ইমরান হোসাইন, (পাথরঘাটা) বরগুনা: ইলিশ শূন্যতায় হাহাকার চলছে বরগুনার পাথরঘাটার জেলে পল্লি গুলোতে। বঙ্গোপসাগর ও বিষখালী নদীর ইলিশকে ঘিরেই এখানকার জেলেদের জীবন ও জীবিকার চাকা ঘুরছে। আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবনের দ্বিতীয় সপ্তাহ নদীতে বেড়েছে পানি, থেমে থেমে হচ্ছে বৃষ্টি তবুও দেখা নেই রুপালি ইলিশের।
সাগর ও নদীতে মাছ না পাওয়ায় উপজেলার প্রায় ২২ হাজার জেলে পরিবার অভাব অনটন আর চরম হতাশার মধ্যে দিন পার করছে। সাগর কিংবা নদীতে জাল ফেলে দু-একটা ইলিশের দেখা মিললেও তা হয়তো পরিবারের আহারেই চলে যায়। তবে আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পড়ায় অভাব-অনটনে ঋণ করে চলছে জেলেদের সংসার। এনজিওর লোন আর মহাজনের দাদনের ভাবনাই যেন জেলেদের পরিবারে নেমে এসেছে চরম হতাশা। প্রতি বছর বৈশাখ মাসে কিছুটা কম থাকলেও জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরু থেকেই জেলেদের জালে ধরা পরে রুপালি ইলিশ।
সেখানে আষাঢ়, শ্রাবন পেরিয়ে গেলেও ইলিশের দেখা পাচ্ছেন না জেলেরা। অন্যদিকে জেলেদের সুদ ও দাদন দিয়ে এখন বেকায়দায় পড়েছেন এনজিও এবং ব্যবসায়ীরা। মাছ ধরা না পড়ায় জেলেরা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না। জেলেরা বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ট্রলার, নৌকা ও জাল কিনে নদীতে নেমেছেন। কিন্তু সারাদিন জাল ফেলেও মাছ না পাওয়ায় তারা হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। হতাশায় এখন অনেক জেলেই নদীতে যাচ্ছেন না। নদীর তীরেও অনেকে নৌকায় বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। অন্য কোনো আয়ের উৎস না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন জেলেরা। বর্তমানে জেলেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
দেশের দ্বিতীয় মৎস অবতরনকেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটায় দেখা যায়, ঘাটে নোঙর করে আছে জেলেদের শতাধিক ট্রলার। আড়তে অলস সময় পার করছেন আড়ৎদাররা। দুই-এক ঝুড়ি মাছ ঘাটে আনা হলেও নেই হাঁকডাক। কারণ, এ সময়ে যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার কথা তার তিন ভাগের এক ভাগও ইলিশ কেনা-বেচা নেই।
পাথরঘাটার মৎস অবতরন কেন্দ্র ঘুরে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদীতে ইলিশ মাছ ধরা না পড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। দিনরাত নদীতে জাল ফেলে যে কয়টি মাছ পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে ট্রলারের তেল খরচও উঠছে না।
জেলেরা আরও জানান, অনেকেই এনজিও ও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ইলিশ বিক্রির টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করবেন ভাবছিলেন, কিন্তু ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না, আবার দেনাও শোধ করতে পারছেন না। নদীতে জাল ফেলে ফিরছে খালি হাতে। চড়া সুদে আনা ঋণের টাকা শোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ পেশা বদলানোর চিন্তা-ভাবনা করছেন।
উপজেলার পদ্মা গ্রামের জেলে আল-আমিন জানান, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম হলেও ইলিশ পাচ্ছিনা। দু একটা পাওয়া গেলেও তাও ছোট আকারের। জেলে মামুন জানান, নদীতে ইলিশ নেই। তাই এখন আর জাল নিয়ে নদীতে ইলিশ ধরতে যাইনা। বর্তমানে বড়শি দিয়ে দেশি বিভিন্ন জাতের মাছ ধরি। তাই দিয়ে সংসার চালাতে হয়। ট্রলার মাঝিদের সাথে কথা বললে তারা জানান, প্রতি বছর বৈশাখ থেকে মাছ ধরা শুরু হলেও এ বছর শ্রাবন মাস শেষ হতে চললেও ইলিশের দেখা মিলছে না। যা পাওয়া যায় তাতে খরচ ওঠে না। প্রতিদিন নদীতে গেলে খরচ হয় প্রায় পাঁচ-সাত হাজার টাকা। ইলিশের আড়ৎদার খান হাবিব জানান, জুলাই মাসে বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়বে, সেই আশায় ছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাঙ্খিত ইলিশের দেখা মিলছে না। বাকী সময়ে ইলিশ পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। প্রতি বছর এই সময় কয়েক টন দেশি ইলিশ বিক্রি হতো এবার হয়