স্বপন দেব, মৌলভীবাজার : সময়মতো ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ,কুলাউড়া, বড়লেখাসহ বিভিন্ন উপজেলার অনেক কৃষকরা কৃষি জমির উর্বর মাটি বিক্রি করছেন স্থানীয় ইটভাটাগুলোতে। কৃষকদেরদাবী কৃষি জমিতে ফলানো ধানে মণ প্রতি ৫শ’ টাকার উপরে খরচ হয়। অথচ উৎপাদনের পর ৪শ’ সাড়ে ৪শ’ টাকায় বাজারে বিক্রি করতে হয়। কষ্ট করে ফসল ফলানোর পরে লোকসান হয়। ক্ষেত করে কোন লাভ নেই। বড়লোক মহাজনরা কম দামে ধান কিনিয়া স্টক করার পর দাম বাড়ে। আমরা কৃষকর কিতা লাভ। জমির মাটি বেচলে ভালো টেকা (টাকা) পাওয়া যায়। ক্ষেতর জমিনর এক ফুট পরিমাণ গভীর করিয়া মাটি বেচি লাইছি। এখন এই জমিত ক্ষেত না করিয়া পুকুর করাই লাভ।” ক্ষোভে দু:খে কথাগুলো বলেন কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউুনিয়নের বৈরাগির চক গ্রামের কৃষক আবুল কালাম।
সরেজমিন কমলগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে বিভিন্ন স্থানে কৃষি জমির উর্বর মাটি কেটে ট্রাক যোগে ইট ভাটা সমূহে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইট তৈরির কাজে তুলনা মূলক কম দামে মাটি কিনে ভাটায় স্তুপীকৃত করা হচ্ছে। আর্থিক সুবিধা লাভে কৃষকরা জমির উবর্র মাটি বিক্রি করছেন। ফলে আবাদি এসব জমি হারাচ্ছে উর্বরতা। কৃষির উৎপাদনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ছে। পরিবেশেরও ক্ষতি বয়ে আনছে। তবে কৃষকরা সময় মতো ধানে দাম না পাওয়া, অর্থনৈতিক সমস্যা দূর করতে এবং ইটভাটা মালিকদের চাহিদার কারণে মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে কৃষকরা জানান।
পতন ঊষারের কৃষক জিয়াউল হক, পরিমল দেবনাথ, কয়সর মিয়া, এনামুল হক বলেন, গরিব কৃষকদের বেলায় ধানের চারা রোপনের পর দোকান থেকে সার-কীটনাশক বাকিতে আনতে হয়। এরপর শ্রমিকের খরচসহ আনুষঙ্গিক অনেক খরচ লাগে। ফসল উঠার পর দোকান বাকির টাকা পরিশোধ করতে হয়। তখন বাধ্য হয়েই কমদামে ধান বিক্রি ছাড়া কোন উপায় থাকে না। কৃষকরা আরও বলেন, এ সময়ে লোকসান দিয়ে ধান বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে হয়। আবার মহাজনরা যখন ধান কিনে নেন তখন ধানের দাম বেড়ে যায়। লাভ হয় মহাজনী ব্যবসায়ীদের। তাই অনেক সময় ইচ্ছের বিরুদ্ধেও জমির উর্বর মাটি বিক্রি করতে হয়। তবে জমির উপরের উর্বর মাটি কৃষির জন্য খুবই উপকারী বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন।
উপজেলার মাঠ পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোপাল দেব বলেন, কৃষি জমির উর্বর মাটি খুবই জটিল বিষয়। উর্বর মাটির ছয় ইঞ্চি পরিমাণ গভীরতা চাষাবাদ উপযোগী। এই মাটি সরিয়ে ফেলা হলে পরের বছর সমুহে ভালো ফলন হয় না। প্রচুর গোবর-সার দিয়ে মাটি তৈরি করতে হয়। জমিতে প্রচুর পরিমাণ কৃত্রিম সার লাগে। পুণরায় মাটির উর্বরতা সৃষ্টি হতে কমপক্ষে দশ থেকে পণের বছর সময় লেগে যায়। এটি কৃষিজমির জন্য খুবই ক্ষতিকর।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর সিলেট বিভাগীয় সমম্বয়ক এড. শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, কৃষিজমির উপরের ৬ ইঞ্চি পরিমাণ মাটি উর্বর। এই মাটি চলে গেলে উৎপাদনে প্রভাব পড়বে এবং পরিবেশেরও ক্ষতির সৃষ্টি হবে।