শিরোনাম
◈ বিদেশে আশ্রয় আবেদনে শীর্ষে বাংলাদেশিরা: বাড়ছে আবেদন, কমছে স্বীকৃতি ◈ মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গুম অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ ◈ মাঝরাতে কক্সবাজারে ৪.৯ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত ◈ যেসব সুবিধা পান রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা  ◈ আইআরআই জরিপ: ইউনূস সরকারের প্রতি আস্থা অটুট, ৮০% বাংলাদেশি অবাধ–সুষ্ঠু নির্বাচনে আশাবাদী ◈ খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনায় মোদির বার্তা: চিকিৎসায় সর্বাত্মক সহযোগিতায় প্রস্তুত ভারত ◈ খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করেছে সরকার ◈ ইন্টার মিলা‌নের জয়, জোড়া গোল করে ইতিহাস লাউতারোর ◈ প্রাথমিক শিক্ষকদের মঙ্গলবারও কর্মবিরতি, হবে না বার্ষিক পরীক্ষা ◈ ২০২৬ থেকে বাধ্যতামূলক সিবিএমএস: বন্ড ব্যবস্থাপনায় পূর্ণ ডিজিটাল যুগে এনবিআর

প্রকাশিত : ২১ এপ্রিল, ২০১৯, ০৩:০৪ রাত
আপডেট : ২১ এপ্রিল, ২০১৯, ০৩:০৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শবে বরাত সম্পর্কে কিছু জানা-অজানা

ইমদাদুল হক যুবায়ের : হিজরি শাবান মাসের একটি বিশেষ রাত ‘শবে বরাত’। আমরা অনেকে বাংলায় যাকে ‘ভাগ্য রজনী’ বলি। কিছু হাদীস প্রচলিত আছে, এ রাত্রিতে ভাগ্য অনুলিপি করা হয় বা পরবর্তী বছরের জন্য হায়াত-মওত ও রিজিক ইত্যাদির অনুলিপি করা হয়। মুহাদ্দিসগণ একমত- এ অর্থে বর্ণিত হাদীসগুলোর সনদ অত্যন্ত দুর্বল, জাল অথবা বানোয়াট। কারণ, এ বিষয়ে কোনো হাসান বা সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়নি।

এ রাত্রিতে করতে হবে এমন নির্দিষ্ট কোনো আমলের বর্ণনা সম্পর্কিত কোনো সহীহ হাদীস পাওয়া যায় না। তবে কয়েকটি জয়ীফ হাদীস থেকে তিনটি আমল জানা যায়, প্রথমত: কবর জিয়ারত করা। দ্বিতীয়ত: দুআ করা এবং তৃতীয়ত: নফল সালাত আদায় করা। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘এ রাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) রাতের গভীরে কাউকে না বলে একাকী জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে দোয়া করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রহ.) উল্লেখ করেছেন যে, তাঁর উস্তাদ ইমাম বুখারী (রহ.) হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন। (আহমদ বিন হাম্বল, আল-মুসনাদ, খন্ড-৬, পৃ. ২৩৮)

অন্য একটি হাদীসে বর্ণনা এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা রাতে দন্ডায়মান থাক এবং দিনে সাওম পালন কর। কারণ, ঐ দিন সূর্যাস্তের পর মহান আল্লাহ পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, ‘কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। কোনো রিজিক অনুসন্ধানকারী আছে কি? আমি তাকে রিজিক প্রদান করব। কোনো দুর্দাশাগ্রস্থ ব্যক্তি আছে কি? আমি তাকে মুক্ত করব। এভাবে সুবহে সাদিক উদয় হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে।’ (ইবনু মাজাহ, আস-সুনান, খ-১, পৃ. ৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৮) এ হাদীসের একমাত্র বর্ণনাকারী ইবনু আবী সাবরাহকে ইমাম আহমদ, ইমাম বুখারী ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ মিথ্যাবাদী বলে অভিযুক্ত করেছেন। (তাহযীবুত-তাহযীব, খন্ড-১২, পৃ. ২৫-২৬) এছাড়া এ অর্থে আরো কয়েকটি জয়ীফ (দুর্বল) সনদের হাদীস থেকে এ রাতে দোয়া ও সালাত আদায়ের ফযীলত জানা যায়।

তাই আমাদের উচিত হবে প্রথমত: এ রাতে কোনো ইবাদতকে নির্দিষ্ট না করে বা ইবাদতে বিশেষ কোনো পদ্ধতি নির্ধারণ না করে যেকোনো ধরণের ইবাদতে মশগুল থাকা। কারণ, সালাত বা ইবাদতের কোনো সুনির্ধারিত নিয়ম হাদীসে বলা হয়নি। যেমন, অমুক সূরা অতোবার পড়লে বা অতো রাকাত সালাত আদায় করলে অতো সওয়াব ইত্যাদি যা কিছু বলা হয় সবই জাল ও বানোয়াট কথা। একজন মুমিন তার সুবিধামতো যে কোনো সূরা দিয়ে যে কয় রাকআত সম্ভব নফল সালাত আদায় করবেন এবং দুরূদ, ইস্তেগফার তথা নিজের অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও আল্লাহর কাছে রহমত বর্ষণের দুআ করবেন।

দ্বিতীয়ত: কবর যিয়ারত, দুআ ও নফল সালাত সবই একাকী করা। একজন মুমিন এ রাতে নিজের প্রয়োজনীয় দুআ করবেন। কারণ, এ রাতের জন্য নির্ধারিত বিশেষ কোনো পাঠ্য দুআ নেই। রাসূলুল্লাহ (সা.) বা সাহাবীগণ কেউ কখনোই এ রাতে মসজিদে সমবেত হননি বা সমবেতভাবে কবর জিয়ারত করতে যাননি। তাছাড়া সকল নফল সালাত ও তাহাজ্জুদ নিজের বাড়িতে পড়া সুন্নত। কারণ, বাড়িতে সালাত আদায় করলে বরকত নাজিল হয় এবং এতে স্ত্রী ও সন্তানগণও ইবাদত পালনে অনুপ্রাণিত হয়।

অনেকে শবে বরাতের কম বেশি সালাত আদায় করেন, কিন্তু ভোরে ফজরের সালাত জামায়াতে আদায় করতে পারেন না বা ঘুমের কারণে অনেক সময় ফজরের সালাত পড়তেই পারেন না। এর চেয়ে কঠিন আত্মপ্রবঞ্চনা আর কিছুই হতে পারে না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, মুমিন যদি একটু আগ্রহী হন তবে প্রতি রাতই তার জন্য শবে বরাত।

বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য ইমাম সংকলিত সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রতি রাতে রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে আল্লাহ প্রথম আসমানে নেমে বলেন, ‘আমিই রাজাধিরাজ, আমিই রাজাধিরাজ। আমাকে ডাকার কেউ আছ কি? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। আমার কাছে চাওয়ার কেউ আছ কি? আমি তাকে প্রদান করব। আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কেউ আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। প্রভাতের উন্মেষ হওয়া পর্যন্ত এভাবে তিনি বলতে থাকেন।’ (মুসলিম, আস-সহীহ, খ-১, পৃ. ৫২২)

আসুন, আমরা সবাই সহীহ ত্বরিকায় আল্লাহর দরবারে বারবার প্রার্থনা করি। নিজেদের অন্তরগুলোকে সকল প্রকার শিরক, হিংসা-বিদ্বেষ ও অহংকার থেকে বিরত রাখি এবং স্বীয় অন্তরাত্মাকে এসব থেকে পবিত্র করি। জাগতিক বা ধর্মীয় মতভেদের কারণে যাদের প্রতি শত্রুভাব বা বিদ্বেষ ছিল তাদের জন্য দু‘আ করি। তাহলে আমাদের কয়েকটি লাভ হবে। প্রথমত: কঠিন পাপ থেকে তাওবা করা হবে। দ্বিতীয়ত: শবে বরাতের সাধারণ ক্ষমা লাভের সুযোগ হবে। তৃতীয়ত: হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত অন্তরাত্মা তৈরি হবে। আল্লাহ আমাদেরকে সহীহ তরিকায় বিদআত মুক্ত ইবাদত পালন করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়