এ কে এইচ এম নকীবুল হক: মানুষ সামজিক জীব হিসাবে সে কখনো একা বাস করতে পারে না। জীবন তরীর বিভিন্ন পর্বে অনেক মানুষের সাথেই গড়ে ওঠে সখ্য। হয়ে যায় বন্ধুত্ব। আবার জীবন চলার পথে সেই বন্ধুর প্রভাবও বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। ভালো বন্ধুর প্রভাবে একজন খারাপ মানুষ ভালো মানুষে পরিণত হয়। আবার একজন খারাপ বন্ধুর প্রভাবে একজন ভালো মানুষও খারাপ হয়ে যায়। সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে একজন স্যার আমাদের উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, ‘তুমি যার সাথে বন্ধুত্ব কর তাকে তোমার মত বানিয়ে নাও। অথবা তুমি তার মতো হয়ে যাও।’
এ সম্পর্কে আল্লামা রুমী রহ. বলেন, সোহবতে সালেহ তোরা সালেহ কুনাদ সোহবতে তালেহ তোরা তালেহ কুনাদ।’ অর্থাৎ, সৎ মানুষের সঙ্গ আপনাকে সৎ বানাবে এবং অসৎ মানুষের সঙ্গ আপনাকে অসৎ বানাবে। (সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ) আবার আবু হুরাইরা রা. এর সূত্রে এক হাদিসে এসেছে, রাসুল সা. বলেছেন, মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে ওঠে। সুতরাং বন্ধু নির্বাচনের সময় তোমাদের প্রত্যেকের এ বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত যে, সে কাকে বন্ধু হিসাবে নির্বাচন করছে। (তিরমিযী) উপরের কথাগুলোর আলোকে প্রতীয়মান হয় যে, মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে ওঠে, বন্ধুর প্রভাবে প্রভাবিত হয় এবং ভালো বন্ধু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
একজন ভালো বন্ধুর কি কি গুণ থাকা দরকার এ সম্পর্কে ইমাম গাজ্জালি রহ. বলেন, যার মধ্যে তিনটি গুণ আছে তাকে বন্ধু বানাতে হবে। গুণগুলো হলো- ১. বন্ধুকে হতে হবে জ্ঞানী ও বিচক্ষণ; ২. বন্ধুর চরিত্র হতে হবে সুন্দর ও মাধুর্যময়; ৩. বন্ধুকে হতে হবে নেককার ও পূন্যবান। এই তিনটি গুণ যার মধ্যে আছে তাকেই বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা যাবে। এ সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, একবার রাসূল সা. কে জিজ্ঞাসা করা হলো, আমাদের মজলিসী বন্ধুদের মাঝে কে উত্তম? জবাবে তিনি বলেন, যাকে দেখলে আল্লাহর কথা স্বরণ হয়, যার কথাবার্তায় তোমাদের জ্ঞান বাড়ে এবং যার কাজ দেখে পরকালের স্মৃতি তাজা হয় সেই হলো তোমাদের উত্তম বন্ধু।’ আবার কাদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না এ সম্পর্কে ইমাম জাফর সাদিক রা. বলেন, পাঁচ ব্যক্তিকে বন্ধু বানানো যাবে না। তারা হলো- ১. মিথ্যাবাদী; ২. নির্বোধ; ৩. কৃপণ; ৪. কাপুরুষ; ৫. ফাসেক। সুতরাং আমাদের বন্ধুত্ব করতে হবে এমন লোকদের সাথে যাদেরকে দেখলে আল্লাহর কথা স্বরণ হয়, পরকালের কথা স্বরণ হয় এবং জান্নাতের পথ সুগম হয়।