শিরোনাম
◈ খালেদা জিয়াকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে উৎকণ্ঠা—এভারকেয়ারে নজর সবার ◈ প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে বাড়তি খরচ কমাতে নতুন ছক চালু করল বাংলাদেশ ব্যাংক ◈ ১০ মাস পর প্রার্থী পরিবর্তন: খুলনা-১ এ জামায়াতের টিকিট পেলেন কৃষ্ণ নন্দী ◈ খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল এভারকেয়ারে ◈ উদ্যোক্তাদের আন্তর্জাতিক বাজারে যুক্ত করতে পে-প্যালের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে: গভর্নর ◈ 'স্বেচ্ছা নির্বাসনে' যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েছে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ ◈ স্কুলে ভর্তির নীতিমালা সংশোধন, বয়সসীমা শিথিল করল মাউশি, রেজিস্ট্রেশনের বয়সে কঠোর বোর্ড ◈ ভূমিকম্প থে‌কে রক্ষা পেতে জাপানের কাছ থেকে যা শিখতে পারে বাংলাদেশ ◈ খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে এভারকেয়ারে প্রধান উপদেষ্টা ◈ তালাক হলেও ফিরে আসার পথ—ইসলামী বিধান অনুযায়ী করণীয়

প্রকাশিত : ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০১:৫৭ রাত
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০১:৫৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব তিথি জন্মাষ্টমী

প্রকৌশলী প্রাঞ্জল আচার্য্য : “স্বয়ং ভগবান কৃষ্ণ, কৃষ্ণ সর্বাশ্রয়/ পরম ঈশ্বর কৃষ্ণ, সর্ব শাস্ত্রে কয়।” (চৈ. চ. আ.২/১০৬)

আজ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব তিথি জন্মাষ্টমী। যদিও ভগবান জন্ম রহিত। তিনি বিশেষ প্রয়োজনে আবির্ভূত হন। শ্রীমদ্ভাগবত এ বলা হয়েছে, ‘সকলের হৃদয়ে বিরাজমান ভগবান শ্রীবিষ্ণু পূর্ব দিকে উদিত পূর্ণ চন্দ্রের মতো গভীর অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতে সচ্চিদানন্দ স্বরূপিনী দেবকী মাতার হৃদয়ে আবির্ভূত হলেন।” ভগবানের আবির্ভাব বা তিরোভাব লোকচক্ষের প্রতীতি মাত্র। গীতায় ভগবান বলেছেন- “অবজানন্তি মাং মূঢ়া মানুষিং তনুমাশ্রিতম্।

পরম ভাবমজানন্তো মম ভূতমহেশ্বরম্।।”

অর্থাৎ আমি যখন মনুষ্যরূপে অবতীর্ণ হই তখন মূর্খেরা আমাকে অবজ্ঞা করে। তারা আমার পরম ভাব সম্বন্ধে অবগত নয় এবং তারা আমাকে সর্বভূতের মহেশ্বর বলে জানে না।” ব্রহ্ম সংহিতায় ব্রহ্মাজী ঘোষণা করেছেন-

ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দ বিগ্রহঃ।

অনাদিরাদির্গোবিন্দঃ সর্বকারণকারণম্।

অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণই পরমেশ্বর ভগবান স্বয়ং, অনাদিরাদি পুরুষ। অনন্ত কোটি বিশ্বব্রহ্মা-ের সৃষ্টি, পালন ও ধ্বংস যার ইচ্ছাতেই হয়। গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলেছেন-

”যদা যদা হি ধর্মস্য, গ্লানির্ভবতি ভারত

অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্।” (গীতা ৪/৭)

অর্থাৎ যখনই ধর্মের অধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যূত্থান হয় তখন আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতীর্ণ হই। তিনি হচ্ছেন স্বরাট। তাঁর ইচ্ছা ও প্রয়োজনে তিনি যে কোন জায়গায়, যে কোন অবস্থায়, যে কোন রূপে অবতরণ করতে পারেন কিন্তু সেই ঘটনা বিরল। কারণ তিনি ব্রহ্মার এক দিনে অর্থাৎ প্রতি ৮৬০ কোটি বছরে সপ্তম মনুর অষ্টবিংশতি চতুর্যুগে দ্বাপরের শেষে স্বরূপে আবির্ভূত হন। চৈতণ্যচরিতামৃতে ভগবানের অবতার সম্পর্কে বলা হয়েছে-

”সৃষ্টি হেতু যেই মূর্তি প্রপঞ্চে অবতরে

সেই ঈশ্বর মূর্তি ”অবতার” নাম ধরে।” (চৈ.চ মধ্য ২০/২৬৩)

কখনো কখনো তিনি তাঁর সন্তান অথবা ভৃত্য রূপে তাঁর প্রতিনিধিকে প্রেরণ করেন। অথবা কখনো তিনি ছদ্মবেশে অবতরণ করেন। বিষ্ণুপুরাণে বলা হয়েছে-

”কৃষ্ণাষ্টম্যাং ভবেদযত্র কলৈকা রোহিনী নৃপ

জয়ন্তী নামসা হেয় উপোষ্যা সাপ্রযত্মতঃ।”

উপাখ্যানে বর্ণিত আছে, বশিষ্ঠ মুনি মহারাজ দিলীপকে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব লীলার কথা বলেছিলেন। দ্বাপর যুগে কংসের অত্যাচারে উৎপীড়িত হয়ে দেবতাগণ মহাদেব শিব ও দেবী দুর্গার নিকট উপস্থিত হয়ে কংসের অত্যাচারের কথা জানালে তারা ব্রহ্মাজীকে এর প্রতিকার করার জন্য বললেন। কারণ একদা মহাদেব কংসের আরাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে বর দেন- ভাগিনার হাতেই কেবল কংসের মৃত্যু হবে। তাই ব্রহ্মাজী দেবতাগণকে নিয়ে ভগবান বিষ্ণুর শরণাপন্ন হয়ে প্রার্থনা করলেন- হে করুণা সিন্ধু আপনি অন্তর্যামী সবই জানেন। আপনি ইচ্ছা করা মাত্রই কংসকে বধ করতে পারেন। আপনি লীলাময়। অত্যাচারী কংসকে নিধন করার জন্য তার বোন দেবকী মাতার সন্তান রূপে আপনাকে লীলা করার জন্য আমাদের সকলের বিনীত প্রার্থনা। এতে ভগবান নারায়ণ সম্মতি দান করেন-‘তথাস্তু’।

তখন মহাদেব মহামায়া দুর্গা দেবীকে মর্ত্যলীলায় নারায়ণের সাথে অংশ গ্রহণ করার জন্য আহ্বান করেন। ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষের রোহিনী নক্ষত্রের অষ্টমী তিথির মধ্যরাতে প্রবল ঝড়বৃষ্টির সময় মথুরায় অত্যাচারী কংসের কারাগারে ভগবান নারায়ণ স্বয়ং শঙ্খ-চক্র- গদা-পদ্মধারীরূপে, সচ্চিদানন্দ স্বরুপিনী দেবকী মাতার হৃদয়ে আবির্ভূত হলেন। মাতাদেবকী ও বসুদেব দেখলেন স্বণোর্জ্জ্বল পীত বসন পরিহিত, গলে পদ্ম ফুলের মালা, বক্ষে শ্রীবৎস চিহ্ন ও কৌস্তবমণি শোভিত, মাথায় বৈদুর্যমণি খচিত মুকুট, গাত্রবর্ণ উজ্জ্বল শ্যাম ও নানা রত্ন - মণি খচিত দিব্য অলংকারাদি দ্বারা অঙ্গ বিভুষিত। ঐ শিশুর অসাধারণ রূপ দশর্ন করে বসুদেব ও দেবকী বিস্ময়ে অভিভূত হলেন এবং প্রার্থণা করলেন “হে প্রভু আমরা তোমাকে পুত্র রূপে পেতে চেয়ে ছিলাম, আমাদের মনোভিলাষ পূর্ণ কর।” তৎক্ষণাৎ তিনি সদ্যজাত শিশুর রূপধারণ করলেন। অপরদিকে গোকুলে দুর্গাদেবী যশোদার গৃহে আবির্ভূত হলেন। মহামায়ার মায়ায় কংসের কারাগারের কারারক্ষীগণ নিদ্রাচ্ছন্ন হলেন।

আর বসুদেবের প্রতি দৈববাণী হল যে, তিনি যেন তাঁর নবজাত পুত্রকে গোকুলে যশোদার কোলে দিয়ে আসেন এবং যশোদার নবজাত কন্যাকে দেবকীর কাছে নিয়ে আসেন। তাই বসুদেব গোকুলে মহামায়ার আবেশে নিদ্রাভিভূত রাজঅন্তঃপুরে শ্রীকৃষ্ণকে রেখে আসেন আর সদ্যোজাত যশোদার কন্যাকে নিয়ে এসে মথুরায় কংসের কারাগারে দেবকীর কোলে দিয়ে দেন। কারারক্ষ সদ্যজাত শিশু কন্যার কথা কংসকে জানালে তিনি শিশুকন্যাকে পাথরে আছড়ে মারার নির্দেশ দেন। যখন নবজাত কন্যাকে পাথরে আছড়ে মারতে উদ্যত হল, তখন শিশুকন্যা আকাশে দূর্গামূর্তি ধারণ করে কংসকে বললেন- ‘তোমাকে বধ করবে যে, গোকুলে বাড়ছে সে।’ এই কথা বলেই দূর্গা দেবী তাঁর মর্তলীলা শেষ করে মহাদেবের কাছে ফিরে যান। পরে শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে বিভিন্ন লীলা বিলাস করে যথাসময়ে মথুরায় কংসকে বধ করেন এবং ধরিত্রী মাকে শান্তি প্রদান করেন।

শ্রীমদ্ভাগবত এ আছে- ‘এতে চাংশকলাঃ পুংসঃ/ কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ম্’। দেখা যাচ্ছে সমস্ত বৈদিকশাস্ত্র, বেদ, উপনিষদ, পুরান ও মহাভারতে হাজার বছর আগেই শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান বলে স্বীকার করা হয়েছে। যে নর নারী এই শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ব্রত করেন, তারা অতুল ঐশ্বর্য লাভ করে অন্তে বৈকুণ্ঠে গমন করেন। হরেকৃষ্ণ।

লেখক: ভক্তিশাস্ত্রী, মায়াপুর ইনস্টিটিউট অব হায়ার এডুকেশন, ইসকন ঢাকা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়