সৈয়দ হাসান ইমাম : স্বাধীনতার পর থেকে অনেক বড় বড় অর্জন আমাদের আছে। আমাদের কল্পনাতীত অর্জন অর্থনীতিতে। অন্যান্য জায়গায় আমাদের অগ্রগতি দৃশ্যমান। অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। যেমন খেলাধুলা, শিল্প-সংস্কৃতিতেও অনেক অর্জন আছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন সব ডিপার্টমেন্ট খোলা হয়েছে। সেখানে বিদেশ থেকে যারা পাস করে আসছে তারা শিক্ষকতা করছে। একসময় আমরা এই সুযোগগুলো পাইনি। আমরা স্বশিক্ষিত শিল্পী। এখন আমাদের শিল্পীরা প্রযুক্তিতেও শিল্পী হচ্ছে।
এসব ক্ষেত্রেও আমাদের অনেক অর্জন। শিক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি, অর্জন উল্লেখযোগ্য। ঘরে ঘরে এখন শিক্ষা। প্রায় সব শিশুই বিদ্যালয়ে যায়। পড়ালেখা করে ছেলেমেয়েরা। কিন্তু শিক্ষার মান আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ। এখানে আমরা অতোটা ভালো করতে পারিনি, যতোটা ভালো হওয়া উচিত ছিলো। এখানে আমাদের কিছুটা ব্যর্থতা রয়েছে। শিক্ষার প্রসারটা আগের থেকে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে নিরক্ষরের সংখ্যা যা ছিলো, এখন তার থেকে অনেক কম।
সমাজে নারীর অবদান বেড়েছে। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় কাজ করছে। নারীর ক্ষমতায়নের জায়গাটায় যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। কিন্তু আমাদের ব্যর্থতা হচ্ছে রাজনীতির ক্ষেত্রে। রাজনীতি নিয়ে আমাদের সহনশীলতা প্রায় নেই বললেই চলে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি মানুষের মনে যে অন্ধকার ছড়িয়েছিলো পাকিস্তান আমলে, সেই অন্ধকার এখনো আমরা দূর করতে পারিনি।
এখনো অনেক মানুষই মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক থেকে গেছে। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে অর্জন তা নতুন প্রজন্মকেও অনুপ্রাণিত করছে। তারা খুবই তীক্ষè বুদ্ধির। তারা অনেক ভালো করবে আমাদের চেয়ে। এখন আমাদের যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা করে মানুষকে একতাবদ্ধ করা। এখন তিনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থাÑবাংলা, ইংরেজি ও উর্দু-আরবি মাধ্যম। এই মাধ্যমগুলো করাতে তিন রকমের মানুষ তৈরি হচ্ছে। ফলে আমাদের অনেক টাকা বিনষ্ট হচ্ছে। আমরা যদি মানুষকে একমুখী শিক্ষায় একত্রিত করতে পারি তাহলে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যাবে।
আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলোÑসন্ত্রাস এবং সাম্প্রদায়িকতা।
সেটাকে মোকাবেলা করতে হবে আমাদের। মানুষের মন থেকে অন্ধকার দূর করতে হবে। পশ্চাৎপদতা দূর করতে হবে। অস্ত্র দিয়ে এটা দূর করা যাবে না। সেটা করার জন্য সুশিক্ষার দরকার। সুসংস্কৃতির দরকার। সংস্কৃতির বিকাশ, চর্চার মাধ্যমেই মৌলবাদ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখা যেতে পারে। মানসম্পন্ন শিক্ষাই পারে দেশকে এগিয়ে যেতে বিরাট ভূমিকা রাখতে। সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা, অপসংস্কৃতিসমূহ বর্জন করে মানসম্পন্ন শিক্ষা ও একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এসব বাস্তবায়ন করতে পারলে আমরা অকল্পনীয়ভাবে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবো। পরিচিতি : মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
আপনার মতামত লিখুন :