শিরোনাম
◈ অহেতুক চাপ সৃষ্টি করতে জামায়াতের কর্মসূচি: মির্জা ফখরুল ◈ জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে সাত দল ◈ স্ত্রী আসলেই নারী কি না প্রমাণ দেবেন ম্যাখোঁ ◈ আগামী বছরের বইমেলার সময় পরিবর্তন ◈ সৌদি-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তি, যা জানালো ভারত ◈ সরকারি কর্মচারীদের জন্য বড় সুখবর: অবসরে বাড়ছে সুযোগ-সুবিধা, কমছে অপেক্ষাকাল ◈ আগামীকাল ৮ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় ◈ সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হামলায় যমুনা টিভির সাংবাদিকসহ আহত ৫ ◈ ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় রাজনৈতিক মতভিন্নতার শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে: প্রেস সচিব ◈ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ফের গরম হচ্ছে রাজপথ

প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০২:৪৬ রাত
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০২:৪৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পরিশ্রম

ড. এমদাদুল হক : ছাটবেলা থেকে আমরা নীতিকথা দ্বারা পীড়িত যে, ‘পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি’। সৌভাগ্য যে কী, যদিও আমরা তা জানি না, তবু পরিশ্রম করে যাচ্ছি অবিরত।

আমরা শিশুদের ঘুমোতে দেই না। সকালে শিশু যখন গভীর নিদ্রায় সুখস্বপ্নে মগ্ন থাকে, আমরা তাদের জোর করে স্কুলে পাঠাই। আড়াই বছরের শিশু ঘুমে ঢুলুঢুলু, তাকে স্কুলে পাঠানো হচ্ছে- ভাবা যায়?

মানবজাতির এই বিপথগমন রোধ করার পরিবর্তে ধর্মবেত্তা, রাজনীতিক ও দার্শনিকরা আরো বেশি পরিশ্রমী হওয়ার মন্ত্র দিচ্ছে, আর মানুষ অন্ধের মতো এই বিভ্রান্ত মন্ত্রে দিক্ষীত হয়ে জীবনকে পরিণত করছে যুদ্ধক্ষেত্রে। প্রতিযোগিতা, বিরোধিতা ও সংঘর্ষে ভরে গেছে মানুষের জীবন। মাথাপিছু আয় কিছুটা বেড়েছে বটে, কিন্তু শান্তি গেছে উধাও হয়ে।

মানুষ ঝাপিয়ে পরিশ্রম করছে, আর উৎপন্ন হচ্ছে দুঃখ। পরিশ্রম ও পারিশ্রমিকের প্রমত্ত আকর্ষণ কেড়ে নিচ্ছে আনন্দ প্রাপ্তির সামর্থ্য ও প্রাণশক্তি।

পরিশ্রম আর কর্ম কিন্তু এক নয়। পরিশ্রম করা মানে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে শ্রম দেওয়া। ছয়দিন কাজ করে ঈশ্বর অনন্তকালের জন্য বিশ্রামে চলে গেছেন। এ থেকে কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নেয়া যায় যে মানুষ সপ্তাহে ছয়দিন কাজ করে ১ দিন বিশ্রাম নিবে? সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করার কোনো জৈব অপরিহার্যতা আছে কি?

কৃষক, শ্রমিক, দোকানদার এদের মধ্যে কে আছে, যে কাজ করে আনন্দ পায়, তাই কাজ করে?

আধুনিক কল-কারখানাগুলোতে শ্রমিকরা কারারুদ্ধ, নিপীড়িত ও নির্যাতিত। মানুষকে বাধ্য করা হচ্ছে দৈনিক ১২ঘণ্টা কাজ করতে। শুধু পুরুষ শ্রমিকরা নয়- নারী ও শিশুরাও ঐসব কারাগারে বন্দি। ঐসব কারখানার মালিকরাই উচ্চকণ্ঠে প্রচার করে- ‘পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি‘।

শ্রমদাস-দাসীরা শোষকদের দর্শনে উদ্ভুদ্ধ হয়ে সারাজীবন দাসত্ব করে। কিন্তু সৌভাগ্য তাদের জীবনে আসে না। সৌভাগ্য আসে কারখানার মালিকদের জীবনে- যারা পরিশ্রম করে না।

শুধু অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে কেউ ধনী হয়েছে এমন প্রমাণ পৃথিবীর ইতিহাসে নেই।

সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করে দরিদ্ররা। তারা সকালে ঘুম থেকে উঠে ধনীদের সেবা তৈরী করে। কৃষকরা ভোরে ঘুম থেকে উঠে ক্ষেতে যায়, সন্ধ্যার পরপরই ঘুমিয়ে পড়ে।

দঊধৎষু ঃড় নবফ বধৎষু ঃড় ৎরংব সধশবং ধ সধহ যবধষঃযু বিধষঃযু ধহফ রিংবড়- কে জানি বলেছিল কথাটা? যে-ই বলে থাকুক, কথাটি ঠিক না। সকালে ঘুম থেকে উঠলে, আর সকাল-সকাল ঘুমিয়ে পড়লেই যদি হেলডি ওয়েলডি ওয়াইজ হওয়া যেত, তবে কৃষকরাই হতো সবচেয়ে হেলডি ওয়েলডি ওয়াইজ। কিন্তু বাস্তবে কি দেখি আমরা? সমাজের সবচেয়ে বঞ্চিত, সবচেয়ে দরিদ্র হচ্ছে কৃষক শ্রেণি। অথচ তারাই সবচেয়ে পরিশ্রমী।

সারা পৃথিবীর কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষ তাড়াতাড়ি ঘুমায় আর তাড়িতাড়ি ঘুম থেকে উঠে কিন্তু কেউ স্বাস্থ্যবান, ধনী ও জ্ঞানী হয় না। তবুও ঐ বাজে ছড়াটির পীড়ন অব্যাহত আছে- দঊধৎষু ঃড় নবফ বধৎষু ঃড় ৎরংব সধশবং ধ সধহ যবধষঃযু বিধষঃযু ধহফ রিংবড়

একজন শ্রমিক ১০০ ঘণ্টায় যে বস্ত্র বয়ন করতে পারে মেশিন তা পারে ১ মিনিটে। অর্থাৎ ১ মিনিট মেশিন চালালে ১জন শ্রমিকের ১০দিনের ছুটি প্রাপ্য হয়। প্রযুক্তির এই চরম উন্নতির যুগে প্রতিটি কারখানায় ঘুরছে মেশিনের চাকা। শ্রমিকদের তো কম পরিশ্রমে বেশি টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছেটা কি? শ্রমিকরা ছুটি পায় না। ওভারটাইম করে পেট চালাতে হয়।

মানুষ ভুলে গেছে বিশ্রাম নিতে। পরিশ্রম থেকে মুক্তি নেওয়ার চিন্তাও এখন নিগৃহীত হয়। এরই নাম কি সভ্যতা? যে সভ্যতায় আনন্দের চেয়ে টাকার মূল্য বেশি, তা সভ্যতা তো? যে ধনীর কাছে প্রেমের চেয়ে টাকার মূল্য বেশি, সে ধনী তো?

যে সারাদিন টাকার জন্য পরিশ্রম করে সে ভিক্ষুক

যে সারাদিন তথ্যের জন্য পরিশ্রম করে সে প্রফেসর

যে জানে না কিছুই, কিন্তু বলে বেশি সে বোকা

যে জানে সবকিছু, কিন্তু বলে কম সে জ্ঞানী

যে যখন যেখানে তখন সেখানে, এখন এখানে- সে মুক্ত।

মুক্ত হওয়ার জন্য পরিশ্রম করার প্রয়োজন নেই। বরং প্রয়োজন আছে কিছু না করার। ধ্যান হলো কিছু না করা। কিছু একটা করার লক্ষ্য হওয়া উচিত কিছু না করা- বিশ্রাম। বিশ্রামের সময় যত বৃদ্ধি পায় জীবন তত সমৃদ্ধ হয়। পরিপূর্ণ বিশ্রাম (সমাধি) মানেই হলো মুক্ত হওয়া- দাসত্ব থেকে, কর্তৃত্ব থেকে, পারিশ্রমিক থেকে, হতাশা থেকে, কর্মবন্ধন থেকে এবং অবশ্যই অসততা থেকেও।

লেখক : সভাপতি, জীবনযোগ ফাউন্ডেশন/ফেইসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়