রমজান আলী: গত ১০ বছরে দেশে ব্যাংকিং পরিধি অনেক বেড়েছে। এখন শহরের মতো গ্রামীণ জনগণও ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছেন। ব্যাংকের শাখা ও এজেন্ট ব্যাংকিং এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এ সুবিধা দিচ্ছে। পাশাপাশি একই সঙ্গে খেণাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে চার গুণ। ২০০৯ সালে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। আর গত সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ৪ গুণ। এর বাইরে দীর্ঘদিন আদায় করতে না পারা যেসব ঋণ ব্যাংকগুলো অবলোপন করেছে, তার পরিমাণ প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
এছাড়া সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছানোর জন্য ১০ বছরে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে স্কুল ব্যাংকিং, ১০ টাকার একাউন্টের বিপরীতে কৃষকের সঞ্চয় ও ঋণগ্রহণ, পথশিশুদের সঞ্চয়ের জন্য ব্যাংকিং, ব্যাংকিং অভ্যাস গড়ার জন্য এটিএম কার্ডের ব্যবহার ইত্যাদি কার্যক্রম রয়েছে। ২০১০ সালে এ সব ব্যাংকিং কার্যক্রম শুকরার পর থেকে আশানুরূপ অগ্রগতিও হয়েছে। তবে ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ বছরেই দেখা যায় অগ্রগতির হার দ্বিগুণ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে শুধু মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সেবাদানকারী এজেন্ট বেড়েছে প্রায় ১৪০ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এজেন্ট ছিল ৩ লাখ ৪৬ হাজার ১৭ জন। পাঁচ বছর পর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ২৯ হাজার ৭৮৩ জন। বেড়েছে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৬০৪ জন। একই সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সেবা নেওয়া মানুষের হার বেড়েছে ২৭৬ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৬২ হাজার ৬১০ জন। পাঁচ বছরে বেড়ে সেবা নেওয়া মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ১৮ লাখ ৬২ হাজার ৯৮২ জন। পাঁচ বছরে বেড়েছে ৪ কোটি ৫৪ লাখ ৩৭২ জন।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট বেড়েছে ১৯৯ গুণ বা ১৯,৮৮৯ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ১৮ জন। ২০১৭-১৮ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৯৮ জন। বৃদ্ধির পরিমাণ ৩৫৮০ জন। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সেবা নেওয়া মানুষ বেড়েছে ৫৭১ গুণ বা ৫৭,১০৭ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নেওয়া মানুষের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ১১৭ জন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এসে এ পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ জন। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সেবা নেওয়া মানুষের পরিমাণ বেড়েছে ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৩৯ জন। পাঁচ বছরে এটিএম বুথ বেড়েছে ৬৯ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ৫ হাজার ৭৭৮টি। পাঁচ বছরে বেড়ে হয়েছে ৯ হাজার ৭৪৭টি। বৃদ্ধির পরিমাণ ৩ হাজার ৯৬৯ জন।
তথ্যমতে, সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৮০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩১ দশমিক ২৩ শতাংশ। গত জুন শেষে ছিল ২৮ দশমিক ২৪ শতাংশ। এর মধ্যে ক্রিসেন্ট ও অ্যাননটেক্স গ্রুপের কারণেই জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ৪৩ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশই খেলাপি। গত জুন শেষে যা ছিল ৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বর শেষে বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের (কৃষি ও রাজশাহী কৃষি) খেলাপি ঋণের হার বেড়ে হয়েছে ২১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। আর বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার প্রায় ৭ শতাংশ।
এব্যাপারে সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের শক্ত অবস্থান না নেওয়ার কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ আদায় করার জন্য চাপ সৃষ্টি করতো তাহলেই অনেকটাই খেলাপি কমে যেত। এছাড়া যে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ আদায় ব্যর্থ হবে, সেই ব্যাংকগুলোর শাখা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দিতো বাংলাদেশ ব্যাংক। তাহলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে যেত। কারণ ব্যাংকগুলো জানে কার কাছে খেলাপি ঋণ কত আছে। তাহলে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ ঠিকই আদায় করতো। বাংলাদেশ ব্যাংক কোন শাস্তির ব্যবস্থা করছে না ফলে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ নিয়ে তেমন কোন মাথা ব্যথা নেই। সম্পাদনা: সোহেল রহমান