ডেস্ক রিপোর্ট : সুদমুক্ত গাড়ি ঋণ সুবিধা গ্রহণে এখন থেকে এক শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিতে হবে প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের। ২৫ এপ্রিল সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। এদিকে জনপ্রশাসনের বাইরেও সংসদ সচিবালয় ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব এবং তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত গাড়ি কেনার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছর থেকে এ দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রাধিকারভুক্ত কর্মকর্তারা ঋণ সুবিধা পেতে শুরু করবেন। জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে মৌখিক সম্মতি পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।বাংলা ট্রিবিউন।
জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থ বছর থেকে উপসচিব ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের জন্য সরকার এ সুদমুক্ত গাড়ি ঋণ সুবিধা চালু করেছে। গত দুটি অর্থ বছরে প্রাধিকারপ্রাপ্ত এসব কর্মকর্তাদের বড় অংশ ইতোমধ্যে তাদের ঋণ সুবিধা গ্রহণ করেছেন। এছাড়া বেশ কিছু কর্মকর্তার আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ঠিক এই সময় সরকার ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে এক শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ যুক্ত করলো।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ এপ্রিলের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- ‘প্রধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম এবং গাড়ি সেবা অগ্রিম নগদায়ন ২০১৮ (সংশোধনী) এর নীতি ৬(৪) অনুযায়ী প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গাড়ি ক্রয় এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচাদি যেমন রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন ইত্যাদি খরচ নির্বাহের জন্য এককালীন সুদমুক্ত ঋণ বাবদ ৩০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলো। এ সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব শরীফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপনটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে বলা হয়েছে।
নতুন সার্ভিস চার্জ বিষয়ে জানতে চাইলে ঋণপ্রত্যাশী সরকারের উপসচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনিও শুনেছেন নতুন করে যাদের গাড়ি ঋণ দেওয়া হবে তাদেরকে এক শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। ঋণের সবকিছু সরকারি পর্যায়ে সম্পন্ন হয় বিধায় এই সার্ভিস চার্জ ধার্য করা উচিত হবে না। আগে যারা ঋণ নিয়েছে তাদের থেকে সার্ভিস চার্জ না নিয়ে কেবল নতুনদের ক্ষেত্রে এটা এক ধরনের অবিচার বলেও মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপ সচিব শরীফুল ইসলাম বলেন, এখন থেকে যারা ঋণ পাবেন তাদের ক্ষেত্রে এই সার্ভিস চার্জের বিষয়টি কার্যকর হবে। আগে যাদের ঋণ দেওয়া হয়েছে তাদের ঋণচুক্তিতে যেহেতু সার্ভিস চার্জের বিষয়টি ছিল না কাজেই এটা তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে না।
এই সিদ্ধান্তে নতুনরা বঞ্চিত হবেন কী না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার যেভাবে ভাবছে যেভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এক্ষেত্রে আমার কোনও মন্তব্য নেই।
সুদমুক্ত গাড়ি পাচ্ছেন ইসি ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারাও
সরকারের প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মতো সংসদ সচিবালয় ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারাও ৩০ লাখ টাকা সুদমুক্ত গাড়ি ঋণ পেতে যাচ্ছেন। নতুন অর্থ বছর থেকে তারা এই ঋণ সুবিধা পেতে শুরু করবেন বলে জানা গেছে। জানা গেছে, সংসদ সচিবালয় ও ইসি সচিবালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কয়েক দফায় চিঠি চালাচালি শেষে এই সম্মতি এসেছে। তবে, সরকারের এই দুটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন পদ্ধতি নেওয়া হচ্ছে। জাতীয় সংসদ ও নির্বাচন কমিশনের জন্য যেহেতু আলাদা বাজেট হয় সেই কারণে তাদের ঋণের বিষয়টি বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের গাড়ি ঋণের জন্য কী পরিমাণ অর্থ দরকার হবে তা তারা বাজেটে চাহিদা আকারে দেবে এবং অর্থ মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী বরাদ্দ প্রদান করবে।
এর কারণ জানতে চাইলে জনপ্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারের আরও অনেক দফতর রয়েছে যেখানে উপসচিব বা তার থেকে উচ্চ পদ মর্যাদার নিজস্ব কর্মকর্তা রয়েছে। এক্ষেত্রে জনপ্রশাসন থেকে নির্বাচন কমিশন বা সংসদ সচিবালয়কে গাড়ি ঋণ দেওয়া হলে অন্যদের থেকেও দাবি উঠবে। যেটা সরকারকে কিছুটা হলেও চাপে ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে তারা নিজস্ব বাজেটের মধ্যে ঋণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে নিলে অন্যান্য দফতর থেকে সেই চাপ আসার সুযোগ থাকবে না।
ঋণের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে ঋণপ্রাপ্তির বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে, আমরা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও সিদ্ধান্ত জানতে পারিনি। আমরা মনে করি যে প্রক্রিয়ায় হোক না কেন আমাদের কর্মকর্তাদেরও এই ঋণ পাওয়া উচিত।