শিরোনাম
◈ পিআর পদ্ধতি কী, কেন প্রয়োজন ও কোন দেশে এই পদ্ধতি চালু আছে?" ◈ ইসরায়েলি হামলায় ৪৩৭ ফুটবলারসহ ৭৮৫ ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদের মৃত্যু ◈ পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলিদের সাথে তাদেরই সেনা জড়ালো সংঘর্ষে! (ভিডিও) ◈ আমদানি-রপ্তানিতে এনবিআরের নতুন নিয়ম: বাধ্যতামূলক অনলাইন সিএলপি দাখিল ◈ জুলাই স্মরণে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন (ভিডিও) ◈ জুলাই বিদ্রোহ: কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান ◈ ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা বললেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ◈ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেলেন ১৬৯০ জন ◈ ১৮ জুলাই নতুন দিবস ঘোষণা ◈ ডিসি-এসপি কমিটি ও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা জারি করলো ইসি

প্রকাশিত : ২৬ জুলাই, ২০১৮, ০৯:২৬ সকাল
আপডেট : ২৬ জুলাই, ২০১৮, ০৯:২৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দশ ঠিকাদারের নিয়ন্ত্রণে কয়লা বাণিজ্য

এক যুগ আগে স্টেশনারি পণ্য ফেরি করে বিক্রি করতেন রুহুল আমিন। দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি চালুর পর পাল্টে যায় তার ভাগ্য। বড়পুকুরিয়ার কয়লায় ভর করে ছোট দোকানি থেকে রুহুল আমিন এখন শিল্পপতি। মেসার্স আমিন ট্রেডার্সের এ স্বত্বাধিকারী ফুলবাড়ী ও রংপুর এলাকার প্রথম সারির শিল্পপতিদেরও একজন। ইটভাটা, অটো রাইস মিল, আবাসন, ঠিকাদারিসহ নানা খাতে ব্যবসা রয়েছে তার।

বড়পুকুরিয়া খনির বিপুল পরিমাণ কয়লার গ্রাহকও এই আমিন ট্রেডার্স। প্রতি বছর ২০-২৫ হাজার টন কয়লা নানাভাবে বরাদ্দ নেয় তারা। কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার বিনিময়ে বিপুল পরিমাণ কয়লা বাইরে নিয়ে যায় আমিন ট্রেডার্স। কয়লা সংকটে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র যখন বন্ধ, তখনো ফুলবাড়ীর রংপুর রোডে বিপুল পরিমাণ কয়লার মজুদ দেখা যায় রুহুল আমিনের চালকলের সামনের ইয়ার্ডে।

আমিন ট্রেডার্সের মতো এতটা বিস্তৃত পরিসরে না হলেও বড়পুকুরিয়ার কয়লা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে আরো নয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে অন্যতম শ্রাবণী সেলস এন্টারপ্রাইজ, রাজু-গুপ্ত ব্রিকস, লুত্ফর বানিয়া, রিফাত ট্রেডার্স, আলিফ ব্রাদার্স, মামুন ট্রেডার্স, এমজেড এন্টারপ্রাইজ ও সুমাইয়া ট্রেডার্স। এসব প্রতিষ্ঠানকে কয়লা পাইয়ে দিতে সরবরাহ আদেশ (ডিও) বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে।

নামে-বেনামে ডিও তৈরি করেও বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) অসাধু কর্মকর্তাদের সুবিধা দিয়ে বরাদ্দের কয়েক গুণ কয়লা নিয়ে যান প্রভাবশালী ঠিকাদাররা। তাদের অধিকাংশই কয়লা ধরে রেখে চা বাগান, টাইলস ও সিরামিক ফ্যাক্টরির কাছে উচ্চদরে বিক্রি করেন।

বড়পুকুরিয়ার এ কয়লা বাণিজ্য বহুদিন ধরে দেখে আসছেন ফুলবাড়ীর মধ্য দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, এখানকার অনেকে অটো রাইস মিলের নামে কয়লা নিলেও এরা ধান-চালের ব্যবসাই বোঝে না। এসব কয়লা ধরে রেখে পরে উচ্চদরে বিক্রি করে। বিভিন্ন ট্রেডার্সের গুদামে এখনো যে পরিমাণ কয়লা আছে, তা দিয়ে আগামী এক মাস বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো সম্ভব।

কয়লায় চেপে হোমিও দোকানি থেকে কোটিপতি ব্যবসায়ী: কয়লা নিয়ন্ত্রণকারী আরেকটি ট্রেডিং কোম্পানি শ্রাবণী সেলস এন্টারপ্রাইজ। এর মালিক ডা. মো. শফিউর রহমান। খনির বিপরীতে উত্তর দিকে চৌহাটি গ্রামেই তার বাড়ি। একসময় হোমিও ডিসপেনসারির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কয়লার ব্যবসা শুরুর পর তার অবস্থাও ফুলে-ফেপে উঠেছে। বর্তমানে কয়লা, ব্রিকফিল্ড ও মাছের হ্যাচারির ব্যবসা পেতেছেন। হয়েছেন ফুলবাড়ীর অন্যতম ব্যবসায়ী।

এছাড়া কয়লার ব্যবসা করে কোটিপতি হয়েছেন রাজু-গুপ্ত ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী রাজু কুমার গুপ্ত। একসময় ইটভাটায় লাকড়ি সরবরাহ করতেন তিনি। ওজন ছাড়া খনি থেকে কয়লা নিয়ে আসার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত কয়েক বছর কয়লার ব্যবসা করে ফুলবাড়ীতে প্লাইউড ফ্যাক্টরির ব্যবসা দিয়েছেন রাজু কুমার গুপ্ত।

প্রভাবশালীদের সুপারিশ ছাড়া কয়লা মেলে না: কয়লা বিক্রির জন্য ডিমান্ড অর্ডার (ডিও) পেপার্স নামে একটি শর্ত দিয়ে রেখেছে কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ। এ পেপারের মাধ্যমে আগ্রহী ঠিকাদার যদি ইটভাটার জন্য কয়লা কিনতে চান, তবে তাকে ভোটার আইডি, ইটভাটার ট্রেডিং লাইসেন্স, ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট ও পরিবেশ ছাড়পত্রের ফটোকপি দেখাতে হয়। এছাড়া অন্য ব্যবসায়ীদের শুধু ভোটার আইডি, ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট ও ট্রেড লাইসেন্স দেখালেই চলে।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে এবং স্থানীয় জনগণ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশেষ কয়েকজন ব্যবসায়ী প্রতি বছরই এ কয়লা বাণিজ্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখেন। এদের মধ্যে কয়েকজন ব্যবসায়ী আবার বিশেষ একটি মহলের ব্যবসায়িক অংশীদারও।

তাদের সুপারিশ অনুযায়ী পছন্দের ব্যবসায়ীদের বরাদ্দ দেয়ার পর লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে সামান্য পরিমাণ কয়লা আশপাশের গ্রাহকদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। এক্ষেত্রেও প্রভাবশালী মহলটির সুপারিশের প্রয়োজন হয়। সুপারিশ না থাকলেও বৈধ কাগজ থাকার পরও বঞ্চিত হতে হয়।

এসব ঠিকাদারকে কয়লা পাইয়ে দিতে যাদের বিরুদ্ধে ডিও বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে তাদের একজন ফুলবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান বাবুল। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। জানতে চাইলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আমি এ বছর মাত্র ২০০ টন কয়লা পেয়েছি। এর বেশি কয়লা পাইনি। অন্য কাউকে কয়লা পাইয়ে দেয়ার সুপারিশও করিনি।

২০০৮ সাল থেকে খনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কয়লা কিনে আসছিলেন ফুলবাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী শাহাদাৎ হোসেন। কয়েক বছর ধরে তিনি আর কয়লা পাচ্ছেন না। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে নিজের ট্রেড লাইসেন্সসহ সব ধরনের কাগজের বিপরীতে কয়লার জন্য আবেদন করেও খনি কর্তৃপক্ষ কয়লা দেয়নি। তবে তার সহকারী তাহাদুর রহমান ওই কাগজ নিয়ে প্রভাবশালীদের সুপারিশে ১০০ টন কয়লা বরাদ্দ পেয়েছেন।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা উত্তোলন হলেও গত কয়েক বছরে খনির আশপাশের একটি মহল গড়ে তুলেছে কয়লা ব্যবসায়ী সমিতি। এর সভাপতি মুজিবুর রহমান। কয়লা বরাদ্দ পেতে আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একই অভিযোগ হাফিজুর রহমান নামে স্থানীয় এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধেও।

এ বিষয়ে হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা এ বছর ৫০০ টন কয়লা পেয়েছি, যেখানে আমার একটি ইটভাটার জন্য দরকার ছিল ৭০০-৮০০ টন। পরে বাইরে থেকে কয়লা কিনে ভাটা চালিয়েছি। উল্টো খনি কর্তৃপক্ষ অন্য জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে কয়লা বিক্রি করেছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়