন্তায় আচমকা কোনো যৌন ভাবনা এসে উদয় হয় বা কোনো যৌন উত্তেজক চিন্তা চলে আসে যা সে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মাথায় আনেনি। আর এতে তার বীর্যপাত ঘটে যায় তাহলেও তার রোজা ভাঙবে না। এক্ষেত্রে হুকুম হলো, স্বপ্নদোষ হয়েছে এমনটা বোঝা মাত্রই ফরজ গোসল করে নিজেকে পবিত্র করে নিতে হবে। এ সংক্রান্ত আরেকটি মাসআলা হলো, হস্তমৈথুন। কেউ যদি হস্তমৈথুন বা অন্য কোনোভাবে স্বেচ্ছায় বীর্যপাত ঘটায় তাহলে তার রোজা ভেঙে যাবে। এবং তাকে রোজার কাযা এবং কাফফারা উভয়টি আদায় করতে হবে।
শুধু যৌন চিন্তার কারণে বীর্যপাত হলে রোজা ভাঙ্গবে না। তবে এ কথা বলাই বাহুল্য, সব ধরনের কুচিন্তা তো এমনিতেই গুনাহ আর রোজার হালতে তো তা আরো বড় অপরাধ। কামভাবের সঙ্গে কোনো মহিলার দিকে তাকানোর ফলে কোনো ক্রিয়া-কর্ম ছাড়াই বীর্যপাত হলে রোজা ভাঙ্গবে না। তবে রোজা অবস্থায় স্ত্রীর দিকেও এমন দৃষ্টি দেওয়া অনুচিত। আর অপাত্রে কু-দৃষ্টি তো কবিরা গুনাহ। যা রোজা অবস্থায় আরো ভয়াবহ। এতে রোজাদার রোজার ফজিলত ও বরকত থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। হজরত জাবের ইবনে যায়েদকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীর দিকে কামভাবের সঙ্গে তাকিয়েছে। ফলে তার বীর্যপাত ঘটেছে তার রোজা কি ভেঙ্গে গেছে? তিনি বললেন, ‘না। সে রোজা পূর্ণ করবে।’ (সহিহ বোখারি : ১/২৫৮)