সজিব হোসাইন : বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারত এবং এই দেশটির সবচেয়ে বৃহৎ লিখিত সংবিধান রয়েছে। যদিও দেশটি হিন্দু প্রধান দেশ, তারপরও এখানে প্রায় ১৫ কোটি মুসলিম বাস করে। মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে ইন্দোনেশিয়ার পর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ভারত। ভারতীয় অনেক মুসলমানই সেলিব্রেটি। এছাড়া ভারতজুড়েই বহু মুসলমান সরকার ব্যবস্থা ও উচ্চ মর্যাদা বা অবস্থানে রয়েছেন। তবে সেখানে মুসলিমদের মধ্যে দারিদ্রতা ও অশিক্ষার হারও বেশি। এছাড়া হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় মুসলিমদের প্রাণ গেছে বেশি।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে আপাতদৃষ্টিতে এক অসাধারণ রায় দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। রায়ে বলা হয়েছে, একসঙ্গে তিনবার তালাক উচ্চারণ করে বিবাহ বিচ্ছেদ ইসলামের মূল নীতির পরিপন্থী এবং এটি অবৈধ ও অসাংবিধানিক। লোকসভায় তিন তালাক বিলটি পাস হয়েছে। বিলটির শিরোনাম দেয়া হয়েছে মুসলিম নারী (বিবাহের অধিকার রক্ষা) বিল, ২০১৭ এবং এর লক্ষ্য বিবাহিত মুসলিম নারীদের অধিকার রক্ষা এবং স্বামীদের তালাক শব্দটি উচ্চারণের মাধ্যমে বিচ্ছেদকে প্রতিরোধ করা। বিল অনুযায়ী, স্বামী তার স্ত্রীকে তিন তালাক শব্দটি উচ্চারণ করলে, লিখিতভাবে দিলে বা ফোনে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে বা অন্য যেকোনো উপায়ে এই শব্দটি ব্যবহার করলে তা অকার্যকর ও অবৈধ হবে।
অর্থাৎ বিল অনুযায়ী, তিন তালাক অপরাধ। এই অপরাধ বিচার্য এবং জামিন অযোগ্য। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী, যে ব্যক্তি তিন তালাক শব্দটি উচ্চারণ করবে তার সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদ- পর্যন্ত হতে পারে। বিলটি খুবই বিতর্কিত। কারণ কিছু মুসলিম নেতা মনে করেন, মুসলিম আইন অনুযায়ীÑবিবাহ এক সামাজিক চুক্তি। কেউ যদি এই চুক্তি লঙ্ঘন করে, তাহলে সে সিভিল কোর্টে যাবে। এর পেছনে কারণ কী? কেন তিন তালাক এক অপরাধ? অনেকেরই মতে, এটি বিজেপি সরকারের এক সাম্প্রদায়িক এজেন্ডা। এই বিল মুসলিম নারীদের রক্ষা করবে না, কিন্তু এর মাধ্যমে মুসলিম পুরুষদের আক্রমণ করা যাবে, অন্য এক আইন তৈরি করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পুরুষদের অপরাধী ও অবদমন করা যাবে। সর্ব ভারতীয় মুসলিম পারসোনাল ল’ বোর্ডের সদস্য কামাল ফারুকী জানিয়েছেন, বিলটি সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর নির্যাতন ও মুসলিম সম্প্রদায়কে চাপে রাখার এক অন্যতম প্রচেষ্টা। তাই এটা পরিষ্কার যে, এই বিলটি মুসলিম নারীদের জন্য, কিন্তু নারীদের সম্পত্তির বণ্টন ও অন্য কোনো বিধান যেখানে নারীরা বঞ্চিত হয়Ñসেখানে নারীদের রক্ষা করা হয় না।
ভারতের সাধারণ নির্বাচন চলছে এবং এই নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে মুসলিমদের ভোট এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ দেশটির মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশই মুসলিম এবং দেশটির মোট জনসংখ্যা অন্তত ১২১ কোটি। ফলে একজন প্রার্থী যদি মুসলিমদের ভোট নিশ্চিত করতে পারে তাহলে সে জয়ের ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত হতে পারে। ফলে এই আলোচনা থেকে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ভারতের নির্বাচনে যদি কোনো প্রার্থী জয়ী হতে চায় তাহলে তাকে মুসলিমদের ভোট পেতেই হবে। নইলে তার জয়ী হওয়াটা প্রায় অসম্ভব।লেখক : স্বাধীন গবেষক